সাঁথিয়া (পাবনা) প্রতিনিধি : পাবনার সাঁথিয়ায় জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত হওয়া খবির উদ্দিন মোল্লা (৬০) নামে সেই রোগির মৃত্যু হয়। বুধবার (২৯ মার্চ-২০২৩ খ্রি.) দিবাগত রাত ৩ টার দিকে তিনি মারা গেছেন। তিনি উপজেলার গৌরীগ্রাম ইউনিয়নের পুরানচর গ্রামের ফয়েজ উদ্দিন মোল্লার ছেলে। গত ৩মার্চ মৃত খবির মোল্লার শ্যালক একই গ্রামের সেকেন্দার আলীর ছেলে আব্দুল হাই একই রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এ নিয়ে একই মাসে জলাতঙ্ক রোগে সম্পর্কে শ্যালক এবং দুলাভাই ২৬ দিনের ব্যবধানে দুই ব্যাক্তি মারা গেল। এ ঘটনায় এলাকায় চরম জলাতঙ্ক আতঙ্ক বিরাজ করছে।
মৃত ব্যক্তির ছেলে বাবলু জানান, প্রায় দেড় মাস আগে তার বাবাকে কুকুর কামড় দিয়েছিল। তিনি কোন ভ্যাকসিন না নিয়ে উপজেলার ফেঁচুয়ান গ্রামে এক কবিরাজের চিকিৎসা নেন। বেশ কয়দিন ধরে অসুস্থ্য বোধ করায় আমরা বাবাকে গত ২৫ মার্চ রাতে সাঁথিয়া হাসপতালে ভর্তি করি। তার দুই পা অবস হয়ে যাওয়া, কিছুই খেতে না পারা,পানি দেখলে ভয় পাওয়া এবং অতিরিক্ত লালা ক্ষরণ হওয়ার উপসর্গ দেখে হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন ২৭মার্চ তাকে জলাতঙ্ক রোগি হিসেবে শনাক্ত করেন। রোগীর উন্নত চিকিৎসার জন্য তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাকে স্থানান্তর করেন। রোগির অবস্থার অবনতি হলে ওই দিনই (২৭মার্চ) রাজশাহী থেকে তাকে ঢাকা মহাখালি সংক্রামক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে রোগির অবস্থা আরো বেশি খারাপ হলে স্বজনেরা তাকে গত বুধবার (২৯ মার্চ) রাতে বাড়ি নিয়ে আসেন এবং ওই দিন রাতেই ৩টার দিকে তিনি মারা যান। বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) জানাযা নামাজ শেষে স্থানীয় কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।
এ ব্যাপারে স্থানীয় গৌরীগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল ওহাব মাষ্টার জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন,‘তার পরিবার তাকে ভ্যাকসিন না দিয়ে কবিরাজি চিকিৎসা করানোটা উচিৎ হয়নি।’
পুরানচর ৭৬নং সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মাসুদ রানা বলেন, আমার গ্রামের অনেক মানুষকে কুকুর কামড় দিয়েছিল। অনেকেই বিষয়টি গোপন রেখে ডাক্তারি চিকিৎসা না নিয়ে কবিরাজি চিকিৎসা নিয়েছে। দুই ব্যক্তির মৃত্যুর খবর শুনে এখন তারা ভ্যাকসিন নিচ্ছেন। মৃত্যুর পর এলাকায় চরম জলাতঙ্ক আতঙ্ক বিরাজ করছে। কুকর কামড়ালে ঝাড়ফুঁক না নিয়ে ভ্যাকসিন নেওয়া উচিৎ বলে আমি মনে করি।’
এ ব্যাপারে সাঁথিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান,‘কুকুর কামড়ালে কবিরাজি চিকিৎসা, কুসংস্কার ও ঝাড়ফুঁকের মত অপচিকিৎসা না নিয়ে কামড়ানোর পরপরই ডাক্তারি পরামর্শ অনুযায়ী দ্রুত প্রতিষেধক টিকা বা ভ্যাকসিন নিতে হবে। জলাতঙ্কে আক্রান্ত মৃত ব্যক্তিরা যদি সঠিক সময়ে ভ্যাকসিন নিত তাহলে হয়তো এই দুর্ঘটনা ঘটতোনা, তাদের কবিরাজি চিকিৎসা নেওয়া চরম বোকামি হয়েছে।’
গত শনিবার (২৫মার্চ) সাঁথিয়ায় একটি ক্ষ্যাপা কুকুরের কামড়ে পাঁচ থেকে সাতটি গ্রামের শিশু,বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধীসহ প্রায় শতাধিক মানুষ আহত হন। বেশ কিছু গরু ছাগলকেও কামড়ায় কুকুরটি। এ ঘটনায় এলাকার লোকজন আতঙ্কে রয়েছে। জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত দুই ব্যাক্তির মৃত্যুর ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে জলাতঙ্ক আতঙ্ক বিরাজ করছে।