নিজস্ব প্রতিনিধি : পাবনা সাঁথিয়ার গোপালপুরে কোর্টের জাল রায়-ডিক্রী তৈরি করে বসতবাড়ীসহ প্রায় ১৮ বিঘা সম্পত্তি আত্নস্বাতের অপচেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। জানা গেছে ভুমি অফিসের কিছু অসাধু কর্মকর্তার সহয়তায় সাঁথিয়া উপজেলার গোপালপুর গ্রামের রিয়াজ উদ্দিনের ছেলে মনসুর আলম কোর্টের জাল রায়-ডিক্রীর মাধ্যেমে সম্পত্তি তার নিজ নামে খতিয়ান ভুক্ত করে নেয়। বিষয়টি জানার পর একই গ্রামের আছাব আলীর ছেলে শাহাদৎ হোসেন বাদী হয়ে মনসুর আলমের বিরুদ্ধে পাবনা জেলা জজ আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলায় ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা ও সার্ভেয়ারের প্রতিবেদন, নথিতে সংযুক্ত কাগজপত্র এবং বাদী বিবাদীর বক্তব্য পর্যালোচনার পর মনসুর আলমের রায়-ডিক্রী ভুয়া, জাল ও বানোয়াট রায়-ডিক্রী বলে প্রমাণিত হয়।
সাঁথিয়া উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান জেলা জজ আদালতের ঐ মামলার রায়ের কপি হাতে পাওয়ার পর সাঁথিয়া উপজেলা ভুমি অফিসের ৬৩৯৫/২০-২১ ও ৬৩৯৭/২০-২১ নং নামজারি কেস মূলে সৃষ্ট ১৪৭০ ও ১৪৭২ নং খতিয়ান বাতিল করে জমি মূল খতিয়ান অর্থাৎ গোপালপুর মৌজার আর.এস ৭৯১, ৮২৩ ও ৪৮৫ নং খতিয়ানভূক্ত করে নথি সংরক্ষণের আদেশ প্রদান করেছেন বলে জানা
গেছে।
সাঁথিয়া উপজেলা সহকারি কর্মকর্তা(ভুমি) মনিরুজ্জামান জানান শাহাদৎ হোসেন নামে এক ব্যক্তি বাদী হয়ে ঐ অফিসের মিস কেস নং-২৯/২০-২১ ও নামজারী কেস নং ৬৩৯৫/২০-২১ ও ৬৩৯৭ /২০-২১ বাতিলের জন্য মনসুর আলমকে বিবাদী করে একটি আবেদন দাখিল করেন। আবেদনের প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তাকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের আদেশ দেয়া হলে তিনি একটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। এ ছাড়াও এই বিষয়ে ঐ অফিসের সার্ভেয়ারের মাধ্যমেও একটি তদন্ত করা হয়।
ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা ও সার্ভেয়ারের প্রতিবেদন, নথিতে সংযুক্ত কাগজপত্রে দেখা যায় গোপালপুর মৌজার এস.এ ১৯৯১ নং দাগে ০.২১ একর জমি শ্রেণি বাড়ি হিসেবে এস.এ ৫৮৫ নং খতিয়ানে জ্যোতিষ চন্দ্ৰ কর্মকার গং নামে, এস.এ ১৯৯০ নং দাগে ০.১১ একর ও এস.এ ২০০০ নং দাগে ০.৩৪ একর ভূমি এস.এ ৭৯০ নং খতিয়ানে অবিনাশ কর্মকার গং নামে দেখা যায় । এস.এ ১৯৯০ নং দাগে ০.০১ একর ও এস.এ ২০০০ দাগে ০.০২ একর এস.এ ৭৮৬ নং খতিয়ানে মনিন্দ্রনাথ কর্মকার গং নামে দেখা যায় । এস.এ ১৯৯০ নং দাগে ০.১১ একর, এস.এ. ২০০০ নং দাগে ০.০৪ একর ভূমি এস.এ ৭৮৭ নং খতিয়ানে মনিন্দ্রনাথ কর্মকার গং নামে দেখা যায়। এস.এস. ১৯৮৯ নং দাগে ০.৩৪ একর ভূমি এস . এ ৩৭১ খতিয়ানে জোতিশ চন্দ্র কর্মকার গং নামে রেকর্ড দেখা যায়। পরবর্তীতে আর.এস জরিপে এস.এ ১৯৮৯ , ১৯৯০ , ১৯৯১ ও ২০০০ আর.এম ২২৬১ নং দাগে রূপান্তরিত হয়ে ০.৭১ একর ভূমি আর.এস ৭৯১ খতিয়ানে রিয়াজ উদ্দিন প্রামানিক গং নামে রেকর্ড প্রকাশিত হয়। এছাড়া আর.এস ২২৬১ দাগ ভূমি ০.৩৯ একর আর.এস ৮২৩ নং খতিয়ানে বাংলাদেশ সরকার পক্ষে ডেপুটি কমিশনার, পাবনা নামে রেকর্ড প্রকাশিত হয়। আর.এস ২২৬২ নং দাগে এস . এ ০.০৩ একর আর.এস ৪৮৪ নং খতিয়ানে তহুরা খাতুন বিবি নামে রেকর্ড প্রকাশিত হয়।
এস.এ ২০২৮ নং দাগে ০.২০ একর ভূমি এস.এ ৭৯০ নং খতিয়ানে অবিনাস চন্দ্র কর্মকার গং নামে এবং এস.এ ২০২৮ নং দাগে ০.০১ একর এস.এ ৭৮৬ খতিয়ানে সুধীর চন্দ্র কর্মকার নামে রেকর্ড দেখা যায়। পরবর্তীতে আর.এস জরিপে এস.এ. ২০২৮ নং দাগ আর.এস ১৭৫৩ নং দাগে রূপান্তরিত হয়ে ০.২০ একর ভূমি আর.এস ৮২৩ নং খতিয়ানে বাংলাদেশ সরকার পক্ষে ডেপুটি কমিশনার, পাবনা নামে রেকর্ড প্রকাশিত হয় । এস.এ ২০০১ নং দাগে ০.১৭ একর ভূমি এস.এ ৬২০ খতিয়ানে ছনি সেখ গং নামে হয়ে পরবর্তীতে আর.এস জরিপে এস.এ ২০০১ নং দাগ আর.এস ২২৬২ নং দাগে রূপান্তিরিত হয়ে ০.১৭ একর ভূমি আর.এস ৪৮৫ নং খতিয়ানে তহুরা খাতুন বিবি নামে রেকর্ড দেখা যায়। এস.এ ১৯৯৯ নং দাগে ০.১৪ একর ভূমি এস.এ ৬২০ নং খতিয়ানে ছনি সেখ গং নামে হয়ে পরবর্তীতে আর.এস জরিপে ২২৬৫ নং দাগে রূপান্তরিত হয়ে ০.১৪ একর ভূমি আর.এস ৪৮৫ নং খতিয়ানে তহুরা খাতুন বিবি নামে রেকর্ড প্রকাশিত হয়েছে ।
মনসুর আলম পাবনা যুগ্ম জেলা জজ ২য় আদালতের ১১৫/২০০৫ নং অঃ প্রঃ মোকদ্দমার জাল রায়-ডিক্রী তৈরি করে ঐ সম্পত্তি তার বলে দাবি করে। ভূমি উন্নয়ন কর প্রদান ও নামজারি আদেশ পাওয়ার জন্য সাঁথিয়া উপজেলা ভুমি অফিসে মিস কেস নং- ২৯/২০-২১ দায়ের করে। এই মিস কেসের প্রেক্ষিতে ঐ সম্পত্তি মনসুর আলমের নামে ১৪৭০ ও ১৪৭২ খতিয়ান ভুক্ত করা হয়। পরবর্তীকালে মনসুর আলমের দাখলিকৃত রায়-ডিক্রী জাল প্রমাণিত হলে তা বাতিল করে পুর্বের মালিকদের নামে খতিয়ান ভুক্ত করা হয়।