পাবনা সুজানগরে প্রকল্পের নামে সরকারি গাছ কেটে প্রায় কোটি টাকা আত্মসাৎ

শেয়ার করুন

সুজানগর (পাবনা) প্রতিনিধি : পাবনা সুজানগর উপজেলার ভাঁয়না, সাতবাড়ীয়া, দুলাই ও নাজিরগঞ্জ ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত কয়েকটি গ্রামের ৮ কিলোমিটার সরকারি কোন নিয়মনীতি না মেনেই সড়কের পাশে প্রায় কোটি টাকা মুল্যের শত শত বাবলা গাছ প্রকাশ্যে কেটে নেওয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে জলবায়ু সহিষ্ণু বাংলাদেশ গড়ার জন্য সরকার থেকে অপ্রয়োজনে গাছ না কাটা ও পতিত জমিসহ সড়কের পাশে বেশি বেশি করে গাছ লাগানোর কথা বলা হলেও সরকারের এই নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান ও স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ম্যানেজ করে সাকো প্রতিবন্ধী সামাজিক বনায়ন প্রকল্পের নির্বাহী পরিচালক ইমান আলী নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য গাছগুলো নিধন করছেন বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়দের।

উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার নাজমুল হাসান জানান, সাকো প্রতিবন্ধী সামাজিক বনায়ন প্রকল্প নামে কোন সংগঠনের রেজিস্ট্রেশনই করা নেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বন বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, সুজানগর পৌরসভার ভবানীপুর এলাকার বাসিন্দা ইমান আলী বন বিভাগের বাগান মালী হিসেবে কর্মরত থেকে চাকুরীর মেয়াদ শেষ হওয়ায় সম্প্রতি সিরাজগঞ্জ বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে অবসর গ্রহন করেন। চাকুরী করাকালীন সময়েই তাঁর ছেলে বর্তমানে নারায়ণগঞ্জের একটি কলেজে প্রভাষক হিসেবে কর্মরত তুষারকে সভাপতি ও তিনি নিজেই নির্বাহী পরিচালক নাম ব্যবহার করে সাকো প্রতিবন্ধী সামাজিক বনায়ন প্রকল্পের নামে দেখিয়ে এ মূল্যবান গাছগুলি নিধন করে বিক্রি করে যাচ্ছেন।

গতকাল সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সুজানগর উপজেলার ভাঁয়না ইউনিয়নের হেমরাজপুর মুজিব বাধ হতে মটপাড়া বিল পর্যন্ত ১ কিলোমিটার, একই ইউনিয়নের কেস্টপুর হতে দূর্গাপুর হয়ে মতিয়ার বিল পর্যন্ত ২কিলোমিটার, সাতবাড়ীয়া ইউনিয়নের মুজিব বাধ হতে শ্যামনগর গ্রাম পর্যন্ত ১ কিলোমিটার, নাজিরগঞ্জ ইউনিয়নের মুজিববাধ হতে জুঙ্গালভাঙ্গা হালট পর্যন্ত ১ কিলোমিটার, দুলাই ইউনিয়নের শান্তিপুর হতে কামারপাড়া পর্যন্ত ১ কিলোমিটার ও একই ইউনিয়নের চিনাখড়া হতে বগাজানি পর্যন্ত ১ কিলোমিটার এবং খয়রান ব্রিজের মোড় হতে কাপালীপাড়া হয়ে মানিকহাট ইউনিয়নের উলাট পর্যন্ত ১ কিলোমিটার সড়কের পাশে তাদের লাগানো গাছ দাবি করে এবং প্রাকৃতিক দূযোর্গ এবং দুস্কৃতিকারীদের কবলে পরে বাগানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে দাবি করে মূল্যবান গাছগুলো কাটছে সাকো প্রতিবন্ধী সামাজিক বনায়ন প্রকল্প নামে ভুঁইফোড় ওই সংগঠনটির নির্বাহী পরিচালক। সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী, বন বিভাগের নিয়ন্ত্রণাধীন নয় বা বন বিভাগের সামাজিক বনায়ন কর্মসূচির আওতাভুক্ত নয় এইরুপ সড়ক ও জনপথ , রেলপথ, বাঁধ সংযোগ সড়ক, জেলা পরিষদ সড়ক, স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল বিভাগের সড়ক সহ অন্যান্য সরকারি মালিকানাধীন ভূমি হতে বনজদ্রব্য আহরণ, অপসারণ বা পরিবহনের প্রয়োজন হইলে ভূমি নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের ন্যূনতম জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাকে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করতে হয়। পরবর্তীতে আবেদনের প্রেক্ষিতে অনধিক ৪৫(পঁয়তাল্লিশ) কার্যদিবসের মধ্যে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বা তার নিকট হইতে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোন কর্মকর্তা কর্তৃক যথাযথ তদন্ত পূর্বক বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বনজদ্রব্য কর্তন ও আহরণের অনুমতি প্রদান করিবেন।

পাবনা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কাশ্যপী বিকাশ চন্দ্র জানান, সম্পূর্ণ অবৈধভাবে গাছগুলো কর্তন করা হচ্ছে। এ ধরণের গাছ কাটতে হলে সংশ্লিষ্ট ওই সংগঠনের একটি রেজুলেশন সহ স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনের নিকট আবেদন করতে হয়। আবেদনের প্রেক্ষিতে উপজেলা মাসিক সমন্বয় সভায় উপস্থাপনের মাধ্যমে লিখিত আকারে গাছ কাটার জন্য রেজুলেশন ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সহ পাবনা জেলা প্রশাসক বরাবর প্রেরণ করবেন। পরবর্তীতে পাবনা জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে আবেদনটি পাবনা বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কার্যালয়ে (সামাজিক বন বিভাগ) এর নিকট পাঠাবেন। পরে গাছ পরিদর্শন সহ মূল্য নির্ধারণ করে গাছ কাটার অনুমতিপত্র প্রাপ্তি সাপেক্ষে দরপত্রের মাধ্যমে গাছ বিক্রির কথা থাকলেও এর কোন শর্তই মানা হয়নি।

সুজানগর সামাজিক বনায়ন নার্সারী ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নূরুল ইসলাম বলেন, উপজেলা প্রশাসন থেকে আমাদের কাছে জীবিত ও কর্তনকৃত ওই সকল গাছের মূল্য নির্ধারণ করে চাইলে আমরা সেটি করতে প্রস্তুত রয়েছি। থানার ওসি আব্দুল হাননান জানান, ভাঁয়না ইইনয়নের দূর্গাপুরে অবৈধভাবে গাছ কাটা হচ্ছে স্থানীয় এলাকাবাসীর মাধ্যমে খবর পেয়ে সাকো প্রতিবন্ধী সামাজিক বনায়ন প্রকল্পের নির্বাহী পরিচালক ইমান আলীকে গাছ কাটার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে থানায় আসতে বলা হলেও তিনি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখাতে পারেননি।

সুজানগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রওশন আলী এ বিষয়ে জানান, গতকাল খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অবৈধভাবে কর্তনকৃত গাছগুলো জব্দ করা হয়েছে। এবং অবৈধভাবে এ গাছকাটার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ বিষয়ে সাকো প্রতিবন্ধী সামাজিক বনায়ন প্রকল্পের নির্বাহী পরিচালক ইমান আলী জানান সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে অবগত করে নিয়ম মেনেই তিনি গাছ কাটছেন।

পাবনা-২ আসনের সংসদ সদস্য আহমেদ ফিরোজ কবির জানান, গাছ কাটার বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত ছিলাম না। যেহেতু এখন অবগত হলাম। এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে ঘটনার সত্যতা পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এদিকে স্থানীয় এলাকাবাসী সরকারি রাস্তার গাছ এভাবে প্রকাশ্যে কেটে নেওয়ায় ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নিকট দাবি জানিয়েছেন।


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *