ইছামতি নদী পুনরুজ্জীবিত করণের কাজ সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হবে— জেলা প্রশাসক

শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার : পাবনার জেলা প্রশাসক বিশ^াস রাসেল হোসেন বলেছেন, পাবনাবাসীর প্রাণের দাবী ইছামতি নদী পুনরুজ্জীবিত করণে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ব্যর্থ হলে প্রয়োজনে সেনাবাহিনীর কাছে প্রকল্প হস্তান্তর করা হবে। তিনি আরও বলেন, মহামান্য হাইকোর্টের একাধিক আদেশ থাকার পরও নি¤œ আদালতে নিষেধাজ্ঞা থাকায় উচ্ছেদ কার্যক্রমে সাময়িক বাঁধাগ্রস্থ হয়েছে। অচিরেই আইনী জটিলতা নিরোসন করে ইছামতি নদীর দু‘পাড়ের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে খনন কাজ সম্পন্ন করা হবে। কোন অপশক্তিই ইছামতি নদী পুনরুজ্জীবিত করণ বাধাগ্রস্থ করতে পারবেনা। ইছামতি নদী উদ্ধার আন্দোলন পাবনার উদ্যোগে রোববার (১৭’ জুলাই) দুপুর ১ টায় জেলা প্রশাসক বিশ^াস রাসেল হোসেন‘র মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর লিখিত স্মারকলিপি প্রদান অনুষ্ঠানে তিঁনি এসব কথা বলেন। স্মারকলিপি প্রদান করেন ইছামতি নদী উদ্ধার আন্দোলন পাবনার সভাপতি এস এম মাহবুব আলম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম ৭১‘ পাবনা জেলা শাখার সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা আ. স. ম আব্দুর রহিম পাকন, পাবনা সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান শাওয়াল বিশ^াস ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সামসুন্নাহার রেখা, বাংলাদেশ পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন পাবনার সভাপতি পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি এড. তোসলিম হাসান সুমন ও সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক আব্দুল হামিদ খান, ইছামতি নদী উদ্ধার আন্দোলন পাবনার সাধারণ সম্পাদক জেলা কৃষকলীগের সহ-সভাপতি আলহাজ¦ হাবিবুর রহমান হাবিব, সহ-সভাপতি সেলিম নাজির উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক হাসিনা আক্তার রোজী, সাংগঠনিক সম্পাদক সাঁথিয়া মহিলা ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক ড. মনছুর আলম, প্রচার সম্পাদক শফিক আল কামাল, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক আহম্মদ রফিক বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হেলেনা খাতুন, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক লতিফ গ্রুপের নির্বাহী সদস্য মাহিমা বিশ^াস মাহি, সহ স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক লারনার্স অর্গানাইজেশনের সেক্রেটারী জাহানারা বেগম বিজলী, পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক বাসস জেলা প্রতিনিধি রফিকুল ইসলাম সুইট, সিএনএফ টিভির চেয়ারম্যান খালেদ আহমেদ প্রমুখ।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর লিখিত স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়েছে, পাবনা শহরের মধ্যদিয়ে প্রবাহিত মন্ডলপাড়া ব্রিজ থেকে শ্মশানঘাট পর্যন্ত ৬ কি.মি. ঐতিহ্যবাহী ইছামতি নদী বর্তমানে অবৈধ দখল ও দূষণে জর্জরিত হয়ে মৃত খালে পরিণত হয়েছে। পরিবেশের মারাতœক বিপর্যয় ঘটেছে। নদীটি স্বাভাবিক গতিতে চলমান এবং পরিবেশ দূষণ মুক্ত করণের জন্য পাবনা-৫ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্স, পাবনা ও সিরাজগঞ্জ (সংরক্ষিত মহিলা) আসনের সংসদ সদস্য নাদিরা ইয়াসমিন জলি, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের তৎকালিন চেয়ারম্যান ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার, তৎকালিন জেলা প্রশাসক রেখা রাণী বালো, জসীম উদ্দিন ও কবীর মাহমুদ, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ রেজাউল রহিম লাল, উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ¦ মোশারফ হোসেন, জেলা পরিষদের তৎকালিন প্রশাসক এম সাইদুল হক চুন্নু, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি এড. তোসলিম হাসান সুমন, বীরমুক্তিযোদ্ধা জেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম মুক্তিযুদ্ধ -৭১‘ এর কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য ও পাবনা জেলা শাখার সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা আসম আব্দুর রহিম পাকন, আওয়ামীলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, পৌর আওয়ামীলীগ, কৃষকলীগ, ছাত্রলীগ, আইনজীবী, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, শিক্ষক, শিক্ষার্থী সহ পাবনার সর্বস্তরের জনগণ সোচচার ভূমিকা নিয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) সহ সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরে আবেদন- নিবেদন সহ চেষ্টা চালিয়ে যাচেছন। ইতোমধ্যে বিভিন্ন সময়ে অর্ধশতাধিক শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন, কাফনের কাপড় পড়ে মানববন্ধন, গণসমাবেশ, সেমিনার, লিপলেট বিতরণ, সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে স্মারকলিপি প্রদান অব্যহত রয়েছে। মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগে “ তুরাগ নদী সংক্রান্ত রিট পিটিশন-১৩৯৮৯/২০১৬ এর ৩০/০১/২০১৯ তারিখে প্রদত্ত রায়ের ১৪নং পৃষ্ঠায় সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, বাংলাদেশের সমস্ত নদ নদী সি এস ম্যাপ অনুযায়ী পুনরুজ্জীবিত করতে হবে। হিউম্যান রাইটস এন্ড পিস ফর বাংলাদেশ এবং সুপ্রিম কোর্টের ৪ জন আইনজীবী বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট হাইকোর্ট বিভাগে জনস্বার্থমূলক ৩৫০৩/২০০৯ রীট মোকদ্দমাটি দায়ের করেন। যার রায় প্রদান করেন ২৪ ও ২৫ জুন/২০০৯। রায়ে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু ও শীতলক্ষ্যা নদীসহ দেশের সকল নদ-নদী সি এস ম্যাপ অনুযায়ী পুনরুজ্জীবিত করতে হবে।
ইছামতি নদী উদ্ধার আন্দোলন পাবনার পক্ষ থেকে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) এর কাছে আইনী সহযোগিতা চাওয়া হলে বেলা‘র পক্ষ থেকে পাবনার ঐতিহ্যবাহী ইছামতি নদী সংক্রান্ত মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগে একটি রীট পিটিশন দায়ের করা হয়। যার রীট পিটিশন নং ১০৭/২০২০। ১২ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগ ,পাবনা শহরের মধ্যদিয়ে প্রবাহিত ইছামতি নদী রক্ষায় “ সিএস ম্যাপ অনুযায়ী নদীর সীমানা নির্ধারণ পূর্বক অবৈধ দখলদারদের তালিকা তৈরী করে কেন তাদের উচ্ছেদ করা হবে না। ক্ষতিকর স্থাপনা অপসারণ করে কেন নদীর প্রবাহ বৃদ্ধি করা হবে না এবং কেন নদী দূষণ রোধ করা হবে না তা জানতে রুল জারী করেন। এর আলোকে বেলা’র পক্ষে এডভোকেট সাঈদ আহমেদ কবীর পাবনা জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, বাপাউবো, পাবনার নিবার্হী প্রকৌশলী সহ সংশ্লিষ্ট ১৬ টি দপ্তরে আইনী নোটিশ প্রদান করেন।
ইতোমধ্যে ২৯/৯/২০২১ তারিখে পাবনা সদর উপজেলার পৈলানপুর মৌজার মো. আল মাসুদ রিজভী গং (রীট পিটিশন নং ৬৪/২০২০), শালগাড়ীয়া ইংলিশ রোডের এড. নাজমুল হোসেন শাহিন এর স্ত্রী রাজিয়া সুলতানা রেবা গং (রীট পিটিশন ৪৬/২০২০), পৈলানপুর মৌজার মো. আবুল কালাম আজাদ (রীট পিটিশন নং-১১৬৯/২০২০) সর্বমোট ৪৩ জন বাদীর রীট পিটিশন গত ২৪/৪/২০২২ ইং তারিখ মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগ থেকে খারিজ করে দেওয়া হয়েছে। এতে সুস্পষ্টভাবে প্রতিয়মান হয় যে, পাবনা শহরের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত ইছামতি নদী সি এস ম্যাপ অনুযায়ী পুনরুজ্জীবিত করতে আর কোন বাঁধা নেই। এরপরে বর্তমান জেলা প্রশাসক বিশ^াস রাসেল হোসেন এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তর ইছামতি নদীর দু‘পাড়ের অবৈধ স্থ’াপনা উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু করেন। প্রধান বিবেচ্য বিষয় সিএস ম্যাপ বাউন্ডারীর মধ্যে যে, সম্পত্তি থাকবে তা ইছামতি নদীর সম্পত্তি। এ বিষয়ে মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট ৩০ অ্যাপিল্যান্ট ডিভিশন পৃষ্টা-৮১, তে বলেছেন যে, সিএস রেকর্ডের প্রতিটি মন্তব্য আবশ্যকীয় আইন সঙ্গত। বর্তমানে মহামান্য হাইকোর্ট সুস্পষ্ট ভাবে বলেছেন এস এ এবং আর এস রেকর্ড ছাড়া কোন সত্ত্ব অর্জিত হবেনা তা ৬৮ ডিএলআর এর ৩৭ পাতায় লিপিবদ্ধ রয়েছে। মুল বাউন্ডারী অরজিনাল সিএস রেকর্ড ১৯১৭ সালে শুরু হয়ে ১৯২২ সালে ফাইনাল গেজেট নোটিফিকেশন হয়েছে। এ কারণে কোন ব্যক্তি প্রশাসনকে ভুল বুঝাইয়া প্রশাসনের অসৎ কর্মকর্তা / কর্মচারীর দিয়ে অবৈধভাবে , বে আইনী কাগজপত্র তৈরী করে এস এ এবং আর এস রেকর্ড তৈরী করেন। তদমুলে পৌরসভার প্লান পাশ করেন। নিজ নামে হোল্ডিং ট্যাক্স খোলেন। এ সকল প্রসিডিং কমপ্লিটলি ভোগাস, তা আইন সিদ্ধ নয়। তা মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের সিদ্ধান্ত বিরোধী। সংবিধানে মহামান্য হাইকোর্ট এবং মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের পৃথক পৃথক পাওয়ার যা বাংলাদেশের সমস্ত প্রশাসন মানিতে বাধ্য। সারা বাংলাদেশের নদী অবৈধ দখল থেকে উদ্ধারের জন্য মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের রিট পিটিশন ৩৫০৩/২০০৯ (জনস্বার্থ), ১৩৯৮৯/২০১৬ (তুরাগ নদী সহ দেশের সকল নদ নদী) এবং ১০৭/ ২০২০ (ইছামতি নদী সংক্রান্ত বেলার রীট) মোকদ্দমার রায়ের আলোকে সিএস ম্যাপ ধরে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড পাবনা ইছামতি নদীর দু‘পাড়ের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু করে। ইতোমধ্যে ৮০ থেকে ৯০ ভাগ উচ্ছেদ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ইহাতে পাবনার মানুষের মনে পরিবেশ দূষণ থেকে মুক্তি ও ইছামতি নদী স্বাভাবিক গতি ফিরে পাবে বলে আসার সঞ্চার হয়। এদিকে জনৈক মোছা. আলফা খাতুন (ওসি-২৯০/২২),শাহ আলম দিং (ওসি-২৮৪/২২) এবং রওশন আরা খান (ওসি-৩০৫/২২) সহ কতিপয় ব্যক্তি পাবনার বিজ্ঞ সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে ১) পাবনার জেলা প্রশাসক, ২) অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব), ৩) বাপাউবোর, পাবনার নির্বাহী প্রকৌশলী, ৪) বাপাউবোর সহকারী পরিচালক, ৫) জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার, পাবনা এবং ৬) সহকারী কমিশনার ( ভূমি) এবং ৭) এস এম মাহবুব আলম, সভাপতি, ইছামতি নদী উদ্ধার আন্দোলন, পাবনা মোট ৭ জনকে বিবাদী করে মোকদ্দমা দায়ের করেছেন। এছাড়াও পাবনার বিজ্ঞ সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে বেশ কয়েকটি মামলা মোকদ্দমায় ইনজাংশন/ স্থিতিঅবস্থা প্রদান করেছেন। আদেশ ও মোকদ্দমার ফলে সরকারের নদী উদ্ধারের চলমান কাজ এবং ঠিকাদার কর্তৃক নদী খনন কাজ এবং উচ্ছেদ কার্যক্রম বন্ধ করেছে সংশ্লিষ্ট বাপাউবো পাবনা। এতে সরকারের কোটি কোটি টাকা অপচয় ও নদী উদ্ধার কাজ বাঁধাগ্রস্ত করছে।


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *