আখতার রহমান, রাজশাহী : অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলার দুই বছর পর রেলওয়ের সরকারি রেল পরিদর্শক (জিআইবিআর) ও পশ্চিমাঞ্চল রেলের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মো. রমজান আলীকে সাময়িক বরখান্ত করা হয়েছে। ৩১ জুলাই রেল সচিব মো. হুমায়ুন কবীর স্বাক্ষরিত এক আদেশপত্রে বরখান্ত করা হয়।
চিঠিতে রেলসচিব বলেছেন, রজমান আলীর বিরুদ্ধ জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগে মামলা হয়েছে। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে তাকে সাময়িক বরখান্ত করা হলো। পত্রে আরও বলা হয়, রেলওয়ের সরকারি রেল পরিদর্শক (জিআইবিআর) মো. রমজান আলীর বিরুদ্ধে এজাহারে বর্ণিত অপরাধ তদন্তকালে অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় ঢাকা মহানগর আদালত একটি মামলা আমলে নিয়েছেন।
যেহেতু সরকারি চাকরি আইন ২০১৮ এর ৩৯ (২) ধারায় উল্লেখ রয়েছে কোনো কর্মচারী দেনার দায়ে কারাগারে আটক থাকলে, অথবা কোনো ফৌজদারি মামলায় গ্রেফতার হলে বা তাহার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র গৃহীত হলে, সরকার বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ উক্তরূপ আটক, গ্রেফতার বা অভিযোগপত্র গ্রহণের দিন হইতে তাকে সাময়িকভাবে বরখান্ত করতে পারবেন। তাই সরকারি রেল পরিদর্শক মো. রমজান আলীকে ৩১ জুলাই ২০২২ থেকে সাময়িকভাবে বরখান্ত করা হলো। সাময়িক বরখান্ত থাকাকালে তিনি বিধি মোতাবেক খোরাকি ভাতা প্রাপ্য হবেন।সাময়িক বরখান্ত হলেও প্রকৌশলী মো. রমজান আলী ও তার স্ত্রী ২০২০ সালের ৩ সেপ্টেম্বর আদালত থেকে জামিন নেন এবং সেই জামিন বহাল রয়েছে।
এদিকে দুদকের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে মো. রজমান আলী পশ্চিমাঞ্চল রেলের প্রধান প্রকৌশলী থাকাকালে তার বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ যায় দুদকে। তদন্তের স্বার্থে তাকে বদলি করে খুলনা-মংলা রেল প্রকল্পের পরিচালক ও পরে আবার বদলি করে আখাউড়া-লাকসাম ডুয়েল গেইজ প্রকল্পের পরিচালক করা হয়।
দুদক দীর্ঘ অনুসন্ধান করে রমজান আলী ও তার স্ত্রী আগা দিলরুবা পারভিন ইলোরার অবৈধ সম্পদের সন্ধান পায়। ২০২০ সালের ১৬ আগস্ট দুদকের উপ-পরিচালক আবু বকর সিদ্দিক বাদী হয়ে রজমান আলী ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন আইনে পৃথক দুটি মামলা করেন। এরপর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশে রমজান আলীকে আখাউড়া রেল প্রকল্প থেকে প্রত্যাহার করে রেলওয়ে সদর দপ্তরে যুগ্ম পরিচালক (প্রকৌশলী) পদে পদায়ন করা হয়। রমজান আলীর বাড়ি পাবনা জেলার সাঁথিয়া উপজেলার বেড়ার ভিটা গ্রামে।
দুদক সূত্র আরও জানায়, রেল কর্মকর্তা রমজান আলীর বিরুদ্ধে ২ কোটি ৪৩ লাখ ৮০ হাজার ২৮৬ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। এগুলোর অন্যতম হলো ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় আটতলা বাড়ি, ঢাকায় তিনটি প্লট, জামালপুরে দুটি বাড়ি, বিলাসবহুল গাড়ি এবং ব্যাংকে রয়েছে অবৈধ নগদ অর্থ এবং দেশের বাড়িতে রয়েছে সম্পদ।
রমজান আলীর স্ত্রী আগা দিলরুবা পারভীন ইলোরার বিরুদ্ধে ২০০৭ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ১ কোটি ৮৫ লাখ ৮ হাজার ৬৫৬ টাকার অবৈধ সম্পদের মালিকানার অভিযোগ আনা হয়েছে। যেখানে কথিত এই ব্যবসায়ী সম্পদ বিবরণীতে দুই ৪৭ লাখ ৯০ হাজার ৬৫৬ টাকার সম্পদের ঘোষণা দিয়েছিলেন।
রমজান আলী ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭ (১) ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় মামলা দুটি করা হয়েছে।