স্টাফ রিপোর্টার : পাবনা শহরের শত বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কামিল (আলিয়া) মাদ্রাসার সাবেক সভাপতি মো. কালাম আহম্মেদ ও অধ্যক্ষ মো. আনছারুল্লাহর বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাৎ’র অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির গভর্নিং বডির সভাপতি ফখরুল ইসলাম সুজা ২০২৪ খ্রি. ২০ আগস্ট এ বিষয়ে তদন্ত চেয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে একটি লিখিত অভিযোগপত্র দেন। অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, গোপনে প্রতিষ্ঠানের জমি বিক্রয়, ৫৬ টি দোকানের জামানত বাবদ ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকা প্রতিষ্ঠানের নামে জমা না দিয়ে হিসাবে গরমিল, রেজুলেশন ছাড়াই প্রতিষ্ঠানের মালামাল ক্রয়-বিক্রয়ের ভূয়া বিল ভাউচার করে অর্থ আত্মসাৎ সহ বেশ কয়েকটি লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়। এতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে তদন্তের জন্য ২০২৪ খ্রি. ৩রা সেপ্টেম্বর অভিযোগ পত্রটি পাবনা জেলা প্রশাসককে দেওয়া হলে তিনি বিষয়টি তদন্তের জন্য পাবনা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামীমা সুলতানাকে নির্দেশনা প্রদান করেন। তদন্ত কার্যক্রম সুষ্ঠভাবে সম্পাদনের জন্য সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. হাফিজুর রহমানকে প্রধান করে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে অপর ২জন হলো উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. সিরাজুল ইসলাম ও উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মো. রবিউল আলম। অভিযোগে পাবনা কামিল (আলিয়া) মাদ্রাসার সাবেক সভাপতি মো. কালাম আহম্মেদ ও অধ্যক্ষ মো. আনছারুল্লাহর পেশী শক্তির জোরে নানা অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাৎ এর মাধ্যমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ব্যক্তি মালিকানা প্রতিষ্ঠানে পরিনত করেছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একিধিক নির্ভরযোগ্য সুত্রে জানা যায়, পাবনা কামিল (আলিয়া) মাদ্র্রাসার প্রায় ৫৪ টি দোকান রয়েছে। ১৫ টি দোকানের জামানত বাবদ প্রতিটি দোকান থেকে ৭/৮ লক্ষ টাকা করে প্রায় ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকা উত্তোলন করে প্রতিষ্ঠানের একাউন্টে জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করেছেন। মাদ্রাসার নামে মার্কেটের বেশির ভাগ দোকানের পজিশন বিক্রি করা হয়েছে। প্রতিটি দোকানের পজিশন বিক্রয় বাবদ ২৫ থেকে ৩০ লক্ষ টাকা করে প্রায় ১৫ কোটি টাকা উত্তোলন করে নাম মাত্র টাকা প্রতিষ্ঠানে জমা দিয়ে অবশিষ্ট টাকা কালাম আহম্মেদের পকেট করার অভিযোগ রয়েছে।
সুত্রে আরও জানা যায়, পাবনা মালঞ্চি ইউনিয়নের মাহমুদপুর মৌজার হারিয়াবাড়ী এলাকায় কামিল (আলিয়া) মাদ্রাসার নামে দানকৃত ৩ বিঘা জমি। এই জমি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের নাম করে ২০১৪ খ্রি. ২২ মার্চ ৫৩ লক্ষ টাকায় বিক্রি করেন পাবনা দ্বীপচর এলাকার ইয়াছিন আলী নামের ব্যক্তির নিকট। খোঁজ নিয়ে জানা যায় উল্লেখিত টাকার মধ্যে সামান্য কিছু টাকা প্রতিষ্ঠানে জমা দিলেও বাকী টাকার কোন হদিস নেই। অভিযোগ রয়েছে পুরাতন অনার্স ভবনে নীচ তালায় মারুফ নামের এক ব্যাক্তিকে কামিল (আলিয়া) মাদ্রাসার খন্ডকারীন কস্পিউটার অপারেটর পদে নিয়োগ দিয়ে ৪ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার। পাবনা সদর উপজেলার বাকচি পাড়া লোহাগাড়া গ্রামে আলিয়া মাদ্রাসার নামে ২ বিঘা জমি দখল মুক্ত করে সাবেক অধ্যক্ষ আনছারুল্লার সহযোগিতায় গোপনে বিক্রি করেছে কালাম আহম্মেদ যেটি আজও মাদ্রাসার বর্তমান গভর্নিং বডির কাছে অজানা বলে জানা গেছে। একাদশ জাতীয় সংসদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির ১৮তম বৈঠকে গৃহিত সিন্ধান্ত বাস্তবায়নের এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতাধীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহের স্কুল ও কলেজ গেইটের সামনে কোন স্থায়ী ও অস্থায়ী দোকান/স্থাপনা রাখা যাবে না। ২০২০ খ্রি. ২রা ডিসেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রফেসর মো. শাহেদুল খবির চৌধুরী (পরিচালক কলেজ ও প্রশাসক) স্বাক্ষরিত একটি আদেশের চিঠি দেওয়া পাবনা আলিয়া কামিল মাদ্রাসায়। চিঠিতে মাদ্রাসার গেইটের সামনে থেকে দোকান উচ্ছেদের উল্লেখ করা হয়। কিন্তু কালাম আহম্মেদ শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের নির্দেশকে উপেক্ষা করে তার নিজ দোকানের আয়তন আরও বৃদ্ধি করে বড়পরিসরে করে ব্যাবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। এসব বিষয়ে কালাম আহমেদের সঙ্গে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করলে তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
পাবনা কামিল (আলিয়া) মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আনছারুল্লার সঙ্গে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন এ সব আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।
আলিয়া মাদ্রাসার গভার্নিং বডির সভাপতি ফখরুল ইসলাম সুজার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ এনে পর পর দুইটি শোকজের নোটিশ দিয়েছে এখন পর্যন্ত কোন জবাব দেননি।
তদন্ত কমিটির প্রধান উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. হাফিজুর রহমান এ বিষয়ে জানান, তদন্ত অনেকাংশেই এগিয়েছে এবং এখনও চলমান। এ ঘটনায় সচেতন মহল মনে করছেন সুষ্ঠু তদন্তের জন্য উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা প্রয়োজন।