বিলুপ্তির পথে চাটমোহরের তাঁত শিল্প

শেয়ার করুন

কায়সার আহম্মেদ (চাটমোহর) : পাবনা চাটমোহর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী তাঁত শিল্প বর্তমানে বিলুপ্তের পথে। সুতা, কাঁচা মাল, পুঁজির অভাব এবং আধুনিক কাপড়ের সাথে প্রতিযোগিতা টিকতে না পেরে একের পর এক তাঁত শিল্প বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। হাতেগোণা কয়েকজন তাঁত মালিক এ শিল্পকে আঁকড়ে ধরে আছে তাদের বংশ পরমপরায়। পুরানো পেশা হিসাবে আর কত দিন লোকসান গুনবে এই দুশ্চিন্তায় প্রহর গুনছেন তারা।

চাটমোহরের হরিপুর তাঁতিপাড়া, চরসেনগ্রাম, গৌড়নগর, বিন্যাবাড়ি, কুয়াবাসী, চড়ুইকোলসহ বিভিন্ন গ্রামের প্রায় ৫’শ অধিক পরিবার তাঁত শিল্পের কর্মের সাথে জড়িত ছিল। এ এলাকায় তৈরী করা শাড়ি, লুঙ্গি, গামছা, ওড়না এলাকার পাশাপাশি ঢাকার বিভিন্ন শোরুমে বিক্রি হতো।

একযুগ পূর্বে হরিপুর তাঁতি পাড়ার প্রায় ৪০ পরিবার তাঁত শিল্পের পাঁচ হাজারের অধিক শ্রমিকের কর্মসংস্থান ছিল। বর্তমানে দুইটি পরিবার তাঁত শিল্পের সাথে জড়িত শ্রমিক ৫ জন।

তাঁত শ্রমিক মো. মঞ্জুর হোসেন বলেন, প্রতিদিন ৩-৪ টি লুঙ্গি করতে পারি। প্রতি পিস লুঙ্গির হাজিরা পাই ৭০ টাকা। পরিবারের ৪সদস্য নিয়ে খুব কষ্টে জীবন যাপন করছি।

তাঁত শ্রমিক মো. নজরুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন ২-৩ টি শাড়ি তৈরি করি। প্রতিটি শাড়ি মজুরি ১০০ টাকা। প্রতিদিন ৬-৭ টি শাড়ির কাজ করা যায়। কিন্তু চাহিদা না থাকায় কাজ করতে পারছিনা।

তাঁত মালিক মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, কাপড়ের দামের চেয়ে সুতার দাম বেশি হওয়ায় তৈরী করে বাজারে বিক্রি করে তেমন লাভ হয় না। একটি শাড়ি উৎপাদন ব্যয় হয় ৫০০-৫৭৫ টাকা আর বিক্রি হয় ৬৯০ টাকা। তাঁত শিল্পে কোন সরকারি অনুদান পাওয়া যায় না। স্বল্প সুদে ঋণ পাওয়া যেত তাহলে আগামীতে তাঁত শিল্প ঘুরে দাঁড়াতো।

তাঁতিপাড়ার মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, পূর্বে ৮০-৯০টি তাঁত ছিলো। বর্তমানে ৩টি তাঁত আছে। কাঁচামাল তুত, সাগু, আতপ চাউল, সোহাগা, রং, সুতাসহ উপকরণের দাম বৃদ্ধি পেলেও কাপড়ের দাম বৃদ্ধি না পাওয়ায় লোকসান গুনতে হচ্ছে। অর্থাভাবে এটিও বন্ধ করে দিতে হতে পারে।

চাটমোহরের তাঁত শেল্পের ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে সরকারের সহযোগিতা ও সহজ ঋনের সুবিধা কামনা করছেন এসব এলাকার তাঁত শিল্পের সাথে সম্পৃক্ত পরিবারগুলো।


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *