পাবনায় ৩ লক্ষাধিক কোরবানির পশু প্রস্তুত ; বিক্রি নিয়ে চিন্তিত খামারীরা

শেয়ার করুন

রফিকুল ইসলাম সুইট : পাবনার চলনবিল, গাজনার বিল, পদ্মা ও যমুনা নদীর চরসহ জেলার সর্বত্র পশু পালন করছে খামারিরা। তিন লক্ষাধিক কোরবানীর পশু পালন করে পাবনার খামারীরা জেলায় কোরবানির জন্য প্রয়োজন হয় দুই লক্ষাধিক। এবারও জেলার চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা চট্রগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায় লক্ষাধিক কোরবানির পশু বিক্রি করার আশায় ছিল পাবনার খামারীরা। করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য বিধি মানতে ব্যাপারী না আসায় এবং দাম কম হওয়ায় কোরবানির পশু বিক্রি নিয়ে চিন্তিত পাবনার খামারিরা। জেলার বিভিন্ন পশুর হাট ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।

পাবনার খামারী এবং গরু ছাগল ব্যবসার সাথে জড়িত কয়েকজন জানিয়েছেন, এবারের কঠোর লকডাউনে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে পাবনা সদরের হাজির হাট, তারাবাড়িয়া হাট, আতাইকুলার পুষ্পপাড়া হাট, দাশুরিয়া হাট, সাঁথিয়ার ধুলাউড়ি হাট, বেড়ার সিঅ্যান্ডবি চতুরহাট, নাকালিয়া, নগরবাড়ি হাট, সুজানগর হাট, চাটমোহর পশুর হাটগুলোতে কমসংখ্যক গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া আমদানি হচ্ছে। হাটে ক্রেতার সংখ্যা খুবই কম।
পাবনা সদরের সবচেয়ে বড় পশুর হাট হাজির হাট শুক্রবারে এ হাটে গিয়ে দেখা গেছে স্বাস্থ্য বিধি নিয়ে সবসময় মাইকিং হচ্ছে তারপরও খামারীরা পশু নিয়ে হাটে আসছে। তবে তুলনামুলকভাবে হাটে পশু, ব্যাপারী এবং ক্রেতা কম। হাট কতৃপক্ষের সেলিম নামের একজন জানিয়েছেন যে, এবার তুলনামুলক পশুর দাম কম। অনেকে পশু ফেরৎ নিয়ে যেতে দেখা গেছে। ধারনা করা হচ্ছে ২০-২৫ ভাগ পশু বিক্রি হবে না।
বেড়া সিঅ্যান্ডবি চতুরহাট সরেজমিন দেখা যায়, হাটে গবাদি পশুর আমদানি কম। নসিমন, করিমন বন্ধ থাকায় দূর-দূরান্ত থেকে পায়ে হেঁটে গরু নিয়ে হাটে আসছেন অনেকে। বাস চলাচল বন্ধ থাকায় ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যাপারী ও পাইকাররা আসতে পারছেন না।
চাটমোহরের আবুর কাশেম জানান, প্রায় দেড় বৎসর ধরে চারটি গরু পালন করে আসছি কোরবানের আগে বিক্রি করব এবং বিক্রির টাকা দিয়ে একটা কিছু করব। করোনার কারণে হাটে ক্রেতা কম ব্যাপারী নাই এজন্য গরুর দাম কম। দেড় বৎসর ধরে যে স্বপ্ন দেখছিলাম করোনার প্রকোপে গরুর দাম কম হওয়ায় তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না।

আটঘরিয়ার কাজী শামসুল আলম জানান, আমি অনেক কষ্ট করে আমার দুই গরু রাজা বাদশাকে লালন পালন করেছি। খায়ে না খায়ে গরু দুইটি কখনো অনাহারে রাখিনি। তিনি গরু দুইটি ভালো দাম পেলে বিক্রি করবেন বলে আশাবাদী। করোনা ভাইরাস সংক্রমণে বাজারে তোলা সম্ভব নয়, তাই যাহারা গরু কিনতে আগ্রহী তাদের এই মোবাইল ০১৭১১৪৭৬৬৮৯ নম্বরে যোগাযোগ করতে বলেছেন তিনি।

সদর জালালপুরের রাজু আহম্মেদ (খামারী) জানান ২০১৫ সাল থেকে বানিজ্যিক ভাবে ষাড় গরুর খমার গড়ে তুলি। বিভিন্ন জেলা থেকে ভালো জাতের ষাড় গরু সংগ্রহ করে নিজের খামারে এনে তাকে লালন পালন করে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করি। কোরবানির ঈদ ছাড়াও অন্য সময়েও আমি গরু বিক্রি করি। তবে কোরবানীর ঈদের জন্য প্রতি বছর চেষ্টা করছি একটি বড় গরু তৈরি করার। গতবার অনেক গরু ছিলো এবার তুলনামূলক কম। তবু শতাধীক গরু রয়েছে আমার। আর এবারে আমার খামারে পাবনার রাজা নামে যে গরুটি রয়েছে সেটি বাংলাদেশের মধ্যে অন্যতম বড় গরু। ভালো দাম পেলে বিক্রি করবো। তবে করোনার জন্য আমি কোন গরু হাটে নিবো না। খামার থেকেই গরু বিক্রি করে দিবো। গরু কিনতে আগ্রহী তাদের এই মোবাইল ০১৭১৬ ২৩৪৩০০ নম্বরে যোগাযোগ করতে বলেছেন তিনি। আমার কাছে থেকে গরু কিনলে নিজ দায়িত্বে ক্রেতাদের বাড়িতে পৌছে দেয়া হবে।

জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. আল-মামুন হোসেন বলেন, পাবনায় তিন লক্ষাধিক গরু-মহিষ-ছাগল-ভেড়া কোরবানী উপলক্ষে বিক্রি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পাবনা জেলায় কোরবানীর জন্য ২ লক্ষ এরমত পশু প্রযোজন হয় বাকী এক লক্ষ পশু জেলার বাইরে বিক্রি হবে। জেলার চাহিদা মিটিয়ে অন্যে জলার চাহিদা মেটাতে বিষেশ ভুমিকা রাখে। তিনি আরও বলেন, বাণিজ্যিক ভিত্তিতে জেলায় প্রায় ২১ হাজার খামারি রয়েছেন যারা বিভিন্ন ধরনের গবাদি পশু লালন-পালন করছেন। এছাড়াও জেলায় অন্তত ১০ হাজার খামারি ক্ষুদ্র পরিসরে গরু মোটাতাজাকরণ করছেন।


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *