মাশরুম চাষে চাটমোহরে তরুণ উদ্যোক্তা আব্দুল হালিমের ভাগ্য বদল

শেয়ার করুন

মামুন হোসেন (পাবনা) : মাশরুম অত্যন্ত পুষ্টিকর সুস্বাদু ও ঔষধি গুণ সম্পূর্ণ খাবার। পুষ্টি ও ঔষধিগুণ থাকায় ইতোমধ্যেই এটি সারাদেশে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তাই সারাদেশের ন্যায় পাবনাতেও এখন বাণিজ্যিক ভাবে মাশরুম চাষ করা হচ্ছে। বিশেষ করে শিক্ষিত যুবকদের মাঝে মাশরুম চাষে বেশি আগ্রহ বাড়ছে। পাবনায় ঘরোয়া ও বাণিজ্যিক ভাবে এখন মাশরুম চাষ করা হচ্ছে। মাশরুম চাষে বেকার সমস্যার সমাধান ও বাড়তি আয়ের উৎস হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। জাতীয় অর্থনীতিতে মাশরুম বিশেষ অবদান রাখবে বলে মনে করছে এই তরুণ উদ্যোক্তারা। মাশরুম সাধারণত ঘরের ফসল মাশরুম চাষে কোন আবাদি জমির প্রয়োজন হয় না। চাষের জমি না থাকলেও বসত ঘরের পাশে অব্যবহৃত জায়গা ও ঘরের বারান্দা ব্যবহার করে অধিক পরিমাণ মাশরুম উৎপাদন করা সম্ভব। এছাড়াও মাশরুম উন্নয়ন ইনস্টিটিউট কতৃক কৃষিবান্ধব প্রযুক্তি উদ্ভাবিত হওয়ায় বাংলাদেশে এখন মাশরুম চাষ সহজ হয়েছে। মাশরুম বীজ উৎপাদনের জন্য যেসব কাঁচামালের প্রয়োজন হয়ে থাকে যেমন, খড়, কাঠের গুঁড়া, কাগজ, গমের ভূসি ইত্যাদি এসকল জিনিস আমাদের দেশে সহজলভ্য ও সস্তা। আমাদের দেশে মাশরুম চাষের উপযোগী হওয়ায় সব শ্রেনী পেশার মানুষ মাশরুম চাষ করতে পারে। স্বল্প পূঁজি ও শ্রম ব্যয় করে মাশরুম চাষে অধিক আয় করা সম্ভব।

বাণিজ্যিক ভাবে মাশরুম চাষ করে পাবনা চাটমোহর উপজেলার হান্ডিয়াল গ্রামের তরুণ উদ্যোক্তা আব্দুল হালিম ভাগ্য বদলে গেছে। সরেজমিনে মাশরুম খামারে গিয়ে কথা হয় আব্দুল হালিমের সাথে। হালিমের পিতা পেশায় একজন শিক্ষক মা গৃহিণী তিন ভাই এক বোনের মধ্যে আব্দুল হালিম মেঝো। তরুণ এই উদ্যোক্তা গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকুরি জীবন শুরু করে। ছাত্র জীবন থেকেই ব্যবসার প্রতি আগ্রহ ছিল তার। কয়েকজন বন্ধু মিলে যৌথভাবে ঢাকায় একটি ব্যবসা শুরু করে। করোনার কারণে ব্যবসা লোকসান হওয়ায় ব্যবসা ছেড়ে গ্রামে চলে আসেন আব্দুল হালিম। ব্যবসা লোকসান হওয়ায় হতাশায় পরেন তিনি, পরে মাশরুম বিষয় জানতে পেরে ঢাকা মাশরুম উন্নয়ন ইন্সটিটিউট থেকে প্রশিক্ষণ শেষে স্বল্প পূঁজি নিয়ে ঔষধি ও পুষ্টিগুণ সম্পূর্ণ মাশরুম চাষ শুরু করেন। প্রাথমিকভাবে ৫০ টি স্পন প্যাকেট নিয়ে ২০২০ সালে মাশরুম চাষ শুরু করে আব্দুল হালিম। বসত ঘরের ছোট একটি জায়গা নিয়ে মাশরুম চাষের যাত্রা শুরু হয় তার। বর্তমানে আব্দুল হালিম মাশরুম চাষ করে উৎপাদন খরচ বাদ দিয়ে প্রতি মাসে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা আয় করছে। প্রথম স্পন প্যাকেট থেকে ২৫ হতে ৩০ দিনের মধ্যে ফলন পাওয়া যায়। দুই কেজির একটি স্পন প্যাকেট থেকে সর্ব মোট ২ কেজির মত মাশরুম পাওয়া যায় বলে তিনি জানান। হালিম প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ কেজি মাশরুম বিক্রি করে থাকে। প্রতিকেজি মাশরুম ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা ও অবিক্রিত মাশরুম রোদে শুকিয়ে প্রতি কেজি শুকানো মাশরুম ১৩০০ থেকে ১৪০০ টাকা কেজি দরে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করে থাকে। কুরিয়ারের মাধ্যমে আব্দুল হালিম দেশের বিভিন্ন স্থানে মাশরুম পাঠিয়ে থাকেন বলে তিনি জানান। তার খামারে মাশরুম চাষ বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন চারজন শ্রমিক কাজ করছে। তাদের প্রতি মাসে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বেতন দিয়ে থাকেন তিনি। ভবিষ্যতে আরও বেশি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারবে বলে তিনি মনে করেন। বর্তমানে হালিমের খামারে ১০০০ অধিক মাশরুমের খড়ের স্পন প্যাকেট রয়েছে এ থেকে তিনি প্রায় ৪০০ থেকে ৫০০ কেজির মত মাশরুম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করছে। যার বাজার মূল্য আনুমানিক ১২০,০০০ থেকে ১৬০,০০০ টাকা।

তরুণ উদ্যোক্তা আব্দুল হালিম বলেন, মাশরুম উৎপাদনের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রজাতির মাশরুম বীজ (স্পন) উৎপাদন করে থাকি। আমার উৎপাদিত মাশরুম বীজ (স্পন) দেশের বিভিন্ন জেলায় আমি বিক্রি করি। হালিম বলেন, মাশরুম খুবই পুষ্টিকর ও সুস্বাদু সবজি এবং লাভজনক ব্যবসা। তরুণ এই উদ্যোক্তা বলেন, আমার মাশরুম চাষ দেখে এলাকায় অনেক বেকার যুবক আগ্রহী হচ্ছে এ পেশায়। আমার মাশরুম খামার দেখে অনেকে আমার কাছ থেকে বীজ নিয়ে মাশরুম চাষ শুরু করেছে, আমিও তাদের বিভিন্ন পরার্মশ দিয়ে সহযোগিতা করছি। তিনি জানান, সামান্য পূঁজি নিয়ে একজন বেকার মাশরুম চাষ শুরু করতে পারে। কারণ মাশরুম চাষে যা প্রয়োজন হয়, সে সকল কিছু হাতের কাছেই পাওয়া যায়। এজন্য চাইলে যে কেউ মাশরুম চাষ শুরু করতে পারে। তবে বাণিজ্যিকভাবে মাশরুম চাষ করতে গেলে একটু বেশি অর্থের প্রয়োজন হয়, কারণ ল্যাব করতে অনেক খরচ হয় বলে তিনি জানান। হালিম বলেন, সরকারি ভাবে এই খাতে যদি কৃষি ঋণ কিংবা সহযোগিতা পাওয়া যায় তাহলে শিক্ষিত বেকার যুবকরা মাশরুম চাষ করে বেকারত্ব দূর করতে পারবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর পাবনা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. মিজানুর রহমান এ বিষয়ে বলেন, মানব দেহের জন্য খুবই উপকারি ও ঔষধিগুণে ভরপুর একটি দ্রব্যের সহজ সরল নাম মাশরুম। মাশরুম অত্যন্ত পুষ্টিকর, সুস্বাদু ও ঔষধিগুণ সম্পন্ন খাবারের পাশাপাশি মাশরুম চাষ অনেক লাভজনক। এদেশের আবহাওয়া ও জলবায়ু মাশরুম চাষের উপযোগী। অমিত সম্ভবনাময় ফসল মাশরুম চাষের জন্য কোন উর্বর জমির প্রয়োজন হয় না। বসত ঘরের পাশে অব্যবহৃত জায়গা ও ঘরের বারান্দা ব্যবহার করে অধিক পরিমাণ মাশরুম উৎপাদন করা সম্ভব বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, ঘণবসতিপূর্ণ বাংলাদেশে মাশরুম উৎপাদন ও ব্যবহার বৃদ্ধি করা অত্যন্ত প্রয়োজন।


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *