মু্ক্ত চেতনা ডেস্ক : দূর্গম চরাঞ্চল, মানব শুন্যতা ও বসবাসের একেবারেই অনুপযোগী হওয়ায় ঘর ছাড়ছেন পাবনা সুজানগর উপজেলার গুচ্ছ গ্রামের বাসিন্দারা। উপজেলা ভায়না ইউনিয়নের চর-ভবানিপুর পদ্মা নদির মাঝে ঘর পাওয়ার আকাঙ্খা ভূমিহীনদের চোখে মুখে ভেসে উঠেছিল আনন্দ উচ্ছ্বাস। স্বপ্ন দেখেছিল মুজিববর্ষে জাতির পিতার সোনার বাংলায় তাদের মতো ছিন্নমুল মানুষের নিজের ঘর হবে। পরিবার নিয়ে সুখে শান্তিতে কাটাতে পারবে বাকীটা দিনগুলো। কিন্তু সেই স্বপ্ন ভেঙে গেল সুজানগর গুচ্ছ গ্রামের বাসিন্দাদের। জীবনের মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে প্রতিকূলতার সাথে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করতে হচ্ছে তাদের। এই দূর্গম চরাঞ্চল, মানব শুন্যতায় নেই কোন শিক্ষা চিকিৎসা স্বাস্থ্য এমনকি অন্য সংস্থানের জন্য কাজের জায়গা। আবার অন্যদিকে যত্রতত্রভাবে নির্মান হওয়ার কারণে আসছে বর্ষা-বাদল ঝড়ে নিজেদের নিরাপত্তা ঝুকিও রয়েছে। সেই সাথে রয়েছে বিষাক্ত সাপ পোকা মাকড়সহ হিংস্র শেয়ালের দল। এসব কারণেই আতঙ্কে দিন কাটছে তাদের। এমন মানবেতর জীবন থেকে মুক্তি পেতে গুচ্ছ গ্রাম ছাড়ছেন তারা।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা যায়, উপজেলার পদ্মার চর-ভবানীপুরে জনমানব শূন্য দূর্গম বালুচরে ২০১৮-১৯ খ্রি. অর্থবছরের ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে গুচ্ছগ্রাম দ্বিতীয় পর্যায়ে (সিভিআরপি) প্রকল্পের আওতায় ৬৮ লক্ষ চল্লিশ হাজার টাকা ব্যয়ে মাটির ডোয়া ও টিনের বেড়া দিয়ে নতুন ৪০টি ঘর নির্মাণ করা হয়। প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজ শেষে ২০২০ খ্রি. সেপ্টেম্বর মাসে ঘরের চাবি হস্তান্তর করা হয় ভূমিহীনদের মাঝে। কিন্তু নতুন ঘর পাওয়া গুচ্ছ গ্রামের বাসিন্দারা ৬ মাস না যেতেই গুচ্ছগ্রাম ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হচ্ছে। ৪০টি ভূমিহীন পরিবারের নামে ঘর বরাদ্দ হলেও সেখানে বসবাস করছে মাত্র ১৫টি পরিবার।
গুচ্চ গ্রামের বাসিন্দা বাবুল শেখ জানান, এখানে আমরা যে পরিবারগুলো বসবাস করি তাদের মধ্যে কেউ দিনমজুর, কেউ কৃষি শ্রদিক, আবার কেউ ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকি। কিন্তু আশপাশে কোন মানুষজন, গ্রাম হাটবাজার না থাকায় কর্মের জায়গা ও পরিবেশ খুবই অভাব। অন্যদিকে আসছে বর্ষায় নৌকায় বিস্তৃর্ণ জলরাশির পথ পারি দিয়ে যেতে হয় সুজানগর পৌর শহর এলাকায়। এ কারণেই তাদের নামে চরে চাষাবাদ করার জন্য সরকারি খাসজমি বন্দোবস্ত দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান তারা। পরিবার পরিজন নিয়ে তারা যাতে আগামী দিনগুলোতে দু’মুটো ভাত খেয়ে বাঁচতে পারে।
ছাত্তার সরদার নামের এক বাসিন্দা বলেন, বিদ্যুৎ না থাকায় তাদের অন্ধকারের মধ্যে দিয়েই রাত কাটাতে হয়। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া করতে হয় কুপিবাতি অথবা হারিকেনের আলোয়। দৈনন্দিনের কাজকর্ম, বাজার করা, এমনকি মোবাইল ফোন চার্জ দিতে প্রায় ৫ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে সুজানগর পৌর শহর এলাকায় যেতে হয় তাদের। গুচ্ছ গ্রামের বাসিন্দা আলেয়া খাতুন বলেন, আমরা এখানে যারা বসবাস করি তাদের রান্না করতেও অনেক কষ্ট করতে হয়। বালুচর হওয়ায় কোন জ্বালানি পাওয়া যায়না। আবার গ্যাসের চুলা কেনার মত সামর্থও নেই আমাদের। ৪০টি পরিবারের জন্য গুচ্ছগ্রামে মাত্র ২টি টিউবওয়েল ও ২টি গোসলখানা থাকায় দুর্ভোগের শেষ নেই তাদের। গুচ্ছগ্রামের ঘর বরাদ্দ পাওয়া উপকারভোগীর তালিকায় নাম থাকা চর-সুজানগর গ্রামের বাসিন্দা মোছা. হাসিনা খাতুন বলেন, অনেক পরিবারের নাম তালিকায় থাকা সত্¦েও দুর্গম চরাঞ্চল হওয়ায় সেখানে যেতে চাচ্ছেন না অনেকেই।
মুজিববর্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু’র সোনার বাংলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার ঘর ও জমি পেয়ে তারা অনেক খুশি হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়ন কার্যক্রমকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। কিন্তু গুচ্ছগ্রামে বসবাস করতে গিয়ে তাদেরকে নানা সমস্যায় সন্মুখীন হতে হচ্ছে। তারা মনে করছেন, প্রধানমন্ত্রীর একার পক্ষে এসব খোঁজ খবর নেওয়া সম্ভব নয়। সেই সুযোগে কিছু স্বার্থন্বেষী মহল প্রধান মন্ত্রীর মহৎ উদ্যোগকে কলঙ্কিত করতে দূর্গম চরাঞ্চল ঘর তৈরির জন্য জায়গা নির্বাচন করেছেন। সেই সাথে নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে সরকারি নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে প্রকল্পের ঘর নির্মান করেছেন। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে গুচ্ছগ্রাম নির্মানে স্থানীয় ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্ট কাজের সার্থে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তারা। সেই সাথে তাদেরকে বসবাসের উপযোগী জায়গায় পূর্ণবাসনের দাবি জানান।
সুজানগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. রওশন আলী এ বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, ইতিমধ্যে গুচ্ছগ্রামে বিদ্যুৎ-সংযোগের কাজ শুরু করেছে পাবনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। বিষাক্ত সাপ-পোকা মাকড় নিধনের জন্য প্রয়োজনীয় ঔষধ দেওয়া হয়েছে। তারপরও যদি কোন পরিবার বসবাস করতে না চায় তবে সংশ্লিষ্ট উর্ব্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে তাদের নাম বাদ দিয়ে নতুন অন্যান্য পরিবারকে ঘর বরাদ্দ দেওয়া হবে।