মো. ফজলুল হক : পাবনায় করোনার উপসর্গ নিয়ে আরও তিন জনের মৃত্যু হয় বলে জানা গেছে। এদের মধ্যে পাবনা সদর হাসপাতালে দুইজন ও ঈশ্বরদীতে একজন। সরকারি হিসাব অনুযায়ী করোনা পজেটিভ হয়ে এ পর্যন্ত মৃত্যু বরণ করছেন ২৫ জন। আর জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে উপসর্গ নিয়ে প্রতিদিনি মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে। তবে উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু বরণ কারীদের কোন হিসাব রাখা হচ্ছেনা সরকারি ভাবে। এদিকে এখনো করেনা রোগীদের জন্য আলাদা ভাবে বরাদ্দকৃত কোন খাদ্য সরবরাহ করা হচ্ছেনা। হাসপাতাল থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে জানা গেছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে এখনো কোন বাজেট বা অনুমোদন আসেনি করেনা রোগিদের জন্য। তাই সাধারন রোগীদের জন্য যে খাদ্য সরবরাহ করা হয় সেটিই করোনা ওয়ার্ডে তাদের দেয়া হচ্ছে। সাধারনত ১২৫ টাকার মধ্যে এই খাদ্য সরবরাহ করা হয়। আর করোনা রোগীদের জন্য সরকারি ভাবে বিশেষ বরাদ্দ জন প্রতি ৩ শ টাকা করে। সেই বরাদ্দ এখনো অনুমোদন হয়নি বলে জানিয়েছেন হাসাপাতাল কর্তৃপক্ষ। গত চব্বিশ ঘন্টায় পাবনা জেনালেল হাসপাতালে করোনা উপসর্গ নিয়ে একজন পুরুষ ও একজন নারীর মৃত্যু হয়। তাদের মধ্যে পাবনা পৌরসভার নয়নামতি এলাকার নিজাম উদ্দিনের ছেলে আরজু উদ্দিন আরজু (৪৫) ও সদরের তারাবাড়িয়া দারেন হোসেনের স্ত্রী রাশিদা খাতুন (৬০)। এদিকে ঈশ্বরদী উপজেলাতে আরো একজনের মৃত্যু সংবাদ পাওয়া গেছে। তবে তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে। তার নাম পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
পাবনা জেনারেল হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সহকারী পরিচালক ও কোভিট-১৯ এর প্রধান চিকিৎসক ডা. সালেহ মুহাম্মদ আলী এ বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, গত চব্বিশ ঘন্টায় পাবনা জেনারেল হাসপাতালে করোনা উপসর্গ নিয়ে দুইজনের মৃত্যু হয়। গতকাল উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল তিনজন। এদের মধ্যে সকলের করোনা পরীক্ষার রেজাল্ট নেগেটিভ এসেছে। বর্তমানে সদর হাসপাতালে ৮৩ জন রোগী উপসর্গ নিয়ে করেনা ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন, এদের মধ্যে পজেটিভ রোগী ১৯ জন। এখন পর্যন্ত পাবনা সদর হাসপাতালে করোনার উপসর্গ নিয়ে রোগীর মৃত্যু হয়েছে ১৮ জনের। বর্তমানে অক্সিজেন সল্পতা থাকলেও অক্সিজেনের কারণে কোন রোগীর মৃত্যু হয়নি। হাসপাতালে ১০০ রোগীর শয্যার ব্যবস্থা রয়েছে সেটি এখনো অতিক্রম করেনি। আমাদের হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য এখনো আলাদা বরাদ্দ আসেনি। সাধারন রোগীদের জন্য যে খাবার সরবরাহ করা হয় সেটিই করোনা ওয়ার্ডে তাদের দেয়া হচ্ছে। ইতো মধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চাহিদাপত্র দেয়া হয়েছে। চাহিদা অনুসারে বরাদ্দ আসলে টিকাদারের মাধ্যমে করোনা রোগীদের জন্য বরাদ্দকৃত খাদ্য সরবরাহ করা হবে।
করোনা পরিস্থিতি নিয়ে পাবনার সিভিল সার্জন ডা. মনিসর চৌধুরী বলেন, পাবনার সব চাইতে বেশি করোনা আক্রান্ত উপজেলা ঈশ্বরদী। সেখানে পরীক্ষা যেমন বেশি হচ্ছে আক্রান্তের সংখ্যাও তেমনি অনেক বেশি। এর পরেই দ্বিতীয় স্থানে পাবনা সদর রয়েছে। এছাড়া অন্যান্য উপজেলাতে আক্রান্তের হার কিছুটা কম। এই সংক্রমন বর্তমানে গ্রাম অঞ্চল গুলোতেও ছড়িয়ে পরেছে। প্রতিদিনি জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে উপসর্গ নিয়ে রোগী ভর্তি হচ্ছেন। আবার অনেকই নিজ বাড়িতে চিকিৎসা গ্রহণ করছেন। গত চব্বিশ ঘন্টায় পাবনাতে তিনজন উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে একজন করোনা পজেটিভ পাওয়া গেছে। তবে সব মিলিয়ে জেলার সকল হাসপাতালে অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহ রযেছে। অনেক সেচ্ছাসেবি ও রাজনৈতিক কর্মীরা বিনামূল্যে অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহ করছেন। আমাদের কাছেও রিজার্ভ রয়েছে সিলিন্ডার। বর্তামনে অক্সিজেন সংকট নেই পাবনায়। এদিকে লকডাউনের ৬ষ্ঠ দিনে শহরে মানুষের ভীড় পরিলক্ষিত করা গেছে তুলনামূলকভাবে। শহরের বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্ট বসিয়ে বিভিন্ন যানবহন ও সাধারন মানুষকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তবে নানা অজুহাতে রাস্তায় মানুষ বের হচ্ছে সাধারণ মানুষ। গ্রাম অঞ্চলেও সন্ধার পর পাড়া মহল্লায় চায়ের দোকানে চলে আড্ডা। তাই কঠোর লকডাউন অনেক টাই ঢিলেঢালা ভাবে হচ্ছে। ভ্যান, রিক্সা, অটো, সিএনজি, প্রাইভেট গাড়ি, হোন্ডা হর হামেসাই চলছে সড়কে।