পাবনায় “মা” মন্দিরের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে জেলা প্রশাসনে স্মারকলিপি

শেয়ার করুন

প্রতিনিধি পাবনা : পাবনায় বারোয়ারী “মা” মন্দিরের উপরে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য জেলা প্রশাসক বরারার লিখিত আবেদন করেছেন জেলার সচেতন হিন্দু সম্প্রদায়ের বাসিন্দারা। সম্প্রতি জেলা হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের পক্ষে অবস্থান করে লিখিত অভিযোগ প্রদাণ করেন প্রবীণ জেলা আওয়ামীলীগ নেতা বিজয় ভুষন রায় সহ অর্ধশত সনাতনী হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ।

লিখিত অভিযোগের সূত্রমতে, পাবনা শহরের আব্দুল হামিদ সড়কের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন শতবর্ষি শ্রী শ্রী বারোয়ারী মা মন্দির অবস্থিত। যাহা অর্পিত সম্পত্তি নথিভুক্ত। মন্দিরের সভাপতি কর্তৃক বে-অইনি ও অবৈধ ভাবে মন্দিরের পবিত্রতা নষ্ট করে বসবাসের জন্য তার উপরে পাকা দ্বিতল ও তিন তলা পাকা স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে। যা অর্পিত সম্পত্তির আইন লঙ্ঘন এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুভুতিতে গভীর আঘাতের শামিল। এই বিষয়টি সরজমিন তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য পাবনা জেলা প্রশাসক বরাবর লিখত আবেদন করা হয়।
মন্দিরের উপরে বসবাসের জন্য অবৈধ স্থাপনা নির্মান একই সাথে ধর্মীয় পবিত্রতা নষ্ট করে কৌশলে সেটি দখল ও বসবাস করার অনুমতি ও উৎসাহ দেয়ার সঙ্গে জেলার বেশ কিছু হিন্দু নেতার সম্পৃক্তার বিষয় উঠে এসেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ অভিযোগ করে বলেন, জেলা পূজা উদযাপণ পরিষদের সাধারন সম্পাদক বাদল চন্দ্র ঘোষ ও সদর উপজেলা পূজা উদযাপণ কমিটির সভাপতি প্রভাষ ভদ্রের নির্দেশেই এই স্থাপনা নির্মান করা হয়। অবৈধ স্থাপনা নির্মানের সময় হিন্দু নেতা প্রভাষ ভদ্র নিজে উপস্থিত থেকে কাজ করিয়েছেন। এমনকি এই মিন্দরের বেশিরভাগ সদস্যদের কোন মতমাত ছাড়াই ভবন নির্মান করায় বেশ হতবাক হয়েছেন মন্দির সংশ্লিষ্ঠ সাধারন সদস্যরা।
মন্দিরের উপরে ভবন নির্মান বিষয়ে জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারন সম্পাদক বাদল চন্দ্র ঘোষ বলেন, এই ধরনের কাজের আমি প্রথমেই নিন্দা জ্ঞাপন করছি। আমার নাম ভাঙ্গিয়ে প্রভাষ ভদ্র সহ গুটি কয়েক মানুষ এই অবৈধ স্থাপনা নির্মান কাজ করেছে। এটি সরকারি সম্পত্তি জেলা প্রশাসক এর মালিক। মিন্দরের উপরে বসবাস করা যায়না। আমি অনেকবার নিষেধ করেছি আমার কথা তার শোনেনি। এখনো হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ ঘুমন্ত অবস্থায় আছে রয়েছে। জেলাতে অনেক শতবছরের মন্দির আজ বেদখন হয়ে গেছে। আমি একা কিভাবে এর প্রতিরোধ করবো। তবে আমি থাকা কালিন সময়ে কোন অন্যায় কাজ হতে দিবোনা।

এই বিষয়ে সদর উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি প্রভাষ ভদ্র বলেন, মন্দিরের পবিত্রতা নষ্ট হবে সেখানে বসবাস করার জন্য ভবন নির্মান করা হচ্ছে সেটি আমাকে বলা হয়নি। আমাকে বলা হয়েছে সেখানে মন্দিরের প্রয়োজনে স্টোর রুম করা হবে। এই ধরনের কাজের সাথে আমরা নাই। আমি ব্যস্ত আছি পরে কথা বলবো।

বর্তমান অবস্থা নিয়ে মা মন্দির কমিটির সাধারন সম্পাদক দেবজিৎ নাগ সংঙ্কর বলেন, আসলে না বুঝে বিষয়টি হয়েগেছে। পরবর্তীতে আমরা মন্দির কমিটির সকল সদস্য মিলে সভাকরে উপরের স্থাপনা ভেঙ্গে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আসলে এই মন্দিরের সভাপতি যেখানে থাকেন সেখানে সমস্যা হওয়ার কারনে মন্দিরের উপরে বসবাসের জন্য ভবন নির্মান করছিলেন। তবে এই নির্মান কাজ নিয়ে নানা মহলে কথার সৃষ্টি হলে কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে বিষয়টি ধর্মীয় অনভুতিতে আঘাত আনবে বুঝতে পারিনি আমরা। আসলে মন্দিরের উপরে বসবাস করা যায়না।

পাবনা জেলা হিন্দু সম্প্রদায়ের দায়িত্বরত প্রবীন আওয়ামী লীগ নেতা বিজয় ভুষন রায় বলেন, একটি অন্যায় কাজোর আমি প্রতিবাদ করেছি। প্রথমে মৌখিক বলেছিলাম তাদের তারা আমার কথার গুরুত্ব দেয়নি। পরবর্তীতে লিখিত ভাবে জেলা প্রশাসকে চিঠি দিয়েছি। যেহেতু সরকারি সম্পত্তির উপরে এই মন্দির সেহেতু তাকে না জানিয়ে এই কাজ করা হয়েছে এটি অন্যায়। তাই তিনি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

এ বিষয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহ্মিদা আক্তার বলেন, জেলা প্রশাসক স্যার আমাদের কাছে চিঠিটি পাঠিয়েছেন তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য। আমি সংশ্লিশষ্ঠ ভুমি রাজস্ব কর্মকর্তা (এসিল্যান্ড) কে বিষয়টি স্বরজমিন গিয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য বলেছি। তদন্ত শেষে জেলা প্রশাসক মহোদয়কে জানিয়ে তার নির্দেশ মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *