।। ড. মো. মনছুর আলম ।।
বাংলাদেশের নদ-নদী রক্ষায় দেশের সামাজিক আন্দোলন, নদী রক্ষা আন্দোলন, নদী বাঁচাও আন্দোলন, নদী উদ্ধার আন্দোলন, পরিবেশ আন্দোলনকারীদের উচ্চ আদালতে রিট; রিটের প্রেক্ষিতে অনোগুলো রায় এবং মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগ জনস্বার্থে নদী নিয়ে বহুবার নির্দেশনা- এরমধ্যে আমরা আলোচিত কয়েকটি রায় এবং রায় পরবর্তী পদক্ষেপ কী হয়েছিল তার সংক্ষিপ্ত আলাচনা তুলে ধরবো।
বাংলাদেশের নদ-নদী রক্ষায় বিশেষকরে ঢাকার বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু ও শীতলক্ষ্যা নদী রক্ষায় ২০০৯ সালে সর্বপ্রথম রিট মোকদ্দমা হয়। মোকদ্দমাটি করেন মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস এন্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) এর পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের ৫ জন বিশিষ্ট আইনজীবী। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট হাইকোর্ট বিভাগে নদ-নদী সংক্রান্ত জনস্বার্থমূলক ৩৫০৩/২০০৯ নং রিট মোকদ্দমার চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২৪ ও ২৫ জুন ২০০৯ সালে উক্ত মোকদ্দমার রায় ঘোষিত হয়। রায়ে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন গঠনসহ তিনটি বিষয়ে সরকারকে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়। রায়ে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু ও শীতলক্ষ্যা নদীসহ দেশের সকল নদ-নদী সিএস ম্যাপ অনুযায়ী সীমানা নির্ধারণ, পরিবেশগত সংকটাপন্ন ঘোষণা, নদীগুলো রক্ষায় প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রণয়ন, সীমানা পিলার স্থাপন, নদী খনন ও পলিথিন ব্যাগসহ অন্যান্য বর্জ্য অপসরণসহ ৯ দফা নির্দেশনা দেয়া হয়।
এদিকে বুড়িগঙ্গা নদীর পানি দূষণ রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা চেয়ে ২০১০ সালের শুরুতে হিউম্যান রাইটস এন্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) হাইকোর্টে আরেকটি রিট করে। চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১০ সালের ১ জুন হাইকোর্ট তিন দফা নির্দেশনা দিয়ে রায় প্রদান করে। রায়ে বুড়িগঙ্গায় বর্জ্য ফেলা বন্ধে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়, যার অগ্রগতি তিন মাস পরপর জানাতে বলা হয়। নদীতে সরাসরি সংযুক্ত সুয়ারেজ এবং শিল্পকারখানার বর্জ্য নিঃসরণের লাইন আগামী ছয় মাসের মধ্যে বন্ধ করতে হবে এবং এর অগ্রগতি প্রতি ছয় মাস পরপর আদালতে দাখিল করতে বলা হয়। ঢাকা সিটি কপোরেশনকে জনসচেতনতামূলক সুনির্দিষ্ট কিছু কাজ করতে বলা হয়। এছাড়া ২০১০ সালে কর্ণফুলী নদী রক্ষা ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে প্রয়েজনীয় নির্দেশনা চেয়ে এইচআরপিবি হাইকোর্টে আরেকটি রিট আবেদন করে। যদিও চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১৬ সালের ১৬ আগস্ট মহামান্য হাইকোর্ট কয়েক দফা নির্দেশনা দিয়ে রায় প্রদান করেন তথাপি এই রায়ের গুরুত্ব অনেক বেশি। কারণ এই রায়ে কর্ণফুলী নদীর তীরে ২ হাজার ১৮১টি অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করা হয় আর এই অবৈধ স্থাপনা সরাতে বাংলাদেশ পরিবেশ অধিদপ্তরকে ৯০ দিনের সময় বেঁধে দেওয়া হয়। রায় হাতে পাওয়ার ৭ দিনের মধ্যে স্থানীয় পত্রিকায় নোটিশ দেয়ার জন্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সচিব, সিটি করপোরেশনের নির্বাহী কর্মকর্তা, বিআইডাবলিউটিএর চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসককে নির্দেশ প্রদান করা হয়।
বাংলাদেশের নদ-নদী রক্ষায় মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের যুগান্তকরী রায় ঘোষণার সাথে সাথে সরকারের টনক নড়ে। সাথে নদী রক্ষায় বিভিন্ন সামাজিক আন্দোলন, পরিবেশ আন্দোলন নিজ নিজ কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে আসে এবং দেশে নতুন নতুন নদী রক্ষা বা নদী বাঁচাও আন্দোলন গড়ে উঠে। ২০১০ সাল থেকে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশও ‘বিশ্ব নদী দিবস’ পালন শুরু করে। একদিকে রিট আবেদন অপরদিকে একর পর এক রায়, বিশ্ব নদী দিবস পালন, বিভিন্ন সংগঠনেন সচেতনতামূলক প্রচারণা, বিভিন্ন মিডিয়ার নদ-নদীর দুরবস্থা বিষয়ে ধারাবাহিক সম্প্রচার, বেদখল হওয়া রাষ্ট্রীয় সম্পদ উদ্ধারের প্রেষণা; প্রভৃতির প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকার নদ-নদী রক্ষায় নড়েচড়ে বসে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৩ সালের ২২ জুলাই জাতীয় সংসদে ‘জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন আইন-২০১৩’ পাশ করেন। দেশের নদ-নদী ও নদী সম্পদ রক্ষা ও আইনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবে রূপ দেয়ার লক্ষ্যে এ বছর ০৩ আগস্ট ‘জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন’ (National River Conservation Commission Bangladesh) গঠন করে। ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার কে চেয়ারম্যান ও মো. আলাউদ্দিনকে সার্বক্ষণিক সদস্য নিয়োগ করে তাঁদের কর্মপরিধি নির্ধারণ করেন। সরকার জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন গঠন করলেও বাকি নির্দেশনাগুলো ঠিকমত পালন করেনি।
২০১৫ সালে বড়াল নদী রক্ষায় ‘বড়াল নদী উদ্ধার আন্দোলন’ কমিটির এক রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত আরেকটি রায় প্রদান করেন। উচ্চ আদালত রায় বাস্তবায়নের জন্য বড়াল নদী উদ্ধার আন্দোলন কমিটির আমন্ত্রণে ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যানসহ পানি সম্পদ মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী পাবনাতে আগমন করেন। বড়াল নদী রক্ষায় প্রয়োজনীয় সকল প্রকার সহযোগিতার আশ্বাস দিলেও এখন পর্যন্ত কাজোর কাজ কিছুই হয়নি।
২০১৬ সালের ৫ জানুয়ারি মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগে তুরাগ নদী রক্ষায় সংশ্লিষ্টদের নিষ্ক্রিয়তা চ্যালেঞ্জ করে আর একটি রিট পিটিশন দায়ের করে এইচআরপিবি; যার নং-১৩৯৮৯/২০১৬। মূলত ঢাকার আশেপাশের চার নদীর মামলার সীমানা জরিপ অনুযায়ী তুরাগ নদীর তীরে গড়ে উঠা অবৈধ্য স্থাপনার তালিকা প্রস্তুত করতে বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত। ঐ নির্দেশ মোতাবেক গাজিপুরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্র্রেট আসলামস জগলুল হোসেন তদন্ত কাজ শুরু হরেন। তদন্ত প্রতিবেদনে এনন টেক্স, ড. ফরাস উদ্দিন বিশ^বিদ্যালয়, কর্ডোড ল্যান্ড ডেভেলপার, প্রত্যাশা হাউজিং, জরিনা টেক্সটাইল, বিশ^ ইজতেমা, টঙ্গী নিউমার্কেটসহ ৩০ ব্যক্তির নাম ও প্রতিষ্ঠানের নাম উঠে আসে। তুরাগ নদী সংক্রান্ত এই রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে দীর্ঘদিন পর এ মামলার রুল শুনানি শেষে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের বেঞ্চ ২০১৯ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি এক ঐতিহাসিক রায় প্রদান করেন। রায়ে তুরাগ নদীকে একটি আইনি ব্যক্তি(লিগ্যাল পারসন)/আইনি সত্তা (লিগ্যাল এনটিটি/জীবন্ত সত্তা (লিভিং এনটিটি) উল্লেখ করা হয়। আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, এই রায় ঘোষণায় শুধু তুরাগ নয়, দেশের নব নদ-নদীই জীবন্ত সত্তা হিসেবে পরিগণিত হবে। আদালত দেশের নদ-নদী সুরক্ষায় ‘জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন’কে নদ-নদীর আইনগত অভিভাবক অভিহিত করেছেন। পাশাপাশি জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন আইন-২০১৩ সংশোধনের মাধ্যমে এই কমিশনকে একটি স্বাধীন ও কার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনাসহ মোট ১৭টি নির্দেশনা দিয়েছেন। রায়ে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে নদ-নদী দখলের অভিযোগ থাকলে তিনি সব ধরনের নির্বাচনে অযোগ্য বিবেচিত হবেন; একই সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ব্যাংক ঋণ হতেও বঞ্চিত হবেন। ডিজিটাল ডাটাবেজ তৈরির জন্য স্যাটেলাইটের মাধ্যমে নদ-নদী, খাল-বিল, জলাশয়ের ভৌগলিক অবস্থান নির্ণয় করতে নির্দেশনা রয়েছে রায়ে। এছাড়া এসব ডাটাবেজ সব ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলার সবার জন্য উন্মুক্ত রাখতেও বলা আছে। যাতে করে দেশের যে কোনো নাগরিক যে কোনো স্থান থেকে নির্ধারিত ফি দিয়ে কপি সংগ্রহ করতে পারেন। নদী দখলকে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে বিবেচিত করে দেশের সব নদ-নদী রক্ষায় সরকারকে উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে। একই সাথে নদী রক্ষার জন্য দেয়া রায় বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন মহামান্য হাইকোর্ট। এছাড়া এ-সংক্রান্ত রায়ের কপি(অনুলিপি) প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। নদী রক্ষায় হাই কোর্টের এ রায়ে নদী সংরক্ষণ ও নদী নিয়ে একটি আলাদা অধ্যায় পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণারয়ের সচিবকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের সব সরকারি-বেসরকারি স্কুল, স্কুল অ্যান্ড কলেজ, কলেজ, মাদরাসা, কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সরকারি-বেসরকারি সব বিশ^বিদ্যালয়ের প্রতিটি শ্রেণিতে এবং বিভাগে প্রতি দুই মাস অন্তর অন্তর একদিন এক ঘন্টার একটি নদীর প্রয়োজনীয়তা, উপকারিতা, রক্ষা, দূষণ, সংরক্ষণ বিষয়ে সচেতনতামূলক ক্লাস পরিচালনা এবং প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্ব স্ব এলাকার ভেতর দিয়ে প্রবাহিত নদী নিয়মিতভাবে পরিদর্শনের ব্যবস্থা করবে। এছাড়া দেশের প্রতিটি কলকারখানা অর্থাৎ ছোট-বড়-মাঝারি-বৃহদাকার সব দেশি-বিদেশি সরকারি-বেসরকারি শিল্প কারখানাগুলোকে তাদের সব শ্রমিকদের অংশগ্রহণে প্রতি দুইমাস অন্তর একদিন এক ঘন্টার একটি নদী বিষয়ক ‘বৈঠক’ অনুষ্ঠানের নির্দেশ দেয়া হয়েছে; যা তদারকি করবে শিল্প মন্ত্রণালয়।
একের পর এক রিট আবেদন, দীর্ঘ শুনানি শেষে চূড়ান্ত রায়, সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের কর্তাব্যক্তিদের শোকজ, পরিবেশবাদী বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নদ-নদী রক্ষায় বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামের পরেও দেশের নদ-নদী রক্ষায় কোন পদক্ষেপ দৃশ্যমান না হওয়ায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সরাসরি হস্তক্ষেপে করেন। ফলে ২০১৯ সালের ২৩ ডিসেম্বর একযোগে দেশের ৬৪টি জেলায় প্রায় ৪ হাজার ৪৩৯ কিলোমিটার নদ-নদী, খাল ও জলাশয় খনন ও অবৈধ উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালিত হয়; যা এখন পর্যন্ত অব্যাহত আছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) পাবনার ঐতিহ্যবাহী ইছামতি নদী সংক্রান্ত মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগে ১০৭/২০২০ একটি রিট পিটিশন দায়ের করেন। ১২ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে উক্ত মামলার রায় ঘোষণা হয়। রায়ে পাবনা জেলার পাবনা সদর, আটঘরিয়া, সাঁথিয়া ও বেড়া উপজেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত ৮৪ কিলোমিটার দীর্ঘ ইছামতি নদীকে কেন পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করা হবে না তা জানতে রুল জারি করেন মহামান্য হাইকোর্ট। একইসাথে সিএস ম্যাপ অনুযায়ী নদীর সীমানা নির্ধারণপূর্বক অবৈধ দখলদারদের তালিকা তৈরি করে কেন তাদের উচ্ছেদ করা হবে না; ক্ষতিকর স্থাপনা অপসারণ করে কেন নদীর প্রবাহ বৃদ্ধি করা হবে না এবং কেন নদী দূষণ রোধ করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন আদালত। বিচারপ্রতি এম এনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান- এর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বিভাগের একটি বেঞ্চ বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) কর্তৃক দায়েরকৃত জনস্বার্থমূলক মামলার প্রাথমিক শুনানি অন্তে এ রুল জারি করেন। ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব; পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব; পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব; জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান; পরিবেশ অধিদপ্তর ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক; জেলা প্রশাসক পাবনা; জেলা পুলিশ সুপার পাবনাসহ ১৬ দপ্তরের প্রধানকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়। একইসাথে ইছামতি নদীর দখলকারীদের একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করে আগামী তিন মাসের মধ্যে আদালতে দাখিলের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়। এদিকে ইছামতি নদী উদ্ধার আন্দোলন উচ্চ আদলতের রায় জনসম্মেুখে তুলে ধরতে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেন এবং নদী উদ্ধারে গণসচেতনতা বৃদ্ধি করেন। বাংলাদেশের অন্যান্য নদ-নদীর মত ইছামতি নদী খনন ও অবৈধ্য উচ্ছেদে অর্থ বরাদ্দ দেন সরকার। পাবনা শহর অংশে ইছামতি নদীর অভ্যন্তর ও উভয় তীরে বিদ্যমান অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং ইছামতি নদীসহ শাখা খাল পুনঃখনন (বাংলাবাজার ব্রিজ হতে পাবনা মহাশ্মশান পর্যন্ত) কাজের জন্য ‘৬৪ টি জেলার অভ্যন্তরস্থ ছোট নদী, খাল ও জলাশয় (১ম পর্যায়) (১ম সংশোধিত) প্রকল্পের’ আওতায় দুইটি প্যাকেজের অনুকূলে ৩০০+ ৬০৬= ৯০৬ লক্ষ টাকা অর্থ বরাদ্দ পাওয়া যায়। ইছামতি নদী পুনঃখনন কাজ আরম্ভের জন্য নদীর উভয় পাড়ে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কাজে আর কোনো আইনগত বাধা না থাকায় জরুরি ভিত্তিতে অর্থাৎ ৩১ মার্চ ২০২১ সাল থেকে কাজ শুরু করা হয়। ইছামতি নদী আঞ্জুমান ব্রিজ থেকে মেরিল বাইপাস পর্যন্ত দু’পাড়ের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং ম-লপাড়া ব্রিজ থেকে মেরিল বাইপাস পর্যন্ত নদী খনন কাজ শুরু করা হয়। কিন্তু উচ্ছেদ কর্যক্রমের ৫৮ ভাগ এবং খনন কাজের ৩০ ভাগ শেষ হতে না হতেই পাবনার বিজ্ঞ সিনিয়র জজ আদালতে জনৈক ব্যক্তিগণ মামলা করেন। এক পরিসংখ্যান হতে জানা যায় নি¤œ আদালতে এ যাবৎ ৭৭টি মামলা হয়েছে। ফলে বর্তমানে ইছামতি নদী উদ্ধার, অবৈধ্য উচ্ছেদ ও খনন কাজ সাময়িকভাবে বন্ধ আছে। [লেখক: নদী গবেষক, আহ্বায়ক- রিভারাইন পিপল, পাবনা এবং সাংগঠনিক সম্পাদক- ইছামতি নদী উদ্ধার আন্দোলন, পাবনা।]
লেখক : প্রাবন্ধিক ও গবেষক ড. মো. মনছুর আলম