মুক্ত চেতনা ডেস্ক : একুশে পদকপ্রাপ্ত, ভাষাসৈনিক, সাবেক প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য (১৯৭০-১৯৭৩), বাংলাদেশের সংবিধানের অন্যতম রচয়িতা ও পাবনা আইনজীবী সমিতির একাধিকবারের নির্বাচিত সভাপতি (১৯৭৫, ১৯৮৬, ১৯৮৭ ও ১৯৮৮), তৎকালীন স্পেশাল মিলিটারী আদালত-রাজশাহী বিভাগের পাবলিক প্রসিকিউটর (১৯৬৮-৬৯), পাবনা জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাড. এএসএম গোলাম হাসনায়েন মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
পারিবারিক সুত্রে জানা যায়, বেশ কিছুদিন যাবৎ তিনি বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন। শনিবার (৪ ডিসেম্বর) ভোরে পাবনা শহরের পৌর এলাকার কাচারী পাড়ায় নিজ বাড়িতে তিনি মারা যান। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯১ বছর। তিনি স্ত্রী, ২ ছেলে, ২ মেয়ে সহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
শনিবার বিকেলে পাবনা টেকনিকেল স্কুল এন্ড কলেজ মাঠে সদরের নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিনা আক্তার রেইনা উপস্থিতিতে তাঁকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। এরপর ঐ মাঠেই তাঁর জানাজা নামাজ শেষে পাবনা সদর গোরস্থানে দাফন করা হয়।
জানাজায় অংশ গ্রহন করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান বিশ্বাস এমপি, এ্যাড. শামসুল হক টুকু এমপি, পাবনা জেলা পরিষদ চেয়ারমম্যান রেজাউল রহিম লাল, সাবেক এমপি শফিকুল ইসলাম, জেলা ও দায়রা জজ আসাদুজ্জামান, জেলা প্রশাসক বিশ্বাস রাসেল হোসেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আ.স.ম আব্দুর রহিম পাকন, বীর মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান হাবিব, পাবনা পৌর মেয়র শরীফ উদ্দিন প্রধান, জেলা জজ গোলাম কিবরিয়া, আওয়মীলীগ নেতা আব্দুল হামিদ মাষ্টার, বেলায়েত আলী বিল্লু, আব্দুল আহাদ বাবু, মনির উদ্দিন মান্না, আব্দুল হান্নান, কামিল হোসেন, শাহ আলম, ইদ্রিস বিশ্বাস, শাজাহান মামুন, বেড়া পৌর মেয়র আসিফ শামস রঞ্জন, যুবলীগ আহবায়ক আলী মতুর্জ বিশ্বাস সনি প্রমূখ।
গোলাম হাসনায়েন বৃহত্তর পাবনার উল্লাপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। আইন বিষয়ে লেখাপড়া শেষ করে তিনি পাবনা জেলা জজ আদালতে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী হিসেবে কাজ করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর গোলাম হাসনায়েন আজীবন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। ভাষা আন্দোলনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ১৯৭০ সালে জাতীয় নির্বাচনে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদে উল্লাপাড়া আসন থেকে সদস্য (এমসিএ) নির্বাচিত হন।
তিনি ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক হিসেবে মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করা, প্রশিক্ষণ, অস্ত্র সংগ্রহসহ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধের পরে ১৯৭২ সালে দেশের প্রথম সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সদস্য ছিলেন তিনি। পাবনা জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতিসহ আজীবন পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে দায়িত্ব পালন করেছেন। মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য সরকার তাকে ২০২১ সালের একুশে পদক প্রদান করে।
অ্যাভোকেট গোলাম হাসনায়েনের মৃত্যুতে পাবনার সংসদ সদস্য গণ, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, পাবনা পৌর মেয়র, জেলা আওয়ালীগ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম-মুক্তিযুদ্ধ’৭১, আইনজীবী সমিতি, পাবনা প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের পক্ষ থেকে গভীর শোক প্রকাশ করে শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।