নিজস্ব প্রতিনিধি : বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)’র উদ্যোগে রাজশাহীতে অস্তিত্ব সংকটে নগরীর পুকুর পুনরুদ্ধারে করণীয়’ শীর্ষক এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বুধবার (০২ নভেম্বর) রাজশাহী নগরীর একটি রেস্টুরেন্টে সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) রাজশাহী জেলার সভাপতি এবং রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. দীপকেন্দ্র নাথ দাস এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল। তিনি বলেন যেকোন অবকাঠামোগত উন্নয়ন করতে গেলে পরিবেশের ক্ষতি হবেই। কিন্তু উন্নয়ন যেন বাধাগ্রস্থ না হয় সেজন্য পরিবেশগত প্রভাব নিরুপণ করতে হবে এবং তা প্রশমনের চিন্তাও আমাদের করতে হবে। তাছাড়া কোন ভাবেই উন্নয়ন টেকসই হবে না। রাজশাহী নগরীর পুকুর ভরাট রোধে আমরা কাজ করছি। ‘বেলা’ এবং আপনারা সবাই সংশ্লিষ্টদের প্রতি একটা চাপ তৈরি করলে আগামীতে এই নগরীর পুকুর ভরাট বন্ধে সহায়ক হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের প্রফেসর ড. রেদওয়ানুর রহমান, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের সচিব মো. মশিউর রহমান, পরিবেশ অধিদপ্তর রাজশাহী জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. কবির হোসেন।
আলোচনা সভায় স্লাইড প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বেলা রাজশাহী কার্যালয়ের সমন্বয়কারী তন্ময় কুমার সান্যাল। মূল প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়, রাজশাহী দেশের অতি প্রাচীন এবং উল্লেখযোগ্য একটি বিভাগীয় শহর। রেশম, শিক্ষা এবং চিকিৎসা নগরী হিসাবেও রাজশাহী সুপরিচিত। শুধু তাই নয়, এটি পরিচ্ছন্ন এবং পুকুরের নগরী হিসাবে দেশে বিদেশে এক সময় পরিচিতি ছিল। সেসব পুকুরের পানি নগরবাসী প্রাত্যহিক কাজে ব্যবহার করতেন। নগরীর প্রাণকেন্দ্রের ‘সোনাদীঘি’ পুকুরের পানিও পান করতো বলে জানা যায়।
স্বাধীনতা উত্তর কয়েক হাজার পুকুর ছিল এই নগরীতে। বোয়ালিয়া ভূমি অফিসের ২০১৪ সালের এক তথ্যে দেখা যায়, নগরীতে প্রায় ১ হাজারের মতো পুকুর অবশিষ্ট ছিল। বর্তমানে পুকুরের সংখ্যা ২০০ এর নিচে নেমে গেছে। গত ১৫ বছরে নগরীর অধিকাংশ পুকুরই ভরাট হয়েছে। এখন সেখানে বাণিজ্যিক ভবন, অট্টালিকা বানানো হয়েছে এবং সেই প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে। পত্রিকার তথ্যমতে, বিগত কয়েক দশকে নগরীর প্রায় ৯৭ ভাগ পুকুর/জলাশয় ভরাট করা হয়েছে। অথচ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কার্বণ সংরক্ষণ, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ এবং ভূগর্ভস্থ পানির স্তর রক্ষায় পুকুর/জলাশয়ের অবদান অনস্বীকার্য।
রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ) প্রণিত ‘রাজশাহী মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট প্ল্যাণ (২০০৪-২০২৪)’এ নগরীর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পুকুরকে সংরক্ষণযোগ্য হিসাবে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু পুকুর ভরাট রোধে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো তেমন কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। কোনো অনুমতির তোয়াক্কা না করে কতিপয় ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠান নগরীর পুকুরগলো একের পর এক ভরাট করে চলেছে, দেখার কেউ নাই। নগরীর কোথাও বড় ধরণের অগ্নিকান্ড ঘটলে তা নির্বাপণের জন্য জলাশয় খুঁজে পাওয়া মুশকিল। পুকুর/জলাশয় ভরাট করায় নগরীর পরিবেশ দিন দিন উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। অতি গরম এবং অধিক শীতের কারণে ধীরে ধীরে নগরীর আবহাওয়া এবং স্বাভাবিক পরিবেশের মারাত্মক প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে।
এ সময় শিক্ষক, শিক্ষার্থী, আইনজীবী, সাংবাদিক, নারী উদ্যোক্তা, এনজিওি প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। অংশগ্রহণকারীরা রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন এলাকায় পুকুরসহ সকল ধরণের জলাশয় ভরাটের কার্যক্রম বন্ধকরণ এবং সংরক্ষণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে জোড়ালো দাবি জানান।