জান্নাতের পথ সহজ করতে রাতের নফল ইবাদত ও দোয়াসমূহ

শেয়ার করুন

মহান রাব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টি অর্জনে নফল ইবাদতের গুরুত্ব অনেক বেশি। তন্মধ্যে রাতের তাহাজ্জুদ নামাজ অন্যতম। আল্লাহ তায়ালা তাহাজ্জুদসহ রাতের ইবাদতকারীর জন্য সব সময় রহমতের দুয়ার খুলে রাখেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) তার প্রিয় সাহাবিদের তাহাজ্জুদ নামাজ পড়তে এবং এ নামাজে বিশেষ দোয়া পড়ার তাগিদ দিতেন। হাদিসের বর্ণনায় তা ওঠে এসেছে।

প্রিয় নবী (সা.) এর কাছেও এই নামাজ খুবই পছন্দের ছিল। এটি রাসূলুল্লাহ (সা.) এর আবশ্যক ইবাদত ছিল। আর সাহাবায়ে কেরামগণও প্রিয় নবী রাসূলুল্লাহ (সা.) এর অনুসরণে তাহাজ্জুদসহ রাতের ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল থাকতন। হাদিসের বর্ণনায় তা সুস্পষ্ট। হাদিসে এসেছে-হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বর্ণনা করেন রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সময় কোনো ব্যক্তি (যে কোনো) স্বপ্ন দেখলেই তা রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর খেদমতে বর্ণনা করতেন। (রাবি বলেন) এতে আমার মনে আকাঙ্ক্ষা জাগল যে, আমি কোনো স্বপ্ন দেখলে তা প্রিয় নবী (সা.) এর কাছে বর্ণনা করব।

তখন আমি যুবক ছিলাম। রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সময়ে আমি মসজিদে ঘুমাতাম। আমি স্বপ্নে দেখলাম, যেন দুজন ফেরেশতা আমাকে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। তা (জাহান্নাম) যেন কুপের পাড় বাঁধানোর ন্যায় পাড় বাঁধা। কুপের মধ্যে দুটি খুটি রয়েছে এবং এর মধ্যে রয়েছে এমন কতক লোক, যাদের আমি চিনতে পারলাম। তখন আমি বলতে লাগলাম- ‘আমি জাহান্নাম থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই।’

তিনি (রাবি) বলেন, তখন অন্য একজন ফেরেশতা আমাদের সঙ্গে মিলিত হলো। তিনি আমাকে বললেন, ভয় পেয়ো না। তারপর আমি এ স্বপ্ন (আমার বোন উম্মুল মুমিনীন) হজরত হাফসা (রা.) কাছে বর্ণনা করলাম। এরপর তিনি (হাফসা (রা.)) তা (এ স্বপ্ন) রাসূলুল্লাহ (সা.) এর কাছে বর্ণনা করলেন। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন- আব্দুল্লাহ কতই না ভাল লোক! যদি সে রাত জেগে নামাজ (তাহাজ্জুদ) আদায় করত! এরপর থেকে হজরত আবদুল্লাহ (রা.) রাতে খুব অল্প সময়ই ঘুমাতেন।’

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) র স্বপ্নের কথা শুনে প্রিয় নবী তাকে ভালো লোক হওয়ার ব্যাপারে সত্যয়ন করলেন। আর ইঙ্গিতে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার প্রতি খেয়াল রাখার তাগিদ দিলেন। যার ফলে তিনি আমৃত্যু রাতে খুব অল্প ঘুমাতেন। রাত জেগে (তাহাজ্জুদ) নামাজ আদায় করতেন।’

তাহাজ্জুদে দাঁড়িয়ে বিশ্বনবীর দোয়া

হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন রাতে তাহাজ্জুদের উদ্দেশে দাঁড়াতেন, তখন (এ) দোয়া পড়তেন-

اللَّهُمَّ لَكَ الْحَمْدُ أَنْتَ قَيِّمُ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ وَمَنْ فِيهِنَّ وَلَكَ الْحَمْدُ، لَكَ مُلْكُ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ وَمَنْ فِيهِنَّ، وَلَكَ الْحَمْدُ أَنْتَ نُورُ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ، وَلَكَ الْحَمْدُ أَنْتَ الْحَقُّ، وَوَعْدُكَ الْحَقُّ، وَلِقَاؤُكَ حَقٌّ، وَقَوْلُكَ حَقٌّ، وَالْجَنَّةُ حَقٌّ، وَالنَّارُ حَقٌّ، وَالنَّبِيُّونَ حَقٌّ، وَمُحَمَّدٌ صلى الله عليه وسلم حَقٌّ، وَالسَّاعَةُ حَقٌّ، اللَّهُمَّ لَكَ أَسْلَمْتُ، وَبِكَ آمَنْتُ وَعَلَيْكَ تَوَكَّلْتُ، وَإِلَيْكَ أَنَبْتُ، وَبِكَ خَاصَمْتُ، وَإِلَيْكَ حَاكَمْتُ، فَاغْفِرْ لِي مَا قَدَّمْتُ وَمَا أَخَّرْتُ، وَمَا أَسْرَرْتُ وَمَا أَعْلَنْتُ، أَنْتَ الْمُقَدِّمُ وَأَنْتَ الْمُؤَخِّرُ، لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ ـ أَوْ لاَ إِلَهَ غَيْرُكَ

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা লাকাল হামদু আংতা কায়্যিমুস সামাওয়অতি ওয়াল আরদি ওয়া মান ফিহিন্না ওয়া লাকালহামদু। লাকা মুলকুস সামাওয়অতি ওয়াল আরদি ওয়া মান ফিহিন্না। ওয়া লাকাল হামদু আংতা নুরুস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ। ওয়া লাকাল হামদু আংতাল হাক্কু। ওয়া ওয়া’দুকাল হাক্কু। ওয়া লিক্বাউকা হাক্কু। ওয়াল ঝান্নাতু হাক্কু। ওয়ান নারু হাক্কু। ওয়ান নাবিয়্যুনা হাক্কু। ওয়া মুহাম্মাদুন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা হাক্কু। ওয়াস সাআতু হাক্কু। আল্লাহুম্মা লাকা আসলামতু। ওয়াবিকা আমাংতু ওয়া আলাইকা তাওয়াক্কালতু। ওয়া ইলাইকা আনাবতু। ওয়া বিকা খাসামতু। ওয়া ইলাইকা হাকামতু। ফাগফিরলি মা কাদ্দামতু ওয়া মা আখ্খারতু। ওয়া মা আসরারতু ওয়া মা আ’লাংতু। আংতাল মুকাদ্দিমু ওয়া আংতাল মুআখ্খিরু। লা ইলাহা ইল্লা আংতা। লা ইলাহা গাইরুকা।’ (বুখারি)

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! সব প্রশংসা আপনারই, আপনিই আসমান-জমিন ও উভয়ের মাঝে বিদ্যমান সব কিছুর নিয়ামক এবং আপনারই জন্য সব প্রশংসা। আসমান-জমিন এবং এর মাঝে বিদ্যমান সব কিছুর কর্তৃত্ব আপনারই। আপনারই জন্য সব প্রশংসা। আপনি আসমান-জমিনের নুর। আপনারই জন্য সব প্রশংসা। আপনি আসমান-জমিনের মালিক, আপনারই জন্য সব প্রশংসা।

আপনিই চির সত্য। আপনার ওয়াদা চির সত্য। (পরকালে) আপনার সাক্ষাৎ সত্য। আপনার বাণী সত্য। আপনার জান্নাত সত্য। আপনার জাহান্নাম সত্য। আপনার (প্রেরিত) নবিগণ সত্য। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম সত্য, কেয়ামত সত্য।

হে আল্লাহ! আপনার কাছেই আমি আত্মসমর্পণ করলাম, আপনার ওপর ঈমান আনলাম, আপনার ওপরই ভরসা করলাম, আপনার দিকেই রুজু করলাম, আপনার (সন্তুষ্টির জন্যই) শত্রুতায় লিপ্ত হলাম, আপনাকেই বিচারক মেনে নিলাম। তাই আপনি আমার আগের-পরের প্রকাশ্য ও গোপন সব পাপ/অপরাধ ক্ষমা করুন। আপনিই শুরু এবং আপনিই শেষ মালিক। আপনি ব্যতিত সত্য কোনো প্রকৃত ইলাহ নেই অথবা আপনি ব্যতিত (ইবাদতের উপযুক্ত) অন্য কেউ নেই।’

সুতরাং আল্লাহর সুন্তুষ্টি পেতে তাহাজ্জুদসহ রাতের নফল ইবাদত-বন্দেগির বিকল্প নেই। রাত জেগে নিয়মিত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার পাশাপাশি নফল ইবাদত-বন্দেগিতে নিজেদের নিয়োজিত রাখা। হাদিসে ঘোষিত প্রিয় নবী রাসূলুল্লাহ (সা.) এর পড়া দোয়া বেশি বেশি পড়া। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করা।

আল্লাহ তায়ালা মুসলিম উম্মাহকে রাতের নামাজ তাহাজ্জুদ যথাযথভাবে আদায় করার তাওফিক দান করুন। দুনিয়া ও পরকালের কল্যাণ লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *