জাতীয় ডেস্ক : আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস-২০২১ উপলক্ষে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং লোকাল কনসাল্টেটিভ গ্রুপ অন উইমেন্স অ্যাডভান্সমেন্ট অ্যান্ড জেন্ডার ইকোয়ালিটি বৃহস্পতিবার (২৫’ নভেম্বর) রাজধানী ঢাকায় যৌথভাবে এক জাতীয় পর্যায়ের ভার্চুয়্যাল ডায়লগ আয়োজন করে।
দুইটি পর্বে বিভক্ত আলোচনা সভার প্রথম পর্বে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা, এমপি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে জেন্ডার ভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধে ১৬ দিনব্যাপী কর্মসূচীর শুভ উদ্বোধন করেন।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইউএন রেসিডেন্ট কো-অর্ডিনেটর মিয়া সেপো এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত মান্যবর উইনি এস্ট্রাপ পিটার্সন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব জনাব মো. সায়েদুল ইসলাম এবং সঞ্চালনা করেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এবং নারী নির্যাতন প্রতিরোধকল্পে মাল্টিসেক্টরাল প্রোগ্রাম (গঝচঠঅড)-এর প্রকল্প পরিচালক জনাব এ. কে. এম. শামীম আক্তার।
ইউএন রেসিডেন্ট কো-অর্ডিনেটর মিয়া সেপো তাঁর বক্তব্যে বলেন, “জেন্ডার বিষয়ক সহিংসতার কারণে বাংলাদেশের যে পরিমাণ মানবিক ও আর্থিক ক্ষতি সাধিত হয়ে থাকে তা ব্যাপক। জেন্ডার বিষয়ক সহিংসতা প্রতিরোধে যত বেশি বিনিয়োগ করা হবে, এটি সংঘটিত হওয়ার কারণে ক্ষতিপূরণে খরচ তত কম হবে। জাতিসংঘ এটা উপলব্ধি করেছে যে, এককভাবে কোনও ইউএন অ্যাজেন্সি এই কাজটি করতে পারবে না। লিঙ্গ বৈষম্য এবং লিঙ্গ ভিত্তিক ক্ষতিকর আচরণসমূহ দূর করার জন্য প্রয়োজন একটি ব্যাপক পরিকল্পনা যা এসডিজি এবং ৮ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও সাফল্যের সাথে এলডিসি উন্নয়নে সরকারকে সহায়তা করতে পারে।”
মিয়া সেপো-র বক্তব্যের পর নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে বিশেষ কার্যক্রমে সহায়তা প্রদানকারী উন্নয়ন-সহযোগী সংস্থার দপ্তর প্রধানবৃন্দের ভিডিও বার্তা দেখানো হয়। এই পর্যায়ে ইউএসএআইডি’র মিশন ডিরেক্টর ক্যাথরিন ডি. স্টিভেন্স, বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের হেড অব্ ডেলিগেশন ও রাষ্ট্রদূত মান্যবর চার্লস হোয়াইটলে এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত বৃটিশ হাই কমিশনার রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসনকে ভিডিও বার্তা প্রদান করতে দেখা যায়।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয় নাহিম রাজ্জাক, এমপি’র প্রেজেন্টেশন দিয়ে। ‘যৌন সহিংসতা প্রতিরোধী পদক্ষেপকে গতিশীল করা’ নিয়ে এক অভিসন্দর্ভে তিনি ২০১৯ সালে প্রকাশিত ইউএন, বাংলাদেশ সরকার এবং সিভিল সোসাইটি অনুমোদিত ধর্ষণ ঠেকানোর ১০টি পদক্ষেপ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। তিনি জেন্ডার ভিত্তিক সহিংসতা বিষয়ক গবেষণা ও তথ্য সংগ্রহে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করার ব্যাপারে গুরুত্ব আরোপ করেন। এছাড়াও তিনি দন্ডবিধি সমূহের দ্রুত সংশোধনী, যৌন হয়রানি আইনসমূহ বিধিবদ্ধকরণ এবং যৌন সহিংসতা প্রতিরোধমূলক আইনের অন্তর্ভুক্ত সাক্ষ্য আইন ১৫৫ ধারা বাতিলকরণ নিয়ে কথা বলেন। সেই সাথে তিনি বিভিন্ন সেক্টর সমূহের মাঝে সমন্বয় ঘটানো এবং জেন্ডার ভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধ ও প্রতিকারে বিভিন্ন মহলের দায়িত্বের উপর জোর দেন।
প্যানেল ও মুক্ত আলোচনা পর্বে অংশগ্রহণ করেন উম্মে কুলসুম, জয়েন্ট সেক্রেটারি, আইন ও বিচার বিভাগ, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, প্রফেসর ড. সামিনা চৌধুরি, সাবেক প্রেসিডেন্ট, অবস্টেট্রিক অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি অব্ বাংলাদেশ, শামিমা বেগম, পিপিএম, জয়েন্ট কমিশনার (ট্রান্সপোর্ট), ডিএমপি ও ভাইস প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশ পুলিশ উইমেন নেটওয়ার্ক (ইচডঘ) এবং নার্গিস খানম, জয়েন্ট সেক্রেটারি, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এই পর্বটি সঞ্চালনা করেন ফারাহ কবির, কান্ট্রি ডিরেক্টর, অ্যাকশন এইড বাংলাদেশ। আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয়, ডিএনএ আইন, আইন প্রণয়ন, সংশোধন ও আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ, প্রশাসনের অবকাঠামোকে শক্তিশালীকরণ, যৌন সহিংসতা প্রতিরোধে সচেতনতা তৈরি এবং জেলাপর্যায় থেকে শুরু করে উপজেলা পরিষদ পর্যন্ত সর্বস্তরে যৌন সহিংসতা প্রতিরোধ কমিটি গঠন ও একে শক্তিশালীকরণ – এই সমস্ত বিষয় মুক্ত আলোচনায় গুরুত্বের সাথে উঠে এসেছে।
এই আয়োজনে সমাপনী বক্তব্য রাখেন অনুষ্ঠানের চেয়ারপার্সন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোঃ মুহিবুজ্জামান। তিনি তাঁর বক্তব্যে আইন, নীতিমালা, মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অঙ্গসমূহের মাঝে সমন্বয়ের কথা বলেন যা সামাজিক ও প্রেরণামূলক, আইনগত এবং প্রশাসনিক এই তিন উপায়ে বাস্তবায়ন করা সম্ভব।