পাবনায় স্কুলের ঘর বিক্রির টাকা আত্মসাৎ এর অভিযোগ প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে

শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সরকারি বিধি বর্হিভূতভাবে স্কুলের ৪৫ হাত সেমিপাকা ঘর বিক্রি করে টাকা আত্মসাৎ এর অভিযোগ পাওয়া গেছে কৃষ্ণপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় পাবনা’র প্রধান শিক্ষক শাহনাজ পারভীন’র বিরুদ্ধে। বিদ্যালয়টির কয়েকজন শিক্ষক মিলে পাবনা জেলা প্রশাসক বরাবর এই অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগসুত্রে বলা হয় সৈরাচারি সরকারের আর্শিবাদপুষ্ট প্রধান শিক্ষক শাহনাজ পারভীন, সহকারি প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) মাহমুদুল হাসান, ইংরেজীর সিনিয়র শিক্ষক এ বি এম ইদ্রিস আলী যোগসাজসে কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে টেন্ডার ছাড়াই ঘর বিক্রি করে ১৫ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। বিষয়টি তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য জেলা প্রশাসকের নিকট জোড়ালো দাবি জানান অভিযোগ আনিত শিক্ষকবৃন্দ। সেই সাথে শিক্ষা সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন দপ্তরে অনুলিপি প্রদান করেন তারা।

সূত্রমতে আরও জানা যায়, প্রধান শিক্ষক শাহনাজ পারভীন বিদ্যালয়টির অনৈতিক সুবিধাভোগী ৩ সিনিয়র শিক্ষককে সঙ্গে নিয়ে অসমাঞ্জস্য ভাউচারের মাধ্যমে বিভিন্ন কেনাকাটার নামে বিপুল পরিমান টাকা আত্মসাৎ করে যাচ্ছেন। ২০১৯ খ্রি. কেনা কাটার জন্যে ক্রয় সংক্রান্ত কমিটি করেন। কিন্তু কমিটির সাথে কোন আলোচনা ছাড়াই নিজের পছন্দমত একজন সহকারি শিক্ষককে সঙ্গে নিয়ে ইচ্ছেমত বিল ভাউচারের মাধ্যমে কেনাকাটা করে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। বিগত ৩ বছর শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার সরঞ্জাম ও বিজ্ঞানাগারের সরঞ্জাম নেই বললেই চলে। আইসিটি ক্লাসের জন্য বিদ্যালয়ে ৮টি কম্পিউটার ছিল। শিক্ষার্থীরা হাতে কলমে শিখত এবং অনুশিলন করতো। ২০১৭ খ্রি. থেকে তিনি কম্পিউটর নিজের হেফাজতে নিয়েছেন। ২০১৮ খ্রি. থেকে ২০২২ পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করতে দেয়া হয় না। এই কারণে দুইটি কম্পিউটার কোন রকম সচল রয়েছে, বাকী ৬টি কম্পিউটার দীর্ঘ সময় ব্যবহার না করায় নষ্ট হয়ে গেছে।

এসব অনিয়ম নিয়ে বিগত সময়ের জেলা শিক্ষা অফিসার এস এম মোসলেম উদ্দিন জানান, কৃষ্ণপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের (ভারপ্রাপ্ত) প্রধান শিক্ষক শাহনাজ পারভীন’র বিরুদ্ধে অনিয়ম, দূর্ণীতি, সেচ্ছাচারিতা ও অশালীন আচরনের ব্যাপারে জেনেছি। যেহেতু বিদ্যালয়টি সরকারি সেই ক্ষেত্রে পদাধিকার বলে সভাপতির দায়িত্ব জেলা প্রশাসকের। জেলা প্রশাসক স্যারের সাথে আলাপ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

অনিয়ম নিয়ে বিগত সময়ের পাবনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) শাহেদ পারভেজ জানান, প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ আসছে, তাকে বার বার সতর্ক করা সত্ত্বেও কেন তিনি শুনছেন না, বিষয়টি বোধগম্য নয় ?

পাবনা’র সাবেক জেলা প্রশাসক কবির মাহমুদ এ বিষয়ে জানান, প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) শাহনাজ পারভীন’র বিরুদ্ধে কয়েকজন শিক্ষক অভিযোগ করলে তিনি তাদের শান্ত থাকার নির্দেশ দিয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

২০১৯ খ্রি. ৪ আগস্ট প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) শাহনাজ পারভীন’র বিরুদ্ধে অনিয়ম, দূর্ণীতি, সেচ্ছাচারিতাসহ বিভিন্ন বিষয়ের প্রতিকার চেয়ে বিদ্যালয়টির ৭ জন শিক্ষক স্বাক্ষরিত একটি অভিযোগপত্র রাজশাহী অঞ্চলের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা উপ-পরিচালক সমীপে প্রেরণ করেন।

রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ড. শরমিন ফেরদৌস চৌধুরী ২০১৯ খ্রি. ২৪ আগস্ট পাবনা জেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর অভিযোগের ছায়ালিপিসহ প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) শাহনাজ পারভীন’র বিরুদ্ধে সরেজমিন তদন্তপূর্বক সুস্পষ্ট মতামতসহ ৫ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে আদেশ দেন। পাবনা জেলা শিক্ষা অফিসার এস এম মোসলেম উদ্দিন সরেজমিন তদন্ত সাপেক্ষে সকল অভিযোগ প্রমানিত হওয়ায় মতামত দেন কৃষ্ণপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় সুষ্ঠভাবে পরিচালনার জন্য শুন্য পদে একজন প্রধান শিক্ষক পদায়ন করা অথবা প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) শাহনাজ পারভীন কে অন্য বিদ্যালয়ে বদলী করে ঐ পদে একজন সহকারি প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার কথা জানান।

প্রধান শিক্ষক শাহনাজ পারভীন’র খামখেয়ালী সেচ্ছাচারিতার কারণে ২০২২ শিক্ষাবর্ষে বার্ষিক পরীক্ষার ৯ম শ্রেণির ইংরেজি প্রথম পত্রের প্রশ্নে ৬৯টি ভুল, দ্বিতীয় পত্রে ২৪টি, অষ্টম শ্রেণির ইংরেজি প্রশ্নপত্রে ২৩টি, সপ্তম শ্রেণির ইংরেজি প্রথম পত্রে ৮০টি, দ্বিতীয় পত্রে ১৭টি, ষষ্ঠ শ্রেণির প্রথম পত্রে ৭৪টি দ্বিতীয় পত্রে ৭টি ভুল থাকায় অনেক অভিভাবকবৃন্দ মুখ ফিরিয়ে নিয়ে নিজের মেয়েদের অন্য বিদ্যালয়ে ভর্তি করে দিচ্ছেন।

এসব অভিযোগের বিষয় নিয়ে রাজশাহী অঞ্চলের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা উপ-পরিচালক ড. শরমিন ফেরদৌস চৌধুরী এর সাথে মুঠোফোনে কল দিলে মোবাইল রিং কেটে দেন।

এসব অনিয়মের বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক শাহনাজ পারভীন সাংবাদিককে বলেন, এক দুই সাংবাদিক নিউজ করে কি করবে? অনেক সিনিয়র সাংবাদিক আমার আত্মীয়। তিনি আরও বলেন এগুলো আমাদের স্কুলের বিষয়, সাংবাদিকদের এসব বিষয়ে নাক না গলালেও চলবে।

জেলা শিক্ষা অফিসার রোস্তম আলী হেলালী অভিযোগ বিষয়ে বলেন, অভিযোগ নিয়ে বিগত সময়ের অনেক বিষয়ে সংশ্লিষ্টতা আসছে, তাই তদন্ত একটু সময় লাগবে। তদন্ত কাজ শেষ করে আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট তথ্য প্রেরণ করবো।

পাবনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইটিসি) মাহফুজা সুলতানা এসব অনিয়মের বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে বলেন, তদন্ত চলছে পুরো তথ্য আসলে বিষয়টি আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষে পাঠানো হবে।

পাবনার জেলা প্রশাসক মফিজুল ইসলাম বলেন, আমি পাবনায় নতুন জয়েন করেছি, বিষয়টি এখনও আমার অবগত নয়। তবে অভিযোগ প্রমানিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *