ঈশ্বরদীতে ঘুষের টাকা না দেওয়ায় উচ্ছেদের নামে ভাংচুর

শেয়ার করুন

ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি : পাবনার ঈশ্বরদীতে চাহিদাকৃত ঘুষ না দেওয়ায় উচ্ছেদের নামে অবৈধভাবে বাড়ি ভাংচুর করার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় দোষী ব্যক্তির শাস্তির দাবী করে এবং ক্ষতিপূরণ চেয়ে সড়ক ও জনপথ পাবনার সার্ভেয়ার আকরাম হোসেনের বিরুদ্ধে উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (সওজ) সড়ক উপ-বিভাগ-২ এর বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়।

একই সঙ্গে সদয় অবগতি ও পদক্ষেপ গ্রহনের জন্য পাবনা জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সড়ক ভবনের প্রধান প্রকৌশলী, সড়ক ও জনপথ বিভাগ সচিব, পাবনা-৪ (ঈশ্বরদী-আটঘড়িয়া) আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য ও সাঁড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বরাবর অনুলিপি প্রদান করা হয়।
রোববার (৩ জুলাই) সকালে ঈশ্বরদীর সাঁড়া ইউনিয়নের আড়ামবাড়িয়া বাজার সংলগ্ন গোপালপুর গ্রামের মৃত আফিল সরদারের ছেলে আজিম সরদার এই অভিযোগ করেন।
লিখিত অভিযোগে আজিম সরদার জানান, ঈশ্বরদী থেকে লালপুর হয়ে রাজশাহী বানেশ্বর পর্যন্ত রাস্তা প্রশস্তকরণের কাজ চলছে। এই রাস্তা সংলগ্ন ঈশ্বরদীর সাঁড়া ইউনিয়নের গোপালপুরে আমার বাড়ি। চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারি এই রাস্তার সীমানা পরিমাপের সময় আমাকে সড়ক ও জনপথ (সওজ) পাবনার সার্ভেয়ার আকরাম হোসেন বলেন, আপনার বাড়ির পশ্চিম ও দক্ষিণ কোনায় প্রায় দুই ফুট ভাঙ্গতে হবে। এর কয়েকদিন পর সার্ভেয়ার আকরাম হোসেন মোবাইল ফোনে আমাকে পাবনায় তার অফিসে দেখা করতে বলেন। আমার মেয়ে জামাই কে সঙ্গে নিয়ে আমি তার সঙ্গে দেখা করলে তিনি ৫ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। এই টাকা দিলে আমার বাড়ি ভাঙা লাগবে না বলে জানায়। এতো টাকা দেওয়া সম্ভব নয় জানালে সার্ভেয়ার ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন টাকা দিবেন না পরে ‘ঠ্যালা’ বুঝবেন। এরপর আমি ঢাকায় চলে গেলে গত ৩ ফেব্রুয়ারি আমার নামে নোটিশ দেওয়া হয়। সে সময় আমি ঢাকায় থাকায় তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। এরপর গত ২২ জুন উচ্ছেদের নামে আমার বাড়ির সামনের অংশ ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়া হয়।
আজিম সরদার আরো জানান, ঘুষের টাকা না পেয়ে সার্ভেয়ার আকরাম হোসেন ক্ষিপ্ত হয়ে রাস্তার দুই ফুট জায়গার চেয়ে কয়েকগুন বেশি জায়গা নিয়ে বাড়িটি ভেঙ্গে ফেলেছেন। এতে তিনি বহু ক্ষয় ক্ষতির শিকার হয়েছেন। একই সঙ্গে আর্থিক, সামাজিকভাবে সম্মানহানির শিকার হয়েছেন। এই জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট ক্ষতি পূরণসহ সার্ভেয়ার আকরাম হোসেনের শাস্তি দাবী করেছেন।

আজিম সরদার আরো জানান, রাস্তার জমি পরিমাপের সময় সার্ভেয়ার আকরাম হোসেন এলাকার অনেক মানুষের নিকট থেকে ঘুষ গ্রহন করেছেন। এই কারণে অনেকের বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রাস্তার জমির মধ্যে রয়েছে। সেগুলোকে উচ্ছেদ না করে লোক দেখানোভাবে সামান্য কিছু ভাংচুর করেছেন।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) পাবনার সার্ভেয়ার আকরাম হোসেন মুঠোফোনে জানান, আজিম সরদারের অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। তার নিকট থেকে কোনরূপ ঘুষ চাওয়া হয়নি। অন্যদের নিকট থেকেও ঘুষ নেওয়া হয়নি। রাস্তার জায়গায় থাকা তার বাড়ি উচ্ছেদ করতে ভাংচুর করায় তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে এই অভিযোগ দায়ের করেছেন।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ পাবনার নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল মনুসর আহমেদ মুঠোফোনে জানান, ঈশ্বরদী থেকে বানেশ্বর পর্যন্ত রাস্তা প্রশস্তকরণ করা হচ্ছে। এই কারণে রাস্তার জমি থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে। অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করতে গিয়ে কিছু জায়গায় মামলা জনিত কারণে ভাঙ্গা সম্ভব হয়নি। কিন্তু যাদের উচ্ছেদ করা হয়েছে তারা এখন ঘুষ দাবীর অভিযোগ করছেন। তবে ঘুষের টাকা না পেয়ে বাড়ি ভাংচুর অভিযোগটি সঠিক নয়। এদিকে ঈশ্বরদী থেকে লালপুর হয়ে রাজশাহীর বানেশ্বর পর্যন্ত সড়ক প্রসস্ত করণ কাজের অংশ হিসেবে গত ২২ জুন থেকে শহরে আলহাজ্ব মোড় থেকে রাস্তার দুই পাশে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ শুরু করে পাবনা সড়ক ও জনপথ বিভাগ।

সরেজমিন দেখা যায়, উল্লেখিত বিভিন্ন স্থানে সড়কের সীমানায় অসংখ্য অবৈধ স্থাপনা থাকলেও অজ্ঞাত কারণে সেগুলো না ভেঙ্গে শুধুমাত্র অসহায় ব্যক্তিদের শত স্থাপনা ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। রক্ষা করা হয় যাদের থেকে অবৈধ সুবিধা নেওয়া হয়েছে শুধুমাত্র তাদের স্থাপনা। যা সরেজমিন তদন্ত করলেই বেড়িয়ে আসবে।


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *