করতোয়া নদী রক্ষার দাবিতে বগুড়ায় মানববন্ধন

শেয়ার করুন

মুক্ত চেতনা ডেস্ক : দখল, দূষণ, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন এবং প্রবাহহীনতার কারণে বগুড়া তথা উত্তর জনপদের ঐতিহ্যবাহী নদী করতোয়া বর্তমানে মৃতপ্রায় নদীতে পরিণত হয়েছে। করতোয়া নদীকে দখল ও দূষণমুক্ত করাসহ নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে মহামান্য উচ্চ আদালতের আদেশ বাস্তবায়নের দাবিতে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি(বেলা), বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) বগুড়া শাখা এবং বেলা নেটওয়ার্ক এর যৌথ উদ্যোগে শনিবার (১১ ডিসেম্বর) ২০২১ খ্রি. বেলা ১১টায় এক মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ হতে শুরু করে বগুড়ার শিবগঞ্জের গুজিয়া, মহাস্থান ব্রিজ, মাটিডালী, কালিবালা লোহার ব্রিজ, সাতমাথা, এসপি ব্রিজ, বেজোড়া ব্রিজ, শাহজাহানপুরের মাঝিরা, শেরপুরের গাড়িদহ এবং শেরপুর পর্যন্ত করতোয়া নদীর ১২৩ কিলোমিটার ব্যাপী এই মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়।

নদীটি রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার মিলনপুর ইউনিয়নে দেওনাই-চাড়াল কাটা-যমুনেশ্বরী নদী থেকে উৎপন্ন হয়ে বগুড়া জেলার শেরপুর উপজেলার খানপুর ইউনিয়নে বাঙ্গালী নদীতে পতিত হয়েছে। ১২৩ কিলোমিটার এই নদীর গড় প্রস্থ ছিল প্রায় ১৪৪ মিটার। নব্বই এর দশকে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কাঁটাখালি সংলগ্ন চকরহিমপুর নামক স্থানে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক ৩ ভেল্ট ক্ষমতা সম্পন্ন ১টি ¯øুইসগেট নির্মাণ করা হয়। এই ¯øুইসগেট নির্মাণ করে করতোয়ার প্রবাহকে নিয়ন্ত্রণ করার কারণে গাইবান্ধার পরবর্তী এলাকায় নদীটি মৃত নদীতে পরিণত হয়।

এছাড়াও তীরবর্তী লোকালয়, নগর ও শহরের বর্জ্য নদীতে ফেলাসহ দখল, দূষণ এবং অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে নদীটি তার স্বাভাতিক বৈশিষ্ট্য হারিয়েছে। ধ্বংস হচ্ছে নদীতে বসবাসকারী প্রাণি ও উদ্ভিদ। জীবিকা হারিয়েছে অসংখ্য জেলে, মাঝিসহ করতোয়ার সাথে সংশ্লিষ্ট নানা শ্রেণী পেশার মানুষ।

করতোয়া নদীকে বাঁচানোর দাবিতে ২০১৫ খ্রি. বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) জনস্বার্থে একটি রিট পিটিশন দায়ের করে। মহামান্য আদালত করতোয়া নদীর পানি প্রবাহ এলাকা ও সীমানা নির্ধারণপূর্বক গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের খুলশী ¯øুইসগেট উন্মুক্তকরণসহ অন্যান্য অবৈধ দখল উচ্ছেদ করে নদীটির পানি প্রবাহ আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে এবং সকল উৎস্য থেকে নদীতে বর্জ্য না ফেলতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে বিবাদীদের প্রতি রুল জারি করেন। একই সাথে নদীতে সব ধরণের বর্জ্য ফেলার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বগুড়া পৌরসভাকে নির্দেশ দেন আদালত। গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের খুলশীতে করতোয়ার উৎসমুখে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক নির্মিত ¯øুইসগেট উন্মুক্ত করা এবং এই ¯øুইসগেটের পরিবেশগত প্রভাব নিরূপণপূর্বক আদালতে একটি প্রতিবেদন দাখিল করতে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে নির্দেশ দেন আদালত। আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নের বিষয়টি তদারকির জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়কে আদালত নির্দেশ প্রদান করেন।

কিন্তু উদ্বেগের বিষয় হলো, দীর্ঘ প্রায় ৭ বছরেও মহামান্য আদালতের আদেশ বাস্তবায়নে তেমন কোনো কার্যক্রম পরিলক্ষিত হয়নি। তাই করতোয়া নদী রক্ষায় আদালতের আদেশ বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে এই মানববন্ধন কর্মসূচির পালন করা হয়। বগুড়া সাতমাথায় মানববন্ধনে উপস্থিত হয়ে একাত্মতা প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন বগুড়া জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক রাগিবুল হাসান রিপু, বগুড়া পৌর মেয়র রেজাউল করিম বাদশা, বেন’র প্রতিষ্ঠাতা সদস্য কামরুল আহসান খান, তিস্তা নদী রক্ষা কমিটির সভাপতি ফরিদুল ইসলাম ফরিদ, বগুড়া জেলা মহিলা আওয়ামীরীগের সভাপতি হেফাজত আরা মিরা।

আরও বক্তব্য দেন বাপা বগুড়া শাখার সভাপতি আনোয়ার করিম দুলাল, বেলা’র আঞ্চলিক সমন্বয়কারী তন্ময় কুমার সান্যাল, বাপ বগুড়া শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. জিয়াউর রহমান, বগুড়া সদর উপজেলার মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান ডালিয়া নাসরিন রিক্তা, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান হায়দার আলী, এ্যাড. মোজাম্মেল হক, বীট’র অধ্যক্ষ শাহাবুদ্দিন সৈকত, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট বগুড়া শাখার সভাপতি তৌফিক হাসান ময়না, সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ সিদ্দিকি, নিভা সরকার পূর্ণিমা, সৈয়দ ফজলে রাব্বি ডলার, নারী উদ্যোক্তা জাকিয়া সুলতানা, এম ফজলুল হক প্রমুখ।
মানববন্ধন কর্মসূচিতে বিভিন্ন সংগঠন, ছাত্র, শিক্ষক, সাংবাদিক, আইনজীবী, অন্যান্য পেশাজীবী এবং সাধারণ মানুষের স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল।


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *