।। আমিরুল ইসলাম রাঙা ।।
পাবনা শহরের প্রধান সড়ক আব্দুল হামিদ সড়ক যার নামে নামকরণ করা হয়েছে – সেই আব্দুল হামিদ সম্পর্কে এই প্রজন্মের অনেকের জানা নাই। তিনি ছিলেন ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের নেতা। অবিভক্ত ভারতবর্ষের আইন পরিষদ সদস্য ( এম.এল.এ) এবং পাবনাবাসীর কাছে ছিলেন এক মহৎপ্রাণ ব্যক্তি।
এম. আব্দুল হামিদ ১৮৮৭ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারী এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন ব্রিটিশ আমলের ডিভিশন্যাল ইন্সপেক্টর অফ স্কুলস্ এবং দাদা ছিলেন মুন্সেফ।
এম. আব্দুল হামিদ আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশুনা সমাপ্ত করে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। ১৯৩৫ সালে ভারত শাসন আইন পাশ হলে প্রথম বঙ্গীয় আইন পরিষদের নির্বাচনে সদস্য ( এম.এল.এ) নির্বাচিত হন। ১৯৪৫ সালে তাঁকে” খাঁন বাহাদুর ” উপাধিতে ভূষিত করা হয়। তিনি বৃহত্তর পাবনা জেলা মুসলিম লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন।
১৯৪৬ সালে পাকিস্তান ইস্যুর নির্বাচনে মুসলিম লীগ প্রার্থী হিসেবে পুনরায় এম.এল.এ নির্বাচিত হন। উল্লেখ্য ১৯৪৬ সালে অবিভক্ত বাংলায় ভয়াবহ দাঙ্গা শুরু হলে তিনি পাবনা অঞ্চলে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বন্ধ করে শান্তি পূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টিতে যথেষ্ট সফল হন। এম. আব্দুল হামিদ ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের প্রথম গণপরিষদ সদস্য ( এম.সি.এ) নির্বাচিত হন। তিনি পাবনা জেলা বোর্ডের সদস্য এবং পাবনা পৌরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন।
এম. আব্দুল হামিদ ১৯৪৮ সালে লন্ডনে অনুষ্ঠিত কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলনে পাকিস্তান প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৫২ সালে রাষ্ট্র ভাষা বাংলার পক্ষে যে কয়েক জন মুসলিম লীগ নেতা অবস্থান নেন তাঁদের মধ্যে এম. আব্দুল হামিদ ছিলেন অন্যতম। ১৯৫২ সালের ৫ এপ্রিল পাকিস্তানের করাচীতে গণপরিষদের অধিবেশনে রাষ্ট্র ভাষা বাংলার পক্ষে তিনি জোড়ালো বক্তব্য উপস্থাপন করেন। ঐদিন গণপরিষদ অধিবেশনে বক্তব্য প্রদান করার পরেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর তাঁকে করাচীর জিন্নাহ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
রাষ্ট্রভাষা বাংলার পক্ষে জোড়ালো বক্তব্য প্রদান করায় তৎকালীন সরকার তাঁর প্রতি রুষ্ট হন। বিভিন্ন সুত্রে জানা যায় তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের প্রছন্ন ইঙ্গিতে ডাক্তার এবং নার্স তাঁর চিকিৎসার ব্যাপারে অবহেলা প্রদর্শন করেন। এরই এক পর্যায়ে ১৯৫২ সালের ৮ এপ্রিল ভোররাতে করাচী জিন্নাহ হাসপাতালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। পরবর্তীতে পাকিস্তান সরকার তাঁর পরিবারের অনুমতি না নিয়েই ঐদিন বিকেলে করাচীতে তাঁকে সমাহিত করেন।
লেখক – আমিরুল ইসলাম রাঙা