পিপ : পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার বনগ্রামে আত্রাই নদীর উপরে ২ কোটি ৭৩ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নির্মিত ব্রিজ ও সংযোগ সড়ক উদ্বোধনের আগেই ধ্বসে পড়েছে। ফলে মালবাহী একটি ট্রাক উল্টে বসতবাড়ির মধ্যে মধ্যে ঢুকে পড়ায় শিশুসহ ঘরে থাকা দুই নারী আহত হয়েছে। এই ঘটনার পরে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছে স্থানীয়রা। এলাকাবাসীর অভিযোগ নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে রাস্তার কাজ করায় এই অবস্থা হয়েছে।
সরেজমিন দেখা যায়, দিনমজুর রমজান আলী শেখ ও মাজেদা খাতুনের রাস্তার পাশে একটি চারচলা টিনের ভাঙ্গা ঘর মেরামত করছে তাদের সন্তানরা। ঘরটি ঝড় কিংবা কোন প্রাকৃতিক দূর্যোগে ভেঙে পড়েনি। সম্প্রতি রাস্তায় সৃষ্টি হওয়া গর্তে পড়ে একটি মালবাহী ট্রাক উল্টে তাদের ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ে। ঘটনাটি ঘঠেছে সাঁথিয়া উপজেলার বনগ্রামের পূর্ব পাশে মহাসড়কের উত্তরে আত্রাই নদীর পাশে। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে ২ কোটি ৭৩ লক্ষ টাকা ব্যয়ে এই স্থানে ব্রিজ ও সংযোগ সড়ক নির্মান কাজ করে এলজিইডি। ৩০ জুন এই কাজ শেষ হয়। এই কাজটি বাস্তবায়ন করছে ওহী কনষ্ট্রাকশন নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু রাস্তাটি নির্মাণ করার কিছু দিনের মধ্যে বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে ছোট বড় খানাখন্দ ও ফাটল। রাস্তার পাশে গার্ডার পোল গুলো ভেঙ্গে পড়েছে। রাস্তা ও ব্রিজ নির্মাণ নিয়ে অনিয়মের প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় লোকজন ও জনপ্রতিনিধিরা।
দিনমজুর রমজান আলী বলেন,এই রাস্তার নির্মান কাজের সময় রাস্তার পাশ থেকে মাটি কেটে এনে ভরাট করা হয়েছিল। কোন মত রোলার করে বালু ও নিম্নমানের খোয়া দিয়ে রাস্তার পিচ ঢালাই করা হয়েছে। রাস্তার পাশে দাড় করানো সেই ট্রাকের ভার সহ্য করতে না পেরে রাস্তা ধ্বসে আমার ঘর টি নষ্ট করেছে এর ক্ষতি পুরুন দেবে কে ? তাই রাস্তাটি সুন্দর করে তৈরি করে দিক সরকারের কাছে দাবী।
এলাকাবাসি আরও জানান, রাস্তার কাজ করার শুরুতেই নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করেছে এই কারনে রাস্তাটির এই অবস্থা। ঠিকাদার প্রভাবশালী হওয়ার কারনে কেউ কোন কথাই বলিনি। এক বছরের মধ্যেই রাস্তাটি নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়াও হারুন ঠিকাদারের করা কোন কাজই ভালো হয় না বলে তারা জানান। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন স্থানীয় ব্যাক্তি জানান, হারুন কয়েক বছর আগেও বেড়া সিএন্ডবিতে খরি বিক্রি করত। ঠিকাদারী করে এখন সে কয়েক কোটি টাকার মালিক। ঠিকাদার হারুন অর রশিদ সাঁথিয়ায় উপজেলার করমজা সরদার পাড়া গ্রামের মৃত মোক্তার সরদারের ছেলে।
ক্ষেতুপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ মনসুর আলম পিন্চু বলেন, এই সড়কের কাজ করার সময় নানা অনিয়মের কথা ইউএনও সাহেবকে অবগত করেছি। সরকারের পৌনে তিন কোটি টাকার কাজে অনিয়মে দেশের উন্নয়নে ব্যহত হচ্ছে। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে এলাকার চেয়ারম্যান ও এলাকাবাসি পক্ষ থেকে রাস্তার কাজ পূণনির্মাণ করার দাবী জানানো হয়।
এ ব্যাপারে ঠিকাদার হারুন অর রশিদের সাথে মুঠফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, কাজটি ডিজাইন মোতাবেক সুন্দর করে করা হয়েছে। এই কাজ সংশ্লিষ্ঠ দপ্তর বুঝে নিয়েছে। কোথাও কোন ধ্বস ও ভেঙ্গে যাওয়ার ঘটনা ঘঠেনি।
সাঁথিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস এম জামাল আহমেদ বলেন, এই বিষয়টি আমি অবগত আছি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি জানানো হয়েছে। নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করার ফলে উদ্বোধনের আগেই ভেঙ্গে পড়েছে। এ বিষয়ে আমরা ঠিকাদারকে চিঠি দিয়েছি লিখিতভাবে জবাব দেওয়ার কথাও বলেছি।