মুক্ত চেতনা ডেস্ক : পাবনা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি)’র অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দূর্ণীতি, অনিয়ম ও সার্টিফিকেট বিক্রির অভিযোগ উঠেছে।
সূত্রেমতে জানা যায়, (টিটিসি) পাবনা’র অধ্যক্ষ মো. সাইদুল ইসলাম বিগত মার্চ ২০২০ খ্রি. চাকুরিতে যোগদান করেন। তখন থেকেই তিনি নিজের ইচ্ছে ও খেয়ালখুশি অনুযায়ী পাবনায় মাঝে মাঝে অফিস করেন এবং ঢাকায় অবস্থান। অফিসে অনুপস্থিত থাকার কারণে নিতি নির্ধারণ কাজেও সব ট্রেড্রের ইন্সট্রাক্টরদের অনেক সময় সমস্যায় পড়তে হয়।
সরকারি বিধি মোতাবেক তার কোয়ার্টারে থাকার কথা থাকলেও তিনি নিয়ম ভঙ্গ করে একাডেমীক ভবনে অবস্থান করেন। একাডেমীক ভবনে মধ্যপ্রাচ্য প্রেরণের জন্য হাউজ কিপিং এর মেয়ে প্রশিক্ষানার্থীদের তৃতীয় তলায় আবাসিক থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। অধ্যক্ষ সাইদুল ইসলাম নিজের কোয়ার্টার ছেলে প্রশিক্ষণার্থীদের ভাড়া দিয়ে তাদের কাছ থেকে অর্থও আদায় করেন। যেটা কখনও কোনভাবেই কাম্য নয়।
পাবনা টিটিসিতে বিদেশ গমনেচ্ছুক কর্মীদের বাধ্যতামূলক ৩ দিনের প্রি-ডিপারচার ট্রেনিং প্রদান করা হয়। এখানেও উম্মে সালমার বিরুদ্ধে ঘুষ ও সার্টিফিকেট বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। ৩ দিনের ট্রেনিং এ সরকারি ফি ২০০’শ টাকা হলেও একাউন্টেন্ট সার্টিফিকেট প্রতি অধ্যক্ষের স্বাক্ষরের জন্য অতিরিক্ত ২০০’শ টাকা, ভিসা চেকের জন্য ১০০’শ টাকা এবং বই ফটোকপির জন্য আরও ৫০ টাকা করে মোট দিতে ৫শ ৫০ টাকা দিতে বাধ্য করা হয়। একাউন্টেন্ট-এর নিকট টাকা পরিশোধ করে শিক্ষার্থীদের সার্টিফিকেট নিতে হয়। অপরদিকে এই বাধ্যতামুলক ট্রেনিং যারা করেন না তাদের কাছে জন প্রতি সুযোগ বুঝে ১ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকায় সার্টিফিকেট বিক্রিয় করা হয়। এই সার্টিফিকেট ব্যাতিত কর্মীরা বিদেশ যাওয়ার ছাড়পত্র পান না। কয়েক জন বিদেশগামী কর্মী এ বিষয়ে বলেন এখানে ট্রেনিং করলে ৫শ ৫০ টাকা দিতে হয় আর ট্রেনিং না করলে ৩ হাজার টাকা দিয়ে সার্টিফিকেট নিতে হয়। আর টাকা না দিলে সার্টিফিকেট আটকে রাখা হয়।
এছাড়াও বিএমইটির ডিজির নাম ভাঙ্গিয়ে অধ্যক্ষ টিটিসিতে সমস্ত দূর্ণীতি ও অপকর্ম করে যাচ্ছেন। অধ্যক্ষ সকল প্রকার অবৈধ লেনদেন করেন একাউনটেন্ট উম্মে সালমার মাধ্যমে। অধ্যক্ষ সবাইকে বলেন একাউনটেন্ট এর সাথে কথা বলতে। একাউনটেন্ট কাছে গেলে তিনি জানিয়ে দেন কত টাকা লাগবে এবং সেই টাকা একাউনটেন্ট গ্রহণ করেন। তিনি সবাইকে বলেন বিএমইটির ডিজি মহদয়কে প্রতি মাসে মাসোহারা পাঠাতে হয় ফলে এই টাকা টিটিসি থেকে তুলতে হবে। টাকা তুলতে টিটিসির ট্রেড প্রধানদের কে মালামাল না কিনে ভাউচারে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করেন। কেউ ভাউচারে স্বাক্ষর করতে না চাইলে তাকে ডিজিকে দিয়ে নোয়াখালী পাঠিয়ে দেওয়ার ভয় দেখান। ফলে ভয়ে বাধ্য হয়ে টিচারদের অধ্যক্ষের অনেক অন্যায় সহ্য করতে হচ্ছে।
টিটিসি পাবনা’র একাউনটেন্ট উম্মে সালমার মাধ্যমে অধ্যক্ষ অসমাঞ্জস্য ভাউচারের মাধ্যমে সরকারি ও বিভিন্ন প্রজেক্টের বিপুল পরিমান টাকা আত্মসাৎ করে যাচ্ছেন। একাউন্টেন্ট উম্মে ছালমা অবৈধ অসমাঞ্জস্য লেনদেনের সুবিধা নিয়ে ১৬ লক্ষ টাকা দিয়ে প্রাইভেট কার কিনেছেন, বাসায় একদিনে ১০ লক্ষ টাকার আসবাবপত্র ক্রয় করেছেন। অগ্রণী ব্যাংক শিবরামপুর শাখায় তার পূর্বের ব্যাংক লোন প্রায় পাচ লক্ষ টাকা এককালীন পরিশোধ করেছেন। নিজ বাড়ি প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় ৪২ কিলোমিটার দুরে। তিনি প্রতিদিন প্রাইভেট গাড়ি নিয়ে বাড়ি থেকে অফিস করেন এবং অফিস শেষে গাড়ি করে বাড়ি ফিরেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেকে শিক্ষক বলেন আমরা সব জানি বুঝি, এসব কথা বললে আমাদের চাকরি থাকবে না। টিটিসি পাবনা’র অধ্যক্ষ মো. সাইদুল ইসলাম, সিআই অমল কুমার দাস এবং একাউন্টেন্ট উম্মে ছালমা যোগসাজেসে সকল অনিয়ম, দূর্ণীতি ও সেচ্ছাচারিতা করে যাচ্ছে সেগুলো আমাদের ব্যথিত করে।
টিটিসি পাবনা’র একাউন্টেন্ট উম্মে ছালমা অনিয়ম দূর্ণীতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার স্বামী ২লক্ষ টাকা বেতন পান, রুপপুর পারমানবিক প্রকল্পে আমাদের জমি অধিগ্রহণে পড়ায় অনেক টাকা পেয়েছি। সেক্ষেত্রে আমি ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করবো তাতে সমস্যা কোথায়?
অন্যদিকে (টিটিসি) পাবনা’র কম্পিউটার ট্রেড্রের সিআই অমল কুমার দাস অধ্যক্ষের অবর্তমানে দায়িত্ব পালন করেন যার কোন অফিসিয়াল চিঠি বা বৈধতা নেই। অধ্যক্ষের অনুপস্থিতির চিঠি চাইলে তিনি দেখাতে পারেনি।
টিটিসি পাবনা’র অধ্যক্ষ মো. সাইদুল ইসলামের নিকট এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এখানে কোন শিক্ষকের নিকট টাকা গ্রহন, কোন দূর্ণীতি অনিয়মের কাজ করা হচ্ছে না। আপনারা সংবাদ কর্মি নিউজ করতেই পারেন। আমি নিজেও পাবনায় থাকতে চাই না। বরং নিউজ করলে আমার চলে যাওয়ার জন্য অনেক সহজ হয়।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার এর অতিরিক্ত সচিব ও ব্যুরো অব ম্যানপাওযার ইমপ্লয়মেন্ট ট্রেনিং (বিএমইটি) ডি. জি. শহিদুল আলম (এনডিসি) মুঠোফোনে টিটিসি পাবনা’র অধ্যক্ষ অনিয়ম দূর্ণীতির অভিযোগ বিষয়ে জানান, আমরা সরকারে উন্নয়নে নির্লসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। পাবনা টিটিসিতে কোন অনিয়ম দূর্ণীতি বিষয় আসলে আমরা পরিচালক পাঠিয়ে সে বিষয়ে তদন্ত করা হবে।
সরকার বেকারত্ব দূরিকরণে দরিদ্র, বিধবা, ও অল্প শিক্ষিত ব্যাক্তিদের কারিগরি প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার লক্ষে সম্পূর্ণ ফ্রি এবং বৃত্তিমূলক কার্যক্রম হাতে নিয়েছেন। অথচ সরকারের এই মহৎ কার্যক্রমকে প্রশ্নবিদ্ধ করতেই অধ্যক্ষ মো. সাইদুল ইসলাম, সিআই অমল কুমার দাস এবং একাউন্টেন্ট উম্মে ছালমা যোগসাজেসে বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম দূর্ণীতি করে যাচ্ছেন।
সচেতন মহল মনে করছেন, এমন অনিয়ম, দূর্ণীতি ও সেচ্ছাচারিতা চলতে থাকলে পাবনা টিটিসি’র ভাবমূর্তি নষ্ট হবে। শিক্ষার্থীরা তাদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা অর্জন করতে বঞ্চিত হবে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সুদৃষ্টি কামনা করেন।