।। ড. মো. মনছুর আলম ।।
বাংলাদেশ গোটা উত্তর-পূর্ব ভারতের নদ-নদীসমূহের সঙ্গমস্থল। উত্তর ভারত আর আসামের বিস্তীর্ণ ভূমি পেরিয়ে উপনদী-শাখানদীসমূহ নিয়ে নেমে এসেছে বাংলাদেশের বৃহৎ নদীসমূহ। এদের মধ্যে গঙ্গা, তিস্তা, ব্রক্ষ্মপুত্রসহ ৫৪টি নদ-নদীর উৎপত্তিস্থল ভারতে এবং ৩টি মিয়ানমারে। এই ৫৭টি নদ-নদীর শতকরা প্রায় ৯৩ ভাগ উজান অঞ্চল বাংলাদেশের বাইরে এবং মাত্র ৭ ভাগ বাংলাদেশে। তাই পানি ভাগাভাগি বলি আর বণ্টন বলি সবকিছুই ভারতের সাথে সম্পাদিত হয়েছে বা হবে। ১৯৯৬ সালের ১২ ডিসেম্বর তৎকালীন সরকার ‘পদ্মা পানি বণ্টন’ চুক্তি সম্পাদন করলেও তিস্তা চুক্তি এখনও ঝুলে আছে। ভারত বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সেচ প্রকল্পের জন্য বালাদেশে প্রবাহিত নদীগুলোর উজানে অসংখ্য বাঁধ-ব্যারেজ দিয়ে ভিন্নখাতে একতরফাভাবে পানি প্রত্যাহর করছে; যা আন্তর্জাতিক নদী আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। অভিন্ন নদীর পানি ব্যবহার সংক্রান্ত ১৯৬৬ সালের হোলসিংকি নীতিমালায় বলা হয়েছে, প্রতিটি অববাহিকাভূক্ত রাষ্ট্র অভিন্ন নদীগুলো ব্যবহারের ক্ষেত্রে অবশ্যই অন্য রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রয়োজন বিবেচনায় নেবে। ১৯৯৭ সালের জাতিসংঘের জলপ্রবাহ কনভেনশন অনুযায়ী প্রণীত আইনে বলা হয়েছে, ‘নদীকে এমনভাবে ব্যবহার করা যাবে না, যাতে অন্য দেশ মারাত্মক ক্ষতি বা বিপদের সম্মুখিন হবে’। যেসব নদী দুই বা ততোধিক দেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়, সেসব নদীকে আন্তর্জাতিক নদী বলে। সে ধারায় তিস্তা একটি আন্তর্জাতিক নদী।
তিস্তা নদী উত্তর জনপদের অতি প্রাচীন ও বিশিষ্ট নদী। উত্তরের জনজীবনে ও জীববৈচিত্র্যের সাথে তিস্তা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। প্রাচীন গল্প, গাঁথা, মিথ, পুরাণের গল্প রচিত হয়েছে এই তিস্তা নদী নিয়ে। বেশিরভাগ নদী বিশেষজ্ঞ মনে করেন ত্রিস্রোতা শব্দের অপভ্রংশ হলো তিস্তা। আর এই ত্রিস্রোতা বলতে করতোয়া, আত্রাই ও পুনর্ভবা নদীকে বুঝানো হয়ে থাকে। যা কিনা উত্তর সিকিমের হিমালয় হতে উৎসারিত হয়ে দার্জিলিং-জলপাইগুড়ি জেলার ভেতর দিয়ে করতোয়া নামে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। করতোয়া নদীর উত্তরতম প্রবাহধারার নাম তিস্তা বা সংস্কৃত ত্রিস্রোতা। ফানডেন ব্রোকের (১৬৬০) নকশায় জলপাইগুড়ি হতে তিস্তার তিনটি স্রোতধারা তিন দিকে প্রবাহিত হয়েছে এর প্রমাণ পাওয়া যায়। তিস্তার দক্ষিণবাহী পূর্বতম স্রোতধারার নাম করতোয়, দক্ষিণবাহী মধ্যবর্তী স্রোতধারার নাম আত্রাই এবং দক্ষিণবাহী পশ্চিমতম স্রোতধারার নাম পূণর্ভবা যা কিনা এক সময় তিস্তা বা ত্রিস্রোতা নামে পরিচিত ছিল। বর্তমান তিস্তা নদী ত্রিধারায় প্রবাহিত নয়। ১৭৮৭ সালে আসামে অতিবর্ষণজনিত প্রবল বন্যা ও মাত্রারিক্ত ভূমিকম্পের ফলে উত্তর জনপদের চিত্র পাল্টে যায়। বরেন্দ্র বেসিন ও মধুপুর বেসিন বিভক্ত হয়ে পড়ে। পরিবর্তন ঘটে বাংলার মানচিত্র এবং পরিবর্তিত হয় নদ-নদীর গতিপথ। এতে অনেক নদী খ–বিখ- হয়ে ছোঠ ছোট নদীতে পরিণত হয়। আবার প্রাচীন ছোট নদী জোনাই বৃহৎ যমুনা নদীতে পরিণত হয়। তিস্তা নদী প্রাচীন গতিপথও পরিবর্তিত হয়। মূলত তিস্তা নদী উত্তর সিকিমের হিমালয় পর্বতমালার ১৭ হাজার ৪৮৭ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত সো-লামো হ্রদ থেকে উৎসারিত। দীর্ঘ পাহাড়ি পথ অতিক্রম করে অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জলধারা বুকে নিয়ে দক্ষিণে অগ্রসর হয়। দার্জিলিং এবং কালিম্পং শহরের সংযোগ রক্ষাকারী সেতুর আগ দিয়ে তিস্তা তার উপনদী রঙ্গিতকে সাথে নিয়ে শিলিগুড়ির ২২ কিলোমিটার দূরে সেবকের করোনেশন সেতু পেরিয়ে সমতলে প্রবেশ করেছে। অতঃপর পশ্চিমবাংলার ডুয়ার্সের বিস্তীর্ণ পথ পেরিয়ে নিলফামারী জেলার খড়িবাড়ি সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। বাংলাদেশে নিলফামারী, রংপুর, লালমনিরহাট ও গাইবান্ধা জেলার মধ্যদিয়ে প্রবাহিত হয়ে কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারি নদীবন্দরের সন্নিকটে বহ্মপুত্র নদে নিপতিত হয়েছে। তিস্তা নদীর মোট দৈর্ঘ্য ৩১৫ কিলোমিটার; বাংলাদেশ অংশে ১১৫ কিলোমিটার। এই নদীর মাসিক গড় পানি প্রবাহের পরিমাণ ২ হাজার ৪৩০ কিউসেক। ভারত জলপাইগুড়ি জেলার গজলডোবা নামক স্থানে একটি বাঁধ নির্মাণ করেছে। বাংলাদেশের তিস্তা বাঁধ এলাকা থেকে এটি ১০০ কিলোমিটার উজানে অবস্থিত। এই বাঁধের সাহায্যে ভারত একটি খালের মাধ্যমে শুষ্ক মৌসুমে ১ হাজার ৫০০ ঘনমিটার পানি মহানন্দা নদীতে নিয়ে যায়। আবার বর্ষা মৌসুমে বাঁধের সমস্ত কপাট খুলে দেয়; ফলে ভাটির সমস্ত এলাকা ব্যাপকভাবে প্লাবিত হয় এবং খর¯্রােতা প্রভাবের কারণে ভাঙন প্রক্রিয়া হয়ে উঠে দুর্দমনীয়। ফলে উত্তর জনপদে নদী ভাঙন, অসময়ে বন্যা বা আকস্মিক বন্যা নিত্য ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। এছাড়া পানির অভাবে বাংলাদেশের রংপুরের ডালিয়ায় তিস্তা বাঁধ প্রকল্পের কার্যকারিতা এখন মুখ থুবড়ে পড়েছে। সেইসাথে তিস্তা নদী সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন শাখা নদী, উপনদী পানির অভাবে মরা নদীতে পরিণত হয়েছে। ফলে নৌচলাচল, নৌবাণিজ্য ও কৃষি খাতে এর মারাত্মক প্রভাব দেখা দিয়েছে।
১৯৯৬ সালের ১২ ডিসেম্বর বাংলাদেশের পক্ষে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের পক্ষে এইচ ডি দেবে গৌড়া নয়া দিল্লির হায়দারাবাদ হাউজে ৩০ বছর মেয়াদী গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি স্বাক্ষর করলেও তিস্তা চুক্তি নিয়ে টানাপোড়েন চলছে দীর্ঘ পঞ্চাশ বছরেরও অধিক সময় ধরে। এভাবে দশকের পর দশক ধরে দরকষাকষির পর এক পর্যায়ে বাংলাদেশের সাথে অভিন্ন নদী তিস্তার পানি বণ্টনের খসড়া চুক্ততে একমত হয় ভারত। সে মোতাবেক ২০১১ সালের সেপ্টম্বর মাসে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ঢাকা সফরে আসেন। বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং দ্বি-পাক্ষিক বিভিন্ন চুক্তি স্বাক্ষর করলেও তিস্তা পানি বণ্টন চুক্তি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপধ্যায়ের বিরোধিতার জন্য তা আর আলোর মুখ দেখেনি। এরপর ২০১৭ সালে নয়া দিল্লির হায়দারাবাদ হাউজে ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে আস্বস্ত করেছিলেন তাঁর প্রধানমন্ত্রীত্বের মেয়াদের মধ্যেই তিস্তা পানি বণ্টন চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। কিন্তু বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বার বার তাগাদা দেওয়া সত্ত্বেও চুক্তি সই হয়নি। এদিকে ২০১৯ সালের মে থেকে তিনি আবারও ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মমতা বন্দ্যোপধ্যায় ক্ষমতায় আসলে বাংলাদেশ তিস্তা চুক্তির আশা এক প্রকার ছেড়েই দেয়। কিন্তু বাংলাদেশের এই নিষ্ক্রিয়তার ফলে মমতা বন্দ্যোপধ্যায় আবার দুর্ভিসন্ধি শুরু করেন। তিনি তিস্তা নদীর পানি আরোও সরাতে দুটি নতুন খাল খননের জন্য ইতোমধ্যে প্রায় ১ হাজার একর জমি অধিগ্রহণ করেছেন। গত ৪ মার্চ’২০২৩ শনিবার ভারতের ইংরেজি দৈনিক টেলিগ্রাফ পত্রিকার মাধমে জানা যায়, জলপাইগুড়ি ও কোচবিহার জেলার কুষিজমি সেচের আওতায় আনতেই মূলত খাল দুটি খননের এই উদ্যোগ গ্রহণ করছে ভারত সরকার। পরিকল্পনা অনুয়ায়ী তিস্তা ও জলঠাকা নদী থেকে পানি সরাতে কোচবিহার জেলার চ্যাংড়াবন্দা পর্যন্ত ৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ খাল খনন করা হবে এবং তিস্তার বাম তীরে ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ আরেকটি খাল খনন করা হবে। এই দু’টি সেচ প্রকল্পের আওতায় প্রায় ১ লক্ষ কৃষককে সেচ সুবিধার আওতায় আনা হবে। উভয়দেশের মধ্যে সরকারি পর্যায়ে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকলেও তিস্তার ব্যাপারে এমনকি নতুন করে দু’টি খাল খননের ব্যাপারে বাংলাদেশকে জানানোর প্রয়োজনবোধ করেনি ভারত। তিস্তা বানি বণ্টন নিয়ে দু’দেশের মধ্যে কোনো চুক্তি না থাকলেও খাল দু’টি খননের বিষয়ে বাংলাদেশকে অবহিত করা উচিত ছিল বলে আমরা মনে করি। এছাড়া অতি দ্রুত যৌথ নদী কমিশনের মাধ্যমে এ বিষয়ে বাংলাদেশের উদ্বেগ জানানো উচিৎ হবে বলেও মনে করি। কারণ এমনিতেই পানির আভাবে উত্তর জনপদের বিস্তীর্ণ এলাকা এখন শুধু ধু-ধু বালিচর। তিস্তা প্রভাবে উত্তর জনপদের আবহাওয়া মাঝে মাঝে রুক্ষ ও রুদ্রমূর্তি ধারণ করতে দেখা যাচ্ছে। আবহাওয়া পরিবর্তনের পেছনে উত্তরের জনগণ ও বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন মনে করেন এসব মানবসৃষ্ট বা ভারত সৃষ্ট। ভারত কর্তৃক উজানে তিস্তা বাঁধ নির্মাণ বাংলাদেশের অসংখ্য নদ-নদীকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে। অপমৃত্যু ঘটেছে তিস্তা নদীর শাখা ও উপনদীগুলোর। তিস্তা পানি প্রবাহ হ্রাস পাওয়ায় বর্তমানে নদীগুলোতে শত শত চর জেগে উঠেছে। মূলত নদ-নদীর প্রভাবেই জলবায়ু এখন রুক্ষ ও রুদ্রমূর্তি ধারণ করেছে। আবহাওয়ার এই অস্বাভাবিক পরিবর্তনে গ্রীষ্মকালে যেমন তাপমাত্রা অনেক বেশি বেড়ে যাচ্ছে তেমনি শীতকালে প্রচ- শীত ও ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন থাকছে আকাশ। গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা বেড়ে ৪০ থেকে ৪৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড পর্যন্ত হচ্ছে এবং শীতকালে তাপমাত্রা কমে ৭/৮ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে নেমে আসছে। ফলে জনজীবনে পড়ছে এর বিরূপ প্রভাব। ভূ-গর্ভস্থ পনি হ্রাস এবং পানির লেয়ার অনেক নিচে চলে যাওয়ায় মানুষ এখন উৎকণ্ঠিত বেশি। এ অবস্থা চলতে থাকলে কৃষিনির্ভর কৃষিপ্রধান এলাকায় ভবিষ্যতে সুপেয় পানির অভাবসহ সেচ ও কৃষি ব্যবস্থা দারুণভাবে ব্যহত হবে, ব্যহত হবে স্বাভাবিক জীবন-যাপন। ফলে হুমকির মুখে পড়বে এ অঞ্চলের প্রায় ৫ কোটি মানুষসহ জীববৈচিত্র্য। বর্তমানে জীববৈচিত্র্যের স্বাভাবিকতাও পরিবেশ বিজ্ঞানীদের ভাবিয়ে তুলছে। কৃষি বাংলাদেশের প্রধান অর্থনৈতিক খাত এবং পানির প্রধান ব্যবহারকারী শিল্প। কৃষিখাত ছাড়া পানির আবাসিক ও বাণিজ্যিক ব্যবহারও ব্যাপক। নদী-নালা এবং পুকুর-বিল-হাওড়-বাঁওড় ইত্যাদি, মৎস্য, বন ও নৌ-পরিবহন ইত্যাদি খাত ছাড়াও পানি জীবন রক্ষা, পরিবেশ দূষণ রোধ, লবণাক্ততা নিয়ন্ত্রণ, প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা, যোগাযোগ, বিনোদন প্রভৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তিস্তা কেন্দ্রিক বিভিন্ন নদীর তলদেশ ওপরে উঠে আসা এবং পানির প্রবাহ কমে যাওয়ার ফলে নদীতে এখন আর তেমন দেশি পানির মাছ যেমন- শোল, বোয়াল, গজার, রুই, কাতলা, চিতল, বাঘাইর, পাঙাস, পাপদা, মলা, ঢেলাসহ প্রায় দুইশতাধিক প্রজাতির ছোট-বড় মিঠা পানির মাছ ও ১৮ প্রজাতির চিংড়ি মাছ বিলুপ্তির পথে।
বৈশ্বিক ও ভারত সৃষ্ট এই প্রভাবের ফলে উত্তর জনপদে জলবায়ুর অস্বাভাবিকতা, চরমভাবপন্নতা, মরুকরণ, অসময়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অসময়ে বন্যা-বৃষ্টি, চর জাগা, স্থায়ী জলাবদ্ধতা, শিলাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, ঝড়, বন্যা, খরা, নদী ভাঙন এ অঞ্চলে নিত্য ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সরকার ‘ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০’ শীর্ষক পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বরেন্দ্র অঞ্চলকে ডেল্টা অঞ্চলের একটি ‘হটস্পট’ সংবেদনশীল অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত করেছে। তিস্তার প্রভাবে উত্তর-পূর্বে তিস্তা-যমুনা এবং আত্রাই-করতোয়ার পলি অঞ্চল আর পশ্চিম-দক্ষিণে মহানন্দা-পদ্মার মধ্যবর্তী ভূ-ভাগের প্রায় ৮ হাজার ৪০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা এখন হুমকির মুখে। এ অঞ্চলে প্রায় ৮ হাজার গভীর নলকূপ এবং প্রায় ৫০ হাজার অগভীর নলকূপ শুষ্ক মৌসুমে পানি পাচ্ছে না। বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত দেশের সকল অঞ্চলের চেয়ে অনেক কম; যেখানে দেশের অন্য অঞ্চলে বাৎসরিক গড় বৃষ্টিপাত ২ হাজার থেকে ৪ হাজার ৫০০ মিমি হতে দেখা যায় সেখানে বরেন্দ্র অঞ্চলে ৭৫০ থেকে ১ হাজার ৪০০ মিমি। পরিবেশ বিজ্ঞানীগণ মনে করেন, এ অবস্থা দীর্ঘায়ু হলে ‘সেকালের সম্পদশালী আফ্রিকা আর আজকের দুর্ভিক্ষ পীড়িত আফ্রিকার’ মত হবে উত্তর জনপদ। কৃষিপ্রধান অঞ্চলে একদিকে যেমন প্রাকৃতিক সম্পদ হ্রাস, পানি সম্পদ, মৎস্য সম্পদ হ্রাস পাচ্ছে তেমনি জীবন-জীবীকার উৎস ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে দুর্ভিক্ষ পীড়িত অঞ্চলে পরিণত হবে। এভাবে চলতে থাকলে অর্থাৎ জীবনোপকরণ হ্রাস, খাদ্য হ্রাস, স্বাস্থ্যঝুঁকি, অপুষ্টি, রোগব্যধি, সামাজিক অবক্ষয়, অর্থনৈতিক ক্ষতির মধ্যে শুধুমাত্র উত্তরবঙ্গই নয় আগামী বাংলাদেশ পতিত হবে এ কথা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলা যায়।
লেখক : ড. মো. মনছুর আলম
নদী গবেষক, সভাপতি- রিভারাইন পিপল, পাবনা।