দূর্নীতির স্বর্গরাজ্য ঈশ্বরদীর দাশুড়িয়া ভূমি অফিস

শেয়ার করুন

তুহিন হোসেন (পাবনা) : দাশুড়িয়া ভূমি অফিসের সীমাহীন দূর্নীতিতে দিশেহারা সেবা প্রত্যাশিরা। সেই সাথে ভূমি অফিসের দুর্নীতির খবর বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় ধারাবাহিক প্রচারের পরও প্রশাসনের নিরবতায় আতঙ্ক দানা বাধতে শুরু করেছে জনমনে। জমির পিছে ঘুরতে ঘুরতে জমিটাই না হারিয়ে যায় অবশেষে এই শঙ্কাতেই বিভোর ভুক্ত ভোগীরা !
এমনই রোমহর্ষক বর্ণনায় পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলার দাশুড়িয়া ইউনিয়নের ভূমি অফিসে নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানালেন উপজেলার কালিকাপুর এলাকার মোছা. শিউলি খাতুন, নওদাপাড়ার মো. পাপ্পু সরদার, রহিদুল ইসলাম, ভাড়ইমারী এলাকার মো. খালেক বিশ্বাস, মারমী এলাকার মো. বজলুর রহমান প্রমুখ।

অভিযোগ কারীরা জানান, এখানে দালালের দৌড়াত্ব আর কর্মকর্তা কর্মচারীদের দুর্নীতির কাছে নিমজ্জিত আমরা সবাই। কেননা এখানে টাকা ছাড়া কোন সেবাই মেলেনা।
৭ বছর আগে জমির খারিজ করতে দাশুড়িয়া ভূমি অফিসে এসেছিলেন কালিকাপুর এলাকার মোছা. শিউলি খাতুন। দুই দিন ভূমি অফিসে বেকার ঘোরার পর মো. মস্তফ ওরফে মোস্তফা নামের এক দালালের খপ্পরে পরে খারিজের জন্য ৭ হাজার টাকায় চুক্তি করেন শিউলি। সে সময় মস্ত অফিসের স্টাফ এবং সহকারী নায়েবের একান্ত আস্থা ভাজন বলে নিজেকে জাহির করেন । কথা বলায়ে দেন নায়েবের সাথেও। চুক্তি অনুযায়ী তিন মাসের মধ্যে কাজ সম্পাদনের কথা থাকলেও এক এক করে সাত বছর পেরিয়ে গেলেও টাকা এবং কাজ কোনটাই পাননি শিউলি।
অভিমান করে শিউলি বেগম বলেন, আমি গত সাত বছর যাবৎ আমার জমির কাগজ পাতি ঠিক করার জন্য হন্নে হয়ে ঘুরছি এদের পিছে। কত হাজার টাকা যে গাড়ী ভাড়া দিয়েছি, কত দিন, কত ঘন্টা যে এই ভূমি অফিসে থেকেছি তার ইয়ত্তা নেই। তবুও আমার কাজটা করে দেয়না এরা।
মো. পাপ্পু সরদার বলেন, প্রায় এক বছর হতে চলল ৩ (তিন) হাজার টাকা চুক্তিতে জমির খাজনা খারিজ করতে দিয়েছি । টাকাও দেয়না, কাগজও দেয়না। জোর করে চাইলে আবার হুমকি দেয়।
তিনি জানান, একবার টাকা আর কাগজ দুটোই চেয়েছিলাম নিজেই কাজ করব বলে, কিন্তু এরা আমাকে বলেছিলো নিজে করেন আর যেই করুন কাজ আর কাগজ তো আমাদের হাতেই আসবে তখন দেখব কাজ কিভাবে সম্পন্ন করেন ?
নওদাপাড়া এলাকার মো. রেজাউল করিমের ছেলে মো. রহিদুল ইসলাম বলেন, আমার দাদার ক্রয়কৃত সম্পত্তি এরা টাকার বিনিময়ে অন্যজনের নামে খারিজ করে দিয়েছে।
ভাড়ইমারী এলাকার মো. খালেক বিশ্বাস বলেন, খারিজ করতে ৪৫০০ শত টাকা নিয়েছে, দুই মাসে কাজ করে দেবে বললেও পেরিয়ে গেছে বছর। কাজতো পাই নাই, কবে পাব তাও বলে না।
মারমী এলাকার মো. ফজলুর রহমান বলেন, ২ মাসের মধ্যে কাজ করে দেবেন বলে ৪০০০/ চার হাজার টাকা নিয়েছিলো দাশুড়িয়া ভূমি অফিসের সহকারী নায়েব মো. সিরাজ উদ্দিন। আজ ৮ মাস পেরিয়ে গেছে কাজের কচুটাও হয়নি। আসলে শুধু তারিখ দেয়। এভাবে আর কতদিন চলবে জানা নাই ।
জানতে চাইলে অভিযুক্ত মূল হোতা দাশুড়িয়া ভূমি অফিসের সহকারী নায়েব মো. সিরাজ উদ্দিন বলেন, এসব বিষয়ে লিখে আপনার লাভ কি ? তিনি সংবাদ কর্মীকে উৎকোচ গ্রহনের প্রস্তাব দেন ।
জানতে চাইলে দাশুড়িয়া ভূমি অফিসের নায়েব মো. হারুন অর-রশিদ তার দায় সারা জবাবে জানান, এসবের কিছুই আমার জানা নেই। সিরাজ সাহেব যদি এগুলো করে থাকেন তবে সেটা তার অন্যায় হয়েছে এবং যারা তাকে টাকা বা কাজ দিয়েছে তারাও সমান অন্যায় করেছে। তিনি আরো বলেন সিরাজ আমার অফিসের খাজনা খারিজ করার কেউ না ।
নায়েবের এমন সরল মন্তব্যে তার কাছে ভুক্ত ভোগীদের করা অভিযোগের কোন সদুত্তর তিনি দেননি।
এমতাবস্তায় অনতিবিলম্বে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি ও অপসারণসহ ভূমি অফিসে সেবার মান ফিরিয়ে আনার দাবি করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছেন ভুক্তভোগী নাগরিকসহ সচেতন এলাকাবাসী।
ধারাবাহিক পর্ব- ০১


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *