গরিবের দুবাই ভোলায় মেঘনা পাড়ের বালুর মরুভূমি

শেয়ার করুন

শরীফ হোসাইন (ভোলা) : ভোলা সদর উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের শান্তিরহাট এলাকায় গিয়ে বেড়িবাঁধের উপর দাঁড়ালেই চোখে পড়বে মেঘনা নদী। তীরে এসে আছড়ে পড়ছে নদীর বড় বড় ঢেউ। এর পাড় ঘেঁষেই দেখা মিলবে বিশাল এলাকাজুড়ে বালুর সমারোহ। মাঝখানে প্রকৃতিক সৌদর্য হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সারি সারি বেশ কয়েকটি খেজুর গাছ।

একদিকে মেঘনা নদীর বড় ঢেউ, অপরদিকে মরুভূমির মতো বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে বালুর সমারোহ। দখিনা বাতাস বইছে নিজের নিয়মে, মনোমুগ্ধকর সারি সারি খেজুর গাছ। এই অপরুপ সৌন্দর্যে হৃদয়মনকে উতালা করে তোলে অজানা ভাবাবেগে। দেখতে অবিকল আরব্য মরুভূমি। এ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিন দূর-দুরান্ত থেকে ঘুরতে আসেন বিভিন্ন বয়সী এবং বিভিন্ন শ্রেণিপেশার হাজার হাজার মানুষ। কেউ শিক্ষার্থী, কেউবা বন্ধু-বান্ধব নিয়ে আসছেন। কেউ আবার পরিবার-পরিজন নিয়ে আসছেন। তারা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘোরাঘুরি করেন। কেউ ছবি তুলছেন নানা ঢংয়ে, আবার কেউবা খেলাধুলা মেতে রয়েছে। মেঘনা নদীর পাড়ের এই জায়গাটি এখন দর্শনীয় স্থানে রুপ নিয়েছে। অনেকের কাছে পরিচিতি পেয়েছে গরিবের দুবাই নামে। কেউ বলছেন ভোলার মরুভূমি। তাইতো যারা এখানে ঘুরতে আসেন তারা সবাই ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করে লিখছেন আমরা এখন ভোলার মরুভূমিতে। একই জায়গায় ছবি তুলে নিজের ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করে অনেকে লিখছেন আমরা এখন আরবের মরুভূমিতে। সদরের বাইরে থেকে বালুর মাঠে এসে সেখান থেকে ফিরে কেউ কেউ আবার লিখছেন ঘূরে এলাম দুবাই থেকে।

দৌলতখান থানার ওসি মো. জাকির হোসাইন শিবপুরের শান্তিনগর এলাকায় এসে স্বপরিবারে ঘুরে তিনিও ছবি তুলে তার আইডিতে লিখেছেন ’ঘূরে এলাম দুবাই থেকে’। সৌদর্যমন্ডিত এই স্থানটিকে ঘিরে গরিবের দুবাই নামে পরিচিত সেই বালুর মাঠে ছোট ছোট বিভিন্ন দোকান গড়ে উঠেছে। এসব দোকানে চা, পান, সিগারেট, চিপস ও ফুসকা বিক্রি হচ্ছে।
মেঘনা নদীর বালুর মাঠে ভ্রমণ পিপাসুরা ঘুরতে এসে নদীর পাড়ের ইলিশ মাছ ভাজী করে খেয়ে আনন্দে উল্লসিত।
ছুটির দিনগুলোতে বিকেলে ঐ স্থানটিতে গিয়ে দেখা যায়, ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা দৌড়াদৌড়ি করছে। কয়েকজন তরুণ বালুর মাঠে ফুটবল খেলছে। বিভিন্ন বয়সী শিশু, নারী ও পুরুষরা ভিড় জমিয়েছেন। এদের মধ্যে কেউ ছবি তুলছেন। কেউবা লাইভ করছেন। খোলা মাঠে অবিরত বইছে দখিনা বাতাস। তীরে এসে আছড়ে পড়ছে নদীর ঢেউ। এমন অপরূপ দৃশ্য আর মনোরম পরিবেশ টেনে নিয়ে আসছে দর্শনার্থীদের।

স্থানীয়রা জানান, চায়নারা সদর উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের শান্তিরহাটে মেঘনা নদীর তীরে একটি প্রকল্প গ্রহন করেন। যেখানে ইপিজেডসহ বিভিন্ন শিল্প কারখানা গড়ে তোলা হবে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত প্রায় চার বছর আগে এই এলাকায় প্রায় দেড় শতাধিক একর জমি ক্রয় করে। গত প্রায় ৬ মাস আগে ঐ এলাকাটিকে মেঘনা থেকে বালু উত্তোলনের মাধ্যমে সেই বালু দিয়ে ভরাট করে। ফলে এলাকাটি বর্তমানে বালুর মাঠে পরিনত হয়েছে। এরপর থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ এখানে ঘুরতে আসেন। তারা বালুর মাঠে সারি সারি খেজুর গাছ আর মেঘনা নদীর ঢেউসহ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করছেন। ছবি তুলে নিজেদের ফেসবুকে পোস্ট দিচ্ছেন। এই এলাকাটি দর্শনার্থীদের কাছে এখন আকর্ষনীয় স্থানে পরিনত হয়েছে। তারা আকর্ষনীয় ও দর্শনীয় এই জায়গাটির নাম দিয়েছেন ’গরিবের দুবাই’।
বালুর মাঠে গড়ে তোলা ফুসকা দোকানদার সাগর বলেন, আমার বাড়ি শিবপুর ইউনিয়নে। আমি ২০২১ সাল থেকে ফুসকা বিক্রি করছি। তবে, দেড় মাস আগে রমজানের ঈদের পর থেকে মানুষের আনাগোনা বাড়ছে। প্রতিদিন এই জায়গাগুলোতে ১ থেকে ২ হাজার টাকার ফুসকা, ঝালমুড়ি, চিপস বিক্রি করছেন তিনি। শিবপুর ইউনিয়ন পরিষেদে চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন এ বিষয়ে বলেন, কয়েক বছর আগে চায়নারা সেখানে বালু দিয়ে ভরাট করে কিছু জমি বিক্রয় করছে। আবার কিছু জমিতে শিল্পকারখানা নির্মাণ করবে।

শিবপুরের বাসিন্দা ও ভোলা সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোঃ ইউনুস বলেন, চায়না কোম্পানির ক্রয় করা ঐ জমির একপাশে মেঘনা নদীর ঢেউ আরেক পাশে বালুর মাঠ। মাঠের মধ্যে আবার কিছু সারি সারি খেজুর গাছ। এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ছুটে আসছে। যারফলে এটি এখন একটি বিনোদন কেন্দ্র হিসাবে পরিনত হয়েছে। তবে, গত কয়েকদিন ধরে বালুর মাঠে মানুষের যাতায়াতের উপর অনেকটা নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়ে এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রহরি মো: ঝিলন জানায়, অনেকে এখানে এসে বালুর বস্তা কেটে ফেলে। আবার অনেকে মাদক সেবন করে মাতলামি করছে। এ সব বিষয় বিবেচনায় এনে, ১ জুন থেকে ভেতরে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে চায়না কোম্পানি কর্তৃপক্ষ।


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *