আমাদের দিন যেন কাটে আল্লাহ তায়ালার বিশেষ আমলে। প্রিয়নবী রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদের জান্নাত পাওয়ার এবং বেশি সওয়াব লাভের জন্য দোয়া শিখিয়েছেন। যা আমরা নিয়মিত আমল করতে পারি। তবে প্রতিদিন বিশেষ তিনটি আমল করতে পারেন যে কোনো সময়। যে আমলগুলোর ফজিলত অনেক বেশি। রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজে করতেন এবং তার উম্মতকে এ তিনটি আমল বেশি বেশি করার নির্দেশ দিয়েছেন।
রাসূলুল্লাহ (সা.) দিনভর সবচেয়ে বেশি সংখ্যক সময়ে ৩টি আমল করার নির্দেশ দিয়েছেন। তাহলো- আয়াতুল কুরসি, ৩ কুল এবং ৩ তাসবিহ। এ আমলগুলো প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর এবং সকাল-সন্ধ্যায় করার কথা বলেছেন বিশ্বনবী।
নিয়মিত আয়াতুল কুরসি পড়ার ফজিলত
প্রত্যেক ফরজ নামাজের সালাম ফেরানোর পর ১ বার আয়াতুল কুরসি পড়ার কথা বলেছেন বিশ্বনবী (সা.)। যদি কেউ ফরজ নামাজের পর এ আমল করে আর তার শিরক ও বান্দার হক সম্পর্কিত কোনো অপরাধ না থাকে তবে মৃত্যুই তার জান্নাতে যাওয়ার জন্য একমাত্র বাঁধা। হাদিসে এসেছে- হজরত আবু উমামা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পড়বে, ওই ব্যক্তির জন্য জান্নাতে প্রবেশ করা মৃত্যু ছাড়া আর কোনো কিছু বাধা হবে না।’ (বুখারি, নাসাঈ, তাবারানি)
আর যে ব্যক্তি সকাল ও সন্ধ্যায় ১ বার আয়াতুল কুরসি পড়ে তবে ওই ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালা দুনিয়ার যাবতীয় অনিষ্ট ও ক্ষতি থেকে তার নিরাপত্তায় নিয়ে যান। রাসূলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন- ‘রাতে যখন ঘুমাতে যাবে তখন আয়াতুল কুরসি (আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যুম) পড়ে ঘুমাবে তাহলে আল্লাহ তোমার জন্য একজন ফেরেশতাকে পাহারাদার নিযুক্ত করবেন। যে তোমার সঙ্গে থাকবে আর কোনো শয়তান সকাল পর্যন্ত তোমার কাছে আসতে পারবে না।’
নিয়মিত ৩ কুল পড়ার ফজিলত
কোরআনুল কারিমে শেষ ৩ সুরা যদি কেউ প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর ১ বার পাঠ করার অনেক ফজিলতের কথা হাদিসে বলা হয়েছে। আবার সকাল এবং সন্ধ্যায় শোয়ার আগে যদি কেউ ৩ বার এ সুরাগুলো পাঠ করে তবে সারাদিন ও রাতের জন্য সব ক্ষতি থেকে মহান আল্লাহ তায়ালা তাকে হেফাজতের জন্য যথেষ্ট হয়ে যান বলে ঘোষণা দিয়েছেন স্বয়ং বিশ্বনবী। হাদিসে এসেছে-
> শয়তানের অনিষ্ট ও জাদুটোনা থেকে বাঁচতে সকাল-সন্ধ্যায় এ ৩ সুরার আমল খুবই কার্যকরী। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যা সুরা ইখলাস ও এই দুই সুরা ( সুরা ফালাক ও সুরা নাস) পড়বে সে সব বিপদ-আপদ থেকে নিরাপদ থাকবে।’ (তিরমিজি)
> ফজর আর মাগরিবের এই দুই ওয়াক্তের ফরজ নামাজের পর সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক ও সুরা নাস প্রতিটি তিনবার করে পড়া সুন্নত। অন্যান্য ফরজ সালাতের আদায় করে একবার করে এই তিন সুরা পড়ার কথা বলা হয়েছে।’ (আবু দাউদ)
> হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, ‘রাসূলুল্লাহ (সা.) প্রতি রাতে যখন ঘুমাতে যেতেন, তখন নিজের উভয় হাত এক সঙ্গে মিলাতেন। তারপর সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক, সুরা নাস পড়তেন এবং উভয় হাতে ফুঁক দিতেন। তারপর দেহের যতটুকু অংশ সম্ভব হাত বুলিয়ে নিতেন। তিনি মাথা, মুখমণ্ডল ও শরীরের সামনের অংশ থেকে শুরু করতেন। তিনি এরূপ তিনবার করতেন।’ (বুখারি)
শুধু তা-ই নয়- সকাল-সন্ধ্যায় (ফজর ও মাগরিবের পর) ৩ বার এবং অন্য তিন ওয়াক্তে ১বার করে নিয়মিত ছোট্ট এ তিনটি সুরা তেলাওয়াত করলে আল্লাহ তায়ালা বান্দাকে ৮টি বিশেষ নেয়ামতে ধন্য হবেন। তাহলো- জান্নাত; আল্লাহর ভালোবাসা ও সন্তুষ্টি; গোনাহ থেকে মুক্তি; দারিদ্র থেকে মুক্তি; বালা-মুসিবত থেকে মুক্তি; জাদুটোনা থেকে মুক্তি; শয়তানের আক্রমণ থেকে মুক্তি; যাবতীয় অনিষ্টতা থেকে মুক্তি।
নিয়মিত ৩ তাসবিহ পড়ার ফজিলত
রাসূলুল্লাহ (সা.) পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পর ৩ তাসবিহ- সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবার ৩৩ বার করে পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। হাদিসে এসেছে- হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, আল্লাহ তাআলা প্রিয়নবী রাসূলুল্লাহ (সা.) কে প্রত্যেক নামাজের পর তাসবিহ পড়ার আদেশ করেছেন। আল্লাহ তায়ালার বাণী, ‘ফাসাব্বিহহু আদবারাস সুজুদ’ দ্বারা তিনি এ অর্থ করেছেন। এর মানে ‘এবং সেজদাসমূহের সমাপ্তির পর’ অর্থাৎ নামাজ শেষে তাসবিহ পড়।’ (বুখারি)
আয়াতের ব্যাখ্যায় এসেছে, ‘আল্লাহর তাসবিহ পাঠ কর; বলতে প্রিয়নবী রাসূলুল্লাহ (সা.) প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর যে তাসবিহ পড়তে বলেছেন। তাহলো-
> সুবহানাল্লাহ- ৩৩বার;
> আলহামদুলিল্লাহ- ৩৩বার; এবং
> আল্লাহু আকবার- ৩৪বার।
শুধু প্রত্যেক ফরজ নামাজের পরই নয়, এ তিন তাসবিহ সকাল-সন্ধ্যায় যেমন পড়া কথা বলেছেন বিশ্বনবী তেমনি তিনি রাতে শোয়ার সময়ও এ ৩টি তাসবিহ পড়া কথা বলেছেন। সুতরাং রাসূলুল্লাহ (সা.) প্রত্যেক ফরজ বিধান পালনের পাশাপাশি দিনভর যে ৩টি আমল সবচেয়ে বেশি সংখ্যকবার পড়তে বলেছেন; সে আমলগুলো বেশি বেশি করাই সর্বোত্তম সুন্নাত।
আল্লাহ তায়ালা মুসলিম উম্মাহকে হাদিসে ঘোষিত রাসূলুল্লাহ (সা.) নির্দেশিত আমলগুলো বেশি বেশি করার তাওফিক দান করুন। দুনিয়া ও পরকালের যাবতীয় নেয়ামত পাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।