ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি : পাবনার ঈশ্বরদীতে মাদ্রাসার রেলিংয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় এক ছাত্রকে উদ্ধার করেছে পথচারী। সেই আত্মহত্যা চেষ্টার ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে মাদ্রসা কর্তৃপক্ষ।
(১৪) এপ্রিল বৃহস্পতিবার সকাল আনুমানিক সাড়ে সাত ঘটিকার সময় ঈশ্বরদী উপজেলার পৌর এলাকার নিউকলোনি রওজাতুল কুরআন রহমানিয়া মাদ্রসায় এ ঘটনা ঘটেছে।
সরিজমিনে গিয়ে জানাযায়, সাত মাস আগে দ্বীনের শিক্ষা নিতে অত্র মাদ্রাসায় মক্তব ১ম শ্রেণীতে ভর্তি হয়েছিলো নাটোর জেলার লালপুর থানাধীন আব্দুলপুর পুকুরপাড়া এলাকার মো. জিন্নাত আলী সরকারের পুত্র মো. আল আমিন (১১)। মাসিক ২ হাজার টাকা খরচ প্রদানের বিনিময়ে আবাসিক শাখায় বেশ ভালোই লেখা পড়া চলছিল আল আমিনের। অত্যন্ত মেধাবী এবং নম্র স্বভাবের ছেলে আল আমিন বর্তমানে অত্র প্রতিষ্ঠানের মক্তব দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্র। প্রতিদিনের মত রাতে সেহেরী খাওয়ার পর সবার সাথে ঘুমিয়ে পড়েছিল আল আমিন।
কিন্তু সকালে কোন এক সময় আল আমিনের ঘুম ভেঙ্গে গেলে সে তার বিছানাপত্র বাঁধা পাটের তৈরী দঁড়ি দিয়ে মাদ্রাসার দোতলার রেলিংয়ের সাথে বেঁধে গলায় ফাঁস লাগিয়ে ঝুলে পড়েন নিচে। এসময় রুপপুর পারমানবিকের একজন কর্মী কাজে যাওয়ার সময় শিশু আল আমিন কে দোতলার রেলিংয়ের সাথে ঝুলতে দেখে চিৎকার দিলে মূহূর্তেই সেখানে প্রতিবেশীরা ভীড় জমায় এবং পথচারী শ্রমিকসহ আরও তিনজন মিলে মাদ্রাসার সীমানা প্রাচীরের উর দাঁড়িয়ে ঝুলন্ত শিশুটিকে জাপটে ধরে মাদ্রাসা সংলগ্ন মুদি দোকান থেকে দোকানী একটি চাকু ও ব্লেড দিয়ে ফাঁসের দঁড়ি কেটে শিশুকে নিচে নামায় প্রতিবেশীরা। এসময় মাদ্রসার শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা সবাই ঘুমিয়ে ছিলো বলে জানান উপস্থিত সকলে।
উদ্ধার করে শিশুটিকে মাথায় পানি দেওয়ার সময় উপস্থিত সকলের চিৎকার চেচাচেচিতে ঘুম ভাঙ্গে মাদ্রসার শিক্ষকদের বলে জানান, ঘটনার প্রদক্ষদর্শী মুদি দোকানী রোকসানা বেগম। এ সময় শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রদের উপর অত্যাচার নিপিড়নের কথাও বলেন একাধিক এলাকাবাসী।
জানতে চাইলে মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক মাওলানা গোলাম মোস্তফা বলেন, আমরা বাচ্চাদের কোন প্রকার অত্যাচার করিনা। আল আমিনের পারিবারিক কলহের কারণে সে গলায় দঁড়ি দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে। আল আমিনের পিতা গত তিন মাস কোন খবর নেয় না বলেও তিনি জানান। তিনি বলেন, সেটার কারনেও সে এমনটা করতে পারে।
তিনি আরও বলেন, আল আমিন কে সুস্থ হওয়ার পর তার আত্মহত্যা কারণ জানতে চাওয়ায় সে বলেছে, আমি আমার মাকে (মৃত মা) স্বপ্নে দেখেছি। মা আমাকে তার কাছে ডাকছে তাই আমি আত্মহত্যা করতে চেয়েছি।
আল আমিন কে উদ্ধার করে প্রসাশন বা হাসপাতালে নেয়া হয়নি কেন ? জানতে চাইলে প্রশ্নের কোন সদুত্তোর দেননি মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক মওলানা গোলাম মোস্তফা। এ সময় উপস্থিত এলাকাবাসী মাদ্রাসার হুজুরদের আচরনেরও নানা সমালোচনা করেন।
ছেলের সঙ্গে টানা তিন মাস যোগাযোগ না করার কারণ জানতে চাইলে আল আমিনের পিতা মো. জিন্নাত আলী সরকার জানান, আমি নর্থবেঙ্গল সুগার মিলে চাকরি করি এবং আমার জমিতে চৈতালী থাকার কারনে মাস খানেক আমি ছেলেকে দেখতে যেতে পারি নি । কিন্তু আমি প্রতিদিনই সকাল ১০ টা থেকে সাড়ে দশটা নাগাদ হুজুরের মোবাইলে ফোন করি কিন্তু হুজুর ইদানিং আমার ফোন ধরে না। তাই ছেলের সাথে কথা হয়নি কয়েক দিন।
তিনি আরও বলেন, আমি যেতে না পারলেও আমার ভাতিজাকে দিয়ে আমার ছেলেকে তার মাসিক খরচের টাকা পাঠানোসহ তার মাধ্যমে বাড়ীতেও নিয়ে গেছি বেড়িয়ে আসার জন্য। সুতরাং আমি যোগাযোগ রাখিনা এমন অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট।
উল্লেখ্য, ১৯৮৫ সাল থেকে দ্বিনের শিক্ষা দিয়ে আসছে অত্র মাদ্রাসাটি। আবাসিক অনাবাসিক সব মিলিয়ে প্রায় ১৬০ জন শিক্ষার্থী শিক্ষা গ্রহণ করছে এখানে। এই শিক্ষার্থীদের জন্য মোট ১০ জন শিক্ষকের ব্যবস্থা রেখেছে।