তুহিন হোসেন (ঈশ্বরদী) : দেশের উত্তরাঞ্চলের অন্যতম বৃহৎ চালের মোকাম ঈশ্বরদীতে অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে চালের দাম। কয়েক দিনের ব্যবধানে মোটা ও চিকন চালের দাম বস্তা প্রতি (৫০ কেজির বস্তা) ২০০ থেকে ২৫০ টাকা ও খুচরা বাজারে প্রতি কেজি চাল ৫ থেকে ৬ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়েছে বিক্রেতারা। এভাবে দাম বেড়ে যাওয়ায় ক্রেতাদের মধ্যে নাভিশ্বাস উঠেছে।
তবে চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়ে দেওয়ায় মোকামের হাটবাজারেও ধানের দাম বেড়েছে। একই সঙ্গে মোকাম থেকে ধান পরিবহনের খরচ বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। একারণে চালের দাম বাড়ছে। ব্যবসায়ীদের ধারণা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে চালের দাম আরও বাড়তে পারে।
ব্যবসায়ীরা আরও জানান, সোমবার থেকে ঈশ্বরদীর জয়নগর মোকামের পাইকারী বাজারে প্রকারভেদে প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) চাল ২০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। সেদিন ঈশ্বরদীর জয়নগর মোকামে মিনিকেট চালের দাম ছিল ৩ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত বস্তা। শুক্রবার সকালে তা বেড়ে বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার ৫০০ টাকায়। একইভাবে বাসমতি চাল ৩৪’শ টাকা থেকে বেড়ে ৩৬’শ, বি-আর ২৮ চাল ২৮’শ থেকে ৩৩’শ টাকা, বি-আর-২৯ চাল ২৫’শ ৫০ থেকে ২৮’শ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। কোথায় কোথায় আরও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে চাল। একইভাবে খুচরা বাজারে প্রতিকেজি চালের দাম ৪ থেকে ৬ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এরমধ্যে খুচরা বাজারে প্রতিকেজি মিনিকেট চাল ৬০ থেকে ৬৪, বাসমতি ৭২ থেকে ৭৪, বিআর-২৮ চাল ৫৩ থেকে ৫৭, বিআর-২৯ চাল ৫০ থেকে ৫২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শুক্রবার সকালে ঈশ্বরদী বাজারের কয়েকটি খুচরা দোকানে খোঁজ নিয়ে এ তথ্য জানা গেছে।
ঈশ্বরদীর পুরাতন বাজারের ব্যবসায়ী মসলেম উদ্দিন বলেন, শোনা যাচ্ছে মোকামে নাকি ধানও পাওয়া যাচ্ছে না। এরমধ্যে আবার তেলের দাম বেড়েছে। সবমিলিয়ে বাজারে চালের দাম বাড়ছেই। চারদিনে প্রতি কেজি চাল ৪-৫ টাকা বেড়েছে। তিনি আরও বলেন, বেচাকেনাতেও তেমন লাভ নেই। এখন চালের দোকান খুলে রাখার চাইতে বন্ধ রাখা ভালো। এতে লোকসান কম হবে।
ব্যবসায়ী পরশ কুমার বলেন, প্রতিদিনই চালের দাম বাড়ছে। দেশে ধানচালের কোনো সংকট নেই। এক শ্রেণির মুনাফালোভী ও মজুতদার ধানচাল মজুত করে রেখে কৃত্রিম সংকট তৈরি করছে। তাদের কারণে চালের দাম বেড়েছে।
উপজেলা চাউল-কল মালিক গ্রুপের সভাপতি জুলমত হায়দার বলেন, ঈশ্বরদীর মোকামে বেশ কয়েকদিন ধরে চালের দাম বেড়েই চলছে। মোকামের হাট-বাজারে প্রয়োজনের তুলনায় কম পাওয়া যাচ্ছে। ধানের দামও বেশি। এ ছাড়া তেলের দাম বাড়ায় মিলের উৎপাদন ও পরিবহণ খরচ বেড়েছে। ফলে পাইকারী বাজারেও চালের দাম বাড়ছে।
জানা গেছে, ঈশ্বরদী উত্তরাঞ্চলের অন্যতম বৃহৎ চালের মোকাম। এখানে বর্তমানে চাতাল মিলসহ চার শতাধিক চালকল রয়েছে। এরমধ্যে সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ চালমিলের সংখ্যা ৩৩০টি। অটোরাইচ মিল রয়েছে ১৭টি। প্রতিটি চাতাল ও অটোরাইচ মিলে প্রতিদিন ৩ থেকে ৭ মেট্রিক টন চাল উৎপাদন হয়। পাবনা জেলার কয়েকটি থানাসহ দেশের উত্তরাঞ্চলের রংপুর, দিনাজপুর, রাজশাহী, বগুড়া, নাটোর, গাইবান্দা, নওগাঁ, জয়পুরহাট, দক্ষিণাঞ্চলের মাদারীপুর, ভোলা, পটুয়াখালী এবং পূর্বাঞ্চলের হবিগঞ্জের বিভিন্ন মোকাম থেকে ব্যবসায়ীরা ধান কিনে ঈশ্বরদীর মিল চাতালে এনে চাল উৎপাদন করে থাকে। এরপর উৎপাদিত চাল রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় পাইকারীভাবে বিক্রি করা হয়।