চাটমোহর (পাবনা) প্রতিনিধি : জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রভাবে অল্প জমিতে অধিক ফসল উৎপাদনে আমাদের আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীল হতে হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার কৃষককে উদ্বুদ্ধ করতে ব্যাপক ভাবে প্রণোদনা দিচ্ছে, ভর্তুকি দিয়ে কৃষকের হাতে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি পৌঁছে দিচ্ছে। এসব প্রযুক্তি সম্পর্কে অধিক সংখ্যক কৃষককে ধারণা দিতে, তথ্য আদান প্রদান করতে লাখ লাখ টাকা খরচ করে মেলার আয়োজন করছে এমন সময় চাটমোহর উপজেলা কৃষি অফিসের দায়িত্বহীনতার কারণে মেলার উদ্দেশ্য সম্পূর্ণ রূপে ব্যহত হলো।
কৃষিই সমৃদ্ধি এ শ্লোগানে শনিবার (১৯ ফেব্রæয়ারী) পাবনার চাটমোহরে কৃষি প্রযুক্তি মেলা-২০২২ শুরু হয়। সরকারের বিপুল পরিমান টাকা খরচ করে এ মেলার আয়োজন হলেও উপজেলার বেশির ভাগ কৃষক এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না। ফলে এ মেলা থেকে কৃষক কৃষি প্রযুক্তি সম্পর্কে কিছুই জানতে পারলোনা। মেলায় নেই কোন নতুনত্ব, নেই কৃষি সম্প্রসারণের কোন উদ্যোগ। মেলা উপলক্ষ্যে কোন প্রচার প্রচারণা না করায় কৃষক এ মেলা সম্পর্কে জানতেই পারেনি। কৃষকের উপস্থিতি ও সংশ্লিষ্টতা না থাকলেও কাগজে কলমে হয়ে গেল এ মেলা। গবেষণালব্ধ জ্ঞান ও কলাকৌশলের তথ্য আদান প্রদানের মাধ্যমে কৃষককে উদ্বুদ্ধকরণ এ মেলার লক্ষ্য হলেও প্রচার প্রচারণার অভাবে কৃষক এ মেলা থেকে কোন সুফল পেলেন না।
চাটমোহরের কৃষি প্রযুক্তি মেলা সম্পর্কে কৃষক কিছু না জানায় রীতি মতো ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে। এ নিয়ে সোস্যাল মিডিয়ায় বয়ে যাচ্ছে নিন্দার ঝড়। চাটমোহরের একটি জনপ্রিয় ফেসবুক গ্রæপ “চেতনায় চাটমোহর” এ মেলা সম্পর্কে একটি পোষ্ট এসেছে। যেখানে লেখা রয়েছে, “চাটমোহর উপজেলা পরিষদ চত্ত¡রে কৃষিমেলা শুরু হয়েছে। অবাক হচ্ছি মেলার গেট দেখে। কৃষি মেলায় যেখানে মানুষকে কৃষির প্রতি উদ্বুদ্ধ করার কথা, সেখানে প্রাকৃতিক গাছপালার পরিবর্তে ব্যবহার করা হয়েছে আর্টিফিশিয়াল ফুল,পাতা। এটা কেমন কথা? কত বাহারী ফুল, ফলের ন্যাচারাল গাছ আমাদের হাতের নাগালেই থাকে। একটু আন্তরিক হলেই কিন্তু প্রাকৃতিক গাছ গাছালি দিয়ে দৃষ্টি নন্দন গেট করা যায়।
শনিবার ফেসবুকে এ পোস্ট দেওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিন্দার ঝড় ওঠে। এক মন্তব্যে ইয়াছিন আলী লিখেন, আমরা চাটমোহরবাসী সদাশয় কর্তৃপক্ষকে জানাতেই ব্যর্থ হয়েছি যে, চাটমোহরে কৃষি মুখী বা বৃক্ষপ্রেমী বা নার্সারিয়ান মানুষ আছে। কৃষি মেলার আয়োজন নিঃসন্দেহে ভাল আয়োজন কিন্তু সেটা সফল করতে প্রান্তিক কৃষকের অংশ গ্রহন জরুরী।
বকুল রহমান লিখেছেন এই মেলার উদ্বোধন এর আগে কোন প্রচার প্রচারণা করা হয়েছে বলে আমার জানা নেই। চেতনায় চাটমোহরের মাধ্যমে জানতে পারলাম যে চাটমোহরে কৃষি মেলা শুরু হয়েছে। প্রশাসনের লোকজন কেন এমন প্রচার বিমুখ তা ঠিক বোধগম্য হলো না। এছাড়া আরো অনেকে এ মেলা সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন।
এ ব্যাপারে চাটমোহর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ.এ মাসুম বিল্লাহ জানান, উপজেলা কৃষি অফিস থেকে মাইকিং করে প্রচারণা না করা হলেও গ্রামের বিভিন্ন শ্রেণির কৃষক কে জানানো হয়েছে। কৃষক তো আর মেলায় এসে সারাদিন বসে থাকবে না যে তাদেরকে আপনাদের সামনে উপস্থাপন করতে হবে। এ বিষয়ে আরো কিছু জানতে চাইলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন আপনি যা খুশি লিখেন সমস্যা নেই বলে ফোন লাইন কেটে দেন।
চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সৈকত ইসলাম জানান, করোনা পরিস্থিতির কারনে অধিক লোক সমাগমে বিধি নিষেধ থাকায় হয়তো ব্যাপক ভাবে প্রচারণা করা হয়নি। তবে প্রকৃত কৃষকদের অবহিত করা হয়েছিল।
পাবনার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মিজানুর রহমান জানান, কৃষককে আধুনিক প্রযুক্তি সম্পর্কে অবহিত ও উদ্বুদ্ধ করণ এ মেলার লক্ষ্য। চাটমোহরের বিষয়টি আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি।