স্টাফ রিপোর্টার : স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করে প্রথম স্ত্রীকে খোরপোশ না দেওয়ার অপরাধে বিচারের দাবিতে সংবাদ সংম্মেলন করেছেন চাটমোহর উপজেলার নতুন বাজারের সারোরা গ্রামের মৃত আবুল কাশেম’র ছোট মেয়ে ওম্মে কুলসুম মুক্তা (২৩)।
শনিবার (৪ মার্চ-২০২৩ খ্রি.) বেলা ১২ টায় দৈনিক সিনসা সভাকক্ষে সাংবাদিকদের কাছে সাড়ে ১৭ মাসের কন্যা শিশু নিয়ে স্বামী কর্তৃক খোরপোশ না দেওয়ার অভিযোগ করে মুক্তা বলেন, তার বাবা আবুল কাশেম ২০১২ খ্রি. ২৪ ফেব্রুয়ারি এবং মা আনোয়ারা বেগম ২০১৩ খ্রি. ৩ জুলাই ইন্তেকাল করেছেন। তারা দুই বোন এবং এক ভাই। ২০০৮ খ্রি. বড় বোন কানিজ ফাতেমার বিয়ে হয়েছে ঈশ^রদীর মধ্য অরণকোলার আবু বক্কর সিদ্দিকের ছেলে সাহেব আলী নামের এক ব্যবসায়ীর সাথে। বাবা ও মা এর মৃত্যুর পর ৮ম শ্রেণিতে পড়াশোনা সময়ে পারিবারিক ভাবে বিবাহ হয় সাঁথিয়া উপজেলার ধুলাউড়ীর বিলচাপরীর ফজলুল হকের ছেলে আরিফুল ইসলামের সাথে। স্কয়ারে চাকরীরত আরিফুল ইসলাম মুক্তার সাথে বিয়ের পর তার কর্মস্থল এলাকায় ভৈরবে বাসা ভারা করে সুখেই বসবাস শুরু করেছিলেন। ২০১৬ খ্রি. ২ মার্চ তাদের সংসারে জন্ম নেয় এক ছেলে সন্তান। সন্তান হওয়ার কয়েক মাস আগে মুক্তাকে বড় বোনের কাছে পাঠিয়ে দেয় আরিফুল। তারপর থেকে কোন প্রকার খরচ বহন করেননি তিনি। সে সময়ে একটি মেয়ের সাথে আরিফুলের গভীর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। মুক্তার পরিবারে বিষয়টি জানাজানি হলে পারিবারিক ভাবে মিমাংসা করা হয়। আরিফুল ইসলাম ভবিষৎ পুনরায় এ ধরনের কোন কাজ করবে না বলে প্রতিজ্ঞা করেন। পরবতীতে আরিফুল ইসলাম সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ জেলার নবিগঞ্জ থানায় স্কয়ার ট্রয়লেট্রিজ লি’ এর সিনিয়র সেলস অফিসার পদে পদোন্নতি পান। তখন মুক্তাকে সেখানে নিয়ে যান। ২০২১ খ্রি. এপ্রিলে আরিফুল সাঁথিয়ায় তার বাবা মায়ের বাড়ীতে মুক্তাকে রেখে যান। ২০২১ খ্রি. ৪ সেপ্টেম্বর ডাক্তার দেখানোর কথা বলায় মুক্তার উপর নির্যাতন চালায় শ^াশুড়ি ও দেবর টুটুল। খবর পেয়ে পরের দিন মুক্তার বড় বোন কানিজ ফাতেমা মুক্তাকে নিয়ে বাবার এলাকা চাটমোহরে চিকিৎসা করান এবং নিজ বাসায় নিয়ে আসেন। ২০ সেপ্টেম্বর তাদের দ্বিতীয় কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। কন্যা সন্তান জন্মের ১৫ দিন আগে পূর্বের ন্যায় মুক্তাকে তার বোনের বাসায় চাটমোহর পাঠিয়ে দেয়। মেয়ে জন্ম হওয়ার ৩ দিন পর মেয়েকে দেখতে বাবা ও মা সহ আসেন আরিফুল ইসলাম। তিনি জানান, মুক্তাকে নিয়ে যাবেন তবে ২ লক্ষ টাকা প্রয়োজন। মুক্তার বড় বোন বলেন হঠাৎ এত টাকা কোথায় পাবো। টাকা দেওয়া কোন ভাবেই সম্ভব নয়। মুক্তার বড় বোন আরও জানান, এর আগে আরিফুল কে দেড় লক্ষ টাকা ধার দেওয়া হয়েছিল। সে টাকার কিস্তি এখন পর্যন্ত শোধ হয়নি। এ কথায় আরিফুল তার ছেলেকে নিয়ে দাদীর কাছে রেখে কর্মস্থলে চলে যায়। তারপর থেকে স্ত্রী মুক্তা ও তার কন্যার খোরপোশ দেয় না আরিফুল। দীর্ঘদিন মানবেতর জীবন যাপন করে বাধ্য হয়ে খোরপোশের দাবীতে পাবনা আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন মুক্তা।
মুক্তার সংবাদ সম্মেলনে তার ১৭ মাসের শিশুকন্যা, বড় বোন এবং দুলাভাই উপস্থিত ছিলেন। এ ব্যাপারে মুক্তার স্বামী আরিফুলের সাথে মোবাইলে কথা হলে তিনি জানান, তিন বছর আগে তাদের মধ্যে পারিবারিক ঝামেলা হয়। এর পর থেকে তিনি একাই কর্মস্থলে থাকেন। পরবর্তীতে তিনি ২০২২ খ্রি. ডিসেম্বর দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন। তিনি এখনো প্রথম স্ত্রীকে ছেড়ে দেননি বা তার কোন অনুমতি নেননি বলে জানান আরিফুল। এতিম অসহায় মুক্তা তার ছেলে মেয়ে সহ খোরপোশের দাবীতে আদালতের দারে দারে ঘুরছেন।