দুই দিন ঘুরিয়ে তথ্য দিলেন না চাটমোহর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা

শেয়ার করুন

চাটমোহর (পাবনা) প্রতিনিধি : কৃষি বিষয়ক সংবাদের জন্য তথ্য চাইলে তথ্য না দিয়ে সাংবাদিকদের হয়রানী করার অভিযোগ উঠেছে পাবনার চাটমোহর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ এ মাসুম বিল্লাহর বিরুদ্ধে। তথ্য দেবার আশ^াস দিয়ে দুইদিন ঘোরানোর পর তিনি সাংবাদিকদের তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করতে বলেন। সাংবাদিকরাও তথ্য পেতে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করেছেন। কৃষি কর্মকর্তার এমন আচরণে স্থানীয় সাংবাদিকদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

অভিযোগে জানা গেছে, সংবাদের তথ্য সংগ্রহের জন্য গত বুধবার (১৬ মার্চ) দুপুরে চাটমোহর উপজেলা কৃষি অফিসে যান সংবাদকর্মী ইকবাল কবীর, শাহীন রহমান ও আব্দুল লতীফ রঞ্জু। সেখানে কৃষি কর্মকর্তা মাসুম বিল্লাহর কাছে রাজশাহী বিভাগ কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় গত জানুয়ারী মাসে অনুষ্ঠিত কৃষক উদ্বুদ্ধকরণ ভ্রমণে অংশগ্রহণকারী কৃষকের তালিকা ও মাস্টার রোল, ২০২০-২১ অর্থ বছরে রাজস্ব খাতের সরিষা, গম ও কালোজিরার প্রদর্শণীপ্রাপ্ত কৃষকদের নামের তালিকা এবং সর্বশেষ বিতরনণকৃত গমের ফলোআপের বীজপ্রাপ্ত কৃষকদের তালিকা চান তারা। ওইদিন তিনি এসব তথ্য তার ডায়রীতে নোট নিয়ে জানালেন তার হেড ক্লার্ক চলে গেছে। আপনারা কাল (পরদিন) আসেন, দিয়ে দিবো। তার কথা মতো সংবাদকর্মীরা চলে যান এবং পরদিন বৃহস্পতিবার (১৭ মার্চ) দুপুরে যথারীতি আবারো কৃষি অফিসে গেলে অফিসের একজন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা জানান স্যারের (কৃষি কর্মকর্তা) মেয়ে অসুস্থ্য, তাকে নিয়ে পাবনায় ডাক্তারের কাছে গেছেন। আসতে দেরী হবে। স্যারের অন্তত দুই ঘন্টা সময় লাগবে ফিরতে। আপনারা পরে আসুন। স্যার আপনাদের ফোন দিয়ে ডেকে নেবেন।
তার কথামতো ওই তিন সংবাদকর্মী অফিস থেকে ফিরে বাইরে দুই ঘন্টা অপেক্ষা করেন। দুই ঘন্টা পার হলে তিনটার দিকে কৃষি কর্মকর্তা মাসুম বিল্লাহ সংবাদকর্মীদের ফোন করে জানান, তিনি তার মেয়েকে নিয়ে পাবনায় ডাক্তার দেখাতে গিয়ে আটকে গেছেন। ফিরতে আরো দেরী হবে। তিনি অফিসে ফিরে তাদের ফোন করে ডেকে নেবেন বলে আবারও আশ^স্ত করেন।
তার ফোন না পেয়ে সংবাদকর্মীরা সন্ধ্যার পর কৃষি কর্মকর্তা মাসুম বিল্লাহকে ফোন দিলে তিনি বলেন, আমি পাবনা থেকে আসছি। এসে আপনাদের ফোন করে অফিসে ডাকছি। কিন্তু তিনি আর ফোন দেননি। পরে বাধ্য হয়ে সংবাদকর্মী তিনজন রাত আটটার দিকে কৃষি অফিসে গিয়ে দেখতে পান তখনও অফিস খোলা, দু’জন উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা, হেড ক্লার্ক ও পিয়ন অফিসে রয়েছেন। সাংবাদিকদের দেখে একজন তার স্যারকে (কৃষি কর্মকর্তা) ফোন দিয়ে জানান। পরে সংবাদকর্মীদের ডেকে নিয়ে কৃষি কর্মকর্তার কক্ষে বসতে দেন অফিসের লোকজন। কিছু সময় পর অবশেষে অফিসে আসেন কৃষি কর্মকর্তা মাসুম বিল্লাহ। তার কাছে আগেরদিনের কথা অনুযায়ী তথ্যগুলো চাইলে তিনি হেড ক্লার্ককে ডেকে ফাইল ঘেঁটে দেখেন এবং তার হাতে রেখেই সাংবাদিকদের দেখান। কিন্তু সাংবাদিকদের কোনো তথ্য দেননি। তথ্যগুলোর ফটোকপি চাইলে তিনি হেসে বলেন, এগুলো তার অফিসিয়াল ডকুমেন্ট, দেয়া যাবে না। তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করে আসেন, তখন দেয়া যাবে।
ভুক্তভোগী সাংবাদিক ইকবাল কবীর রঞ্জু বলেন, আমরা জানতাম তিনি আমাদের ঘোরাচ্ছেন, সময় ক্ষেপন করছেন। তিনি তালিকাগুলো দিবেন না এমন ধারণা আগেই করেছিলাম। যেকারণে তথ্য অধিকার আইনের ফরম পূরণ করে নিয়ে তার কাছে গিয়েছিলাম। তিনি যখন তথ্য অধিকার আইনে আবেদনের কথা বললেন তখনই আমরা আবেদনটি তার কাছে পেশ করি। তার উপস্থিতিতে করনিক রিসিভ করেছেন। চাটমোহরে কোন তথ্য পেতে এটি প্রথম তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করা।

সাংবাদিক ইকবাল কবীর রঞ্জু বলেন, তিনি ইচ্ছা করলে প্রথমদিন না পারলেও দ্বিতীয় দিন তথ্যগুলো দিতে পারতেন। আর যদি না ই দেবেন, তাহলে প্রথম দিনই তিনি তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করার কথা বলতে পারতেন। কিন্তু তিনি সেটি না করে অযথা আমাদের হয়রানী করছেন। যে তথ্যগুলো আমরা চেয়েছি, সে বিষয়ে বেশকিছু অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে আমাদের কাছে। আমাদের ধারণা, অনিয়ম ঢাকতে ওইসব তালিকা ঠিক করতেই কালক্ষেপণ করছেন তিনি।

চাটমোহর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ এ মাসুম বিল্লাহ কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মুঠো ফোনে তিনি জানান, প্রথম দিনে অফিসের ক্লার্ক চলে যাওয়ায় দিতে পারিনি। পরের দিন তার মেয়েকে পাবনায় ডাক্তার দেখাতে গিয়ে আটকে যাওয়ায় ফিরতে দেরী হয়। এ সুযোগে সাংবাদিকবৃন্দ তথ্য অধিকার আইনের ফরম পুরন করে নিয়ে এসেছেন। তখন আর কথা না বাড়িয়ে অফিসের পক্ষ থেকে পুরণকৃত ফরমটি রিসিভ করা হয়।


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *