সাঁথিয়ায় পেঁয়াজের বাম্পার ফলন; কৃষকের মুখে হাসি

শেয়ার করুন

জালাল উদ্দিন (সাঁথিয়া) : পাবনা জেলার সর্বাধিক পেঁয়াজ উৎপাদন কারী এলাকা হিসেবে পরিচিত সাঁথিয়ার কৃষকেরা নভেম্বর মাসের শেষ দিকে এবারও ব্যাপকভাবে মসলা জাতীয় ফসল পেঁয়াজের আবাদ করেছিলেন। অন্যান্য ফসলের তুলনায় পেঁয়াজ চাষ লাভ জনক হওয়ায় এবং প্রায় ৯০ দিনের মধ্যেই পেঁয়াজ ঘরে তোলা যায় বলে এবারও কৃষকেরা পেঁয়াজ চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েছিলেন। যথাসময়ে সেচ ও সারের পর্যাপ্ত সরবারহ এবং অনুকুল আবহাওয়া বিরাজ করায় চলতি মৌসুমে সাঁথিয়ায় পেঁয়াজের বাম্পার ফলন হয়েছে বলে কৃষকেরা জানান। সাঁথিয়ার পেঁয়াজ দিয়েই দেশের অনেকটা চাহিদা মেটানো সম্ভব হয়। উপজেলার বেশ কিছু এলাকায় শুরু হয়েছে পেঁয়াজ তোলা, কাটা ও বাছাই। পেঁয়াজ নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কৃষক ও কিষাণীরা। এক-দুই সপ্তাহের মধ্যেই উপজেলার সর্বত্রই পুরোদমে শুরু হবে পেঁয়াজ তোলা।

সাঁথিয়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি রবি মৌসুমে সাঁথিয়া উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারন করা হয়েছিল ১৫ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে। আবাদ হয়েছে ১৫ হাজার ৫২৫ হেক্টর জমিতে। এবার বারি পেঁয়াজ-১, তাহেরপুরী, লালতীর, মেটাল, ও ইউনাইটেড জাতের পেঁয়াজের আবাদ করা হয়েছিল। সবচেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে বারি পেঁয়াজ-১ জাতের, তবে দিনদিন বাড়ছে লালতীর জাতের পেঁয়াজের আবাদ। পেঁয়াজ উৎপাদনের সম্ভাব্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৮৬ হাজার ৩১২ মেট্রিকটন। এবার পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষমাত্রা অর্জিত হয়েছে এবং উপজেলায় পেঁয়াজের আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে।

এ ব্যাপারে সাঁথিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবীদ সঞ্জীব কুমার গোস্বামী জানান, গত বছরের তুলনায় চলতি মৌসুমে চারা পেঁয়াজ নতুন এবং উন্নত জাত ইউনাইটেড ও লালতীর আবাদ হয়েছে। এছাড়া উফসি এবং হাইব্রিড জাতের আবাদও দিনদিন বাড়ছে। আমাদের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা প্রতিনিয়ত এলাকাভিত্তিক মাঠ পরিদর্শন, মাঠ দিবস, কৃষক সমাবেশ করে চাষীদের সঠিক পরামর্শ দিয়েছেন। এছাড়া কৃষকদের আবাদে খরচ কম ও ক্ষতি না হয় সেজন্য নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারে তাদেরকে উৎসাহিত করা হয়েছে এবং মনিটরিং করা হয়েছে। আমাদের কৃষকরা যদি যতœ নেয় তাহলে এবার প্রতি হেক্টরে ১২ মেট্রিকটন পেঁয়াজ উৎপাদন হবে বলে আশ করছি। এবার পোকামাকড়ের আক্রমন না থাকায় ও কৃষি উপকরণ যেমন- বীজ, সার, বালাই নাশক সহজ লভ্যতার কারণে এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় পোঁজের বাম্পার ফলন হয়েছে।

উপজেলার চকপাট্ট্রা গ্রামের পেঁয়াজ চাষী আফতাব মন্ডল, গৌরীগ্রামের আলমগীর হোসেন, ধাতালপুর গ্রামের আব্দুল মান্নান,কালাইচারা গ্রামের আঃ আলীম সহ বিভিন্ন গ্রামের কৃষকেরা জানায় প্রতি বিঘা জমিতে পেঁয়াজের চাষ করতে শ্রমিক, সেচ, সার, কীটনাশক, পেঁয়াজ তোলা, কাটা ও বাছাই বাবদ খরচ হয় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। কৃষকেরা আরও জানায় প্রতি বিঘা জমিতে প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ মন পেঁয়াজ উৎপাদন হয় এবং মৌসুমের শুরুতে প্রতি মন পেঁয়াজ ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৪’শ টাকায় বিক্রি হলেও পরবর্তী সময়ে প্রতি মণ পেঁয়াজ ২ হাজার থেকে ৩/৪ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। এতে তাদের খরচ বাদে অন্যান্য ফসলের তুলনায় মোটামটি বেশি লাভ হয়।


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *