নিজস্ব প্রতিনিধি : প্রভাব খাটিয়ে নিম্নমানের কাজ করছিলেন সরকার দলীয় ঠিকাদার। রাস্তায় পুরাতন ইট ব্যবহার করে নিম্নমানের কাজ করছিলেন তিনি। সেই কাজের ছবি ও ভিডিও ধারন করে বাড়ি ফিরছিলেন এক গনমাধ্যম কর্মী। মিস্ত্রীর মাধ্যমে বিষয়টি জানার পর গনমাধ্যম কর্মীকে হাত-পা কেটে প্রাণনাশের হুমকি দেন ঠিকাদার। সংবাদ প্রকাশের আগেই হুমকির বিষয় নিয়ে ঠিকাদার আব্দুল কুদ্দুস সরকারের বিরুদ্ধে থানায় জিডি করেন গনমাধ্যম কর্মী আখতার রহমান। এর পর নিজের নিজের অপরাধ ঢাকতে আইওয়াশ হিসেবেই সাংবাদিককে হুমকি দিয়ে আবার চাঁদা দাবির মিথ্যা অভিযোগ এনে পাল্টা অভিযোগ করেন ওই ঠিকাদার। তবে অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি সাংবাদিকের।
এ বিষয় নিয়ে জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিকসহ অনলাইন পোর্টাল নিউজে সংবাদ প্রকাশ পায়। পরে নিজের অপরাধ আড়াল করে সুষ্ঠ চিন্তা ধারার সংবাদ প্রকাশে বাঁধাগ্রস্ত করতে গত ২৯ মে মানব বন্ধনের নামে ঝাড়ু মিছিল বের করে মানহানিকর অশালিন,অশ্লিল,কুরুচিপূর্ণ ভাষা ব্যবহার কথা বার্তা বলেন ঠিকাদার আব্দুল কুদ্দুস সরকার ও তার লোকজন। এর প্রেক্ষিতে বিচার দাবি করে ঠিকাদার আব্দুল কুদ্দুসসহ তার পক্ষের লোকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন সাংবাদিক আখতার রহমান। সমাজে হেয় প্রতিপন্ন করার মানষিকতায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেস বুকেও আখতার রহমানকে নিয়ে মানহানিকর অশালিন কথা লিখে পোষ্ট দিয়েছেন কেউ কেউ। বিষয়টি নিয়ে গনমাধ্যম কর্মীরা বাঘা প্রেস ক্লাবে প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে।
সভায় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করে তদন্ত সাপেক্ষে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানিয়ে বক্তারা বলেন, অসৎ উদ্দেশ্য ও নিজের অপরাধ ঢাকতে আইওয়াশ হিসেবেই আব্দুল কুদ্দুস সরকার সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ওই ধরনের কর্মকান্ড পরিচালনা করেছেন। কিন্তু এতে করে গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করা যাবে না। ষড়যন্ত্রমূলক হয়রানি ও মিথ্যা অভিযোগ স্বাধীন সাংবাদিকতার পথে বড় ধরনের অন্তরায়। অবিলম্বে সাংবাদিকের বিরুদ্ধে নিঃশর্ত ষড়যন্ত্র বন্ধ করারও দাবি জানানো হয়। তা না করলে দেশজুড়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবে সাংবাদিকরা।
জানা যায়, উপজেলার হরিনা মাষ্টার পাড়ার মহসীনের বাড়ি হতে বীরমুক্তিযোদ্ধা জোনাব আলীর বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা পৃর্ণবাসনের কাজ করছিলেন বাঘা পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি ও ঠিকাদার আব্দুল কুদ্দুস। তিনি ওই রাস্তার এজিং এর কাজ করছিলেন পুরাতন ইট দিয়ে। ২৬ মে বিকেল সাড়ে ৩টায় সেই কাজের ছবি ধারন করে নিজ বাড়ি বাঘায় ফেরার পথে বিকেল সোয়া ৪টায় ০১৮৪৩৭৪২৪৪০ নম্বর থেকে তার ব্যবহৃত মুঠোফোনের ০১৭১১৪১৩৯১৯ নম্বরে কল রিসিভ করে কথা বলতেই নানা প্রকার ভয়ভীতিসহ প্রাণনাশের হুমকি দেন ঠিকাদার। পরবর্তীতে বাঘা উপজেলা পরিষদের সামনে পৌঁছার পর, সেখানে অবস্থানরত ঠিকাদার আব্দুল কুদ্দুস তাকে দেখে প্রকাশ্যে নানান ধরনের কথা বলে হাত-পা কেটে নেওয়াসহ আবারো প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করেন। ২৯ মে ওই সাংবাদিকের ছবি সংবলিত ব্যানার নিয়ে ঝাড়– মিছিল বের করে মানহানিকর কথাবার্তা বলেন ওই ঠিকাদার। কুদ্দুস সরকারের নেতৃত্বে ওই মিছিলে ছিল চিহিৃত মাদক ব্যবসায়ী জামাল ও তার আদœীয় স্বজনসহ কিছু সংখ্যক নারি-পুরুষ। পরে ঠিকাদার আব্দুল কুদ্দুস সরকারসহ তার ভাই মইদুল ইসলাম, ছেলে সেলিম সরকার, শামীম সরকার, ভাগ্নে সুরুজ্জামান সুরুজসহ অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে আরেকটি অভিযোগ করেছেন। আখতার রহমান জানান, ২৬ মে বৃহসপতিবার রাতে জিডির পর তাদের বিরুদ্ধে আরেকটি অভিযোগটি করেছেন। অন্যদিকে আখতার রহমানের বিরুদ্ধে চাঁদা দাবির অভিযোগ তুলে সিডিউল মোতাবেক কাজের দাবি আব্দুল কুদ্দুস সরকারের।
উপজেলা প্রকৌশলী দপ্তরের উপ সহকারি প্রকৌশলী হাবিব হোসেন জানান, ওই কাজটি পেয়েছে সানফ্লাওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং কন্সট্রাকশন। তার কাছ থেকে নিয়ে সেই কাজটি করছেন আব্দুল কুদ্দুস সরকার। দুই জায়গায় প্রটেকশন ওয়ালসহ ৮৪০ মিটার রাস্তার কাজের প্রাক্কলন মূল্যে ৩১ লক্ষ ৩৭ হাজার ১৫৯ টাকা। ৫% নি¤œদরে চুক্তি মূল্যে ২৯ লক্ষ ৮০ হাজার ৩০১ টাকা। এজিং এ পুরাতন ইট ব্যবহার করে কাজ করছিল। তা দেখে উপজেলা প্রকৌশলী সেখানে গিয়ে কাজ বন্ধ করে দিয়ে ভালোমানের নতুন ইট দিয়ে কাজ করার কথা বলেন। পরে নতুন ইট ফেলেছেন। তবে রাস্তার পুরাতন ইটের খোয়া ব্যবহার করার নির্দেশনা রয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপজেলা প্রকৌশলী রতন কুমার ফৌজদার ।
অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাজ্জাদ হোসেন জানান, অভিযোগ নিয়ে জিডি করা হয়েছে। তদন্ত করে পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, ওই ঠিকাদারের বিরুদ্ধে এর আগেও সাংবাদিকদের হুমকিসহ নানান অপকর্মের একাধিক অভিযোগ রয়েছে। এর আগেও অনিয়ম করে রাস্তার কাজ করায় বন্ধ করে দিয়েছিল উপজেলা প্রকৌশলী দপ্তর। পরে প্রকৌশলীর কার্যালয়ে এক কর্মচারিকে মারধর করারও অভিযোগ আছে তার ছেলে বিরুদ্ধে। এসব অপকর্মের সংবাদ প্রকাশ করায়, নিজের অপরাধ ঢাকতে সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মানহানিকর মানববন্ধন, ঝাড়– মিছিল করেছেন ওই ঠিকাদার। স্থানীয়ভাবে জানা যায়, রাজনৈতিক জীবনে জাতীয় পার্টি, বিএনপি দল ত্যাগ করে আওয়ামীলীগে যোগ দিয়ে ফায়দা লুটছেন তিনি। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ক্ষুদে ব্যবসায়ী থেকে তার উত্থান জাতীয় পাটি থেকেই।