মুক্ত চেতনা ডেস্ক : বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)’র আয়োজনে রাজশাহী নগরীর মাস্টারশেফ রেস্টুরেন্টে নেটওয়ার্ক সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) ২০২২ খ্রি. সকালে অনুষ্ঠিত নেটওয়ার্ক সমন্বয় সভা সঞ্চালনা করেন বেলা’র রাজশাহী কার্যালয়ের সমন্বয়কারী তন্ময় কুমার সান্যাল। পরবর্তী পর্বে মুক্ত আলোচনা সঞ্চালনা করেন বেলা’র নেটওয়ার্ক মেম্বার ও দৈনিক সোনার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক আকবারুল হাসান মিল্লাত। সভাপতিত্ব করেন বেলা’র নেটওয়ার্ক মেম্বার ও পাবনার দৈনিক সিনসা পত্রিকার সম্পাদক এস এম মাহবুব আলম। স্থানীয় পর্যায়ে পরিবেশগত ন্যায় বিচারের ধারণাকে জোরদার করা, পরিবেশ রক্ষায় স্থানীয় পর্যায়ের জনগোষ্ঠীর সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, জনসংযোগ ও জনশক্তি বৃদ্ধির মাধ্যমে পরিবেশগত ন্যায় বিচারের দাবী জোরালো করার লক্ষ্যে বেলা এই ‘টেওয়ার্ক সমন্বয় সভা’র আয়োজন করে। রাজশাহী, নাটোর, পাবনা, বগুড়া ও দিনাজপুর জেলার প্রায় ২০ জন নেটওয়ার্ক মেম্বর এবং সাংবাদিকরা সভায় অংশগ্রহণ করেন।
বেলা’র কার্যক্রম সম্পর্কে রাজশাহী কার্যালয়ের সমন্বয়কারী বলেন, ন্যায্য, ন্যায়সঙ্গত ও লিঙ্গ সমতার ভিত্তিতে কমিউনিটির ক্ষমতায়ন এবং প্রাকৃতিক সম্পদ ও পরিবেশগত অধিকার সুরক্ষায় বেলা কাজ করছে। এছাড়াও পরিবেশগত অধিকারের সচেতনতা গড়ে তোলার পাশাপাশি সচেতনতামূলক প্রচার, স্টেকহোল্ডারদের প্রশিক্ষণ প্রদান, পলিসি এডভোকেসি করার মাধ্যমে পরিবেশগত শাসন ব্যবস্থায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে বেলা কাজ করে চলেছে। এবং স্বচ্ছ ও অংশগ্রহণমূলক পরিবেশ প্রশাসনের দাবিকে বেলা উৎসাহিত করে। একইসাথে পরিবেশগত ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার লক্ষে বেলা আইনগত সহায়তা প্রদান করে থাকে। ইতিমধ্যে বেলা মানুষের পরিবেশগত অধিকার রক্ষায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছে এবং ইতিবাচক রায়ও পেয়েছে। জনস্বার্থ মামলার মাধ্যমে বেলা’র প্রচেষ্টা দেশে ‘পরিবেশগত ন্যায়বিচার’ ধারণাকে সত্যিকার অর্থেই গতিশীল করেছে এবং ফলশ্রুতিতে দেশে পরিবেশ সংরক্ষণে আইন ও বিধি প্রণিত হয়েছে।
সভায় অংশগ্রহণকারীরা দলীয় কার্যক্রমের মাধ্যমে নিজ নিজ জেলার পরিবেশগত বিভিন্ন ইস্যু নির্বাচন করে তা উপস্থাপন করেন। এবং এসব ইস্যুতে কাজ করার ক্ষেত্রে তারা বেলাকে সহযোগিতা করার অভিমত ব্যক্ত করেন। উত্তরাঞ্চলের চলনবিলের জীববৈচিত্র্য; বরেন্দ্র এলাকার ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন; দিনাজপুরের আদিবাসী ও বনের জমি দখল করে বিনোদনকেন্দ্র তৈরি; বগুড়ার খাল দখল ও দূষণ; ঈশ্বরদীর রশিদ পেপার মিল; নারোদ, বড়াল, ইছামতি, করতোয়াসহ উত্তরাঞ্চলের অন্যান্য নদী দখল ও দূষণ; উত্তরাঞ্চলে ইউক্যালিপটাস ও আকাশমনী বৃক্ষ ইত্যাদি পরিবেশগত সমস্যাগুলো অংশগ্রহণকারীদের আলোচনায় উঠে আসে। এসব ইস্যুতে আগামী দিনে সকলে মিলে একসাথে কাজ করার আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়।
দৈনিক সোনার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক আকবারুল হাসান মিল্লাত বলেন, পরিবেশ রক্ষার আন্দোলন আজ সারা বিশ্বে জোরদার হয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ে পরিবেশগত ইস্যু নির্বাচন এবং নির্বাচিত ইস্যুতে তথ্য সংগ্রহ করে কাজ করা একটা বড় ধরণের চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নেটওয়ার্ক মেম্বররা বেলাকে সহযোগিতা করতে পারেন। এছাড়াও মানুষের পরিবেশগত অধিকার নিয়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম নেটওয়ার্ক মেম্বরদের মাধ্যমে করা যেতে পারে। এভাবে পারস্পরিক সহযোগিতা বিনিময়ের মাধ্যমেই একটি টেওয়ার্ক এগিয়ে চলে।
সভাপতির বক্তব্যে এস এম মাহবুব আলম বলেন, আমরা পাবনার ইছামতি নদী রক্ষায় কাজ করছি। সেখানে বেলা এই ইস্যুকে প্রাধান্য দিয়ে আইনগত সহযোগিতা নিয়ে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। আদালত নদী রক্ষায় আদেশ দিয়েছেন। কিন্তু আদেশ বাস্তবায়নে স্থানীয় প্রশাসন সময় ক্ষেপণ করছে। বেলা যেমন তাদের নেটওয়ার্ক মেম্বার হিসাবে আমাদের মূল্যায়ন করে থাকে তেমনি একজন নেটওয়ার্ক মেম্বার হিসাবে আমরাও তাদের কার্যক্রমকে শক্তিশালী করতে এবং তা এগিয়ে নিতে বেলা’র পাশে থাকবো। এভাবেই সমাজের বিভিন্ন পর্যায় থেকে পরিবেশ রক্ষায় আমাদের সকলকে কাজ করতে হবে। মানুষের পরিবেশগত অধিকার রক্ষায় ভূমিকা রাখতে হবে।