সিরাজগঞ্জের সলঙ্গায় পলাশ হত্যার নেপথ্যের ঘটনা

শেয়ার করুন

ডেস্ক নিউজ : সিরাজগঞ্জের সলঙ্গায় নরসুন্দর পলাশ চন্দ্র দাস (৩৩) কে পিটিয়ে হত্যা করা হয় গত ফেব্রুয়ারী মাসের ১৩ তারিখে। এঘটনায় প্রধান আসামী শ্রীবাস চন্দ্র দাস জীবন তার স্ত্রী সুচিত্রা রানী দাস, শ্রী রামা চন্দ্র দাস ও জয়দেব চন্দ্র দাসকে আটক করে পুলিশ জেল হাজতে প্রেরণ করতে সক্ষ্যম হয়েছে। কিন্তু মামলা অন্য ৬ জন আসামীকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। ঘটনার পর নিহত পলাশ চন্দ্র দাসের ছেলে সাগর চন্দ্র দাসকে মামলার প্রধান আসামী শ্রীবাস চন্দ্র দাস নিয়ে যায়। শ্রীবাস চন্দ্র দাস পুলিশের হাতে আটক হলেও নিহত পলাশের ছেলে সাগর চন্দ্রকে উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। আটকৃত আসামী ছাড়া অন্য আসামীরা মামলা তুলে নিতে হুমকী দামকি দিয়ে আসছে। নিহত পশাল চন্দ্র দাস সলঙ্গা মধ্যপাড়া ভরমোহনী দাস পাড়া গ্রামের মৃত অমল চন্দ্র দাসের ছেলে। আটকৃত দের ফাসিঁর দাবী ও অন্য আসামীদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানান নিহত পলাশের পরিবার ও গ্রাম বাসী।

স্থানীয়রা জানান, প্রায় ৪ মাস আগে সলঙ্গা মধ্যপাড়া ভরমোহনী দাস পাড়া গ্রামের মৃত অমল চন্দ্র দাসের ছেলে পলাশ হত্য মামলার বাদী ও পলাশের বড় ভাই প্রদীব চন্দ্র দাস তার বাড়িতে ঘর দরজা ঠিক করছিল। এসময় একই পাড়ার সুবোলের ছেলে শ্রীবাস চন্দ্র দাস জীবন ও তার দলবল নিয়ে বাধা প্রধান করে প্রদীব চন্দ্র দাসের উপরে হামলা করে এসময় তার স্ত্রী শিল্পী রানী,সনেকা রানী ,কন্যা প্রতিমা রানী, ছেলে সবুজ, সুমন ও ছোট ভাই পলাশ প্রদীবকে বাচাতে গেলে তাদের উপরেও হামলা করে। এবিষয়ে সলঙ্গা থানায় মামলা দায়ের করতে গেলে স্থানীয় থানা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক রিয়াদুল ইসলাম ফরিদ মামলা করতে না করে এবং বিচারের আশ্বাস দেন। পরে স্থানীয় আওয়ামীলীগের সভাপতি আলহাজ্ব রায়হান গফুর, সবেক সহ-সভাপতি ফনি ভুষণ পোদ্দার, ইউপি সদস্য তারিকুল ইসলাম তারা সহ গন্যমান্য ব্যাক্তির কাছে বিচার প্রার্থনা করে দ্বারে দ্বারে ঘুরেও বিচার পাননি।

কে এই শ্রীবাস চন্দ্র দাস জীবন:
সলঙ্গা মধ্যপাড়া ভরমোহনী দাস পাড়া গ্রামের মৃত সুবোলের ছেলে শ্রীবাস চন্দ্র দাস জীবন স্থানীয় সলঙ্গা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ালেখা শেষ করে বাড়ির পাশেই সলঙ্গা ইসলামিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ট শ্রেনীতে ভর্তি হয় ৮ শ্রেনীর পরে আর লেখাপড়া করেনি। হঠাৎ করেই কর্মের তাগিদে এলাকা ত্যাগ করে দেশের বিভিন্ন স্থানে বসবাস করে আসছিল। প্রায় ২০ বছর পর গত প্রায় ১ বছর পূর্বে নিজ গ্রামে এসে নিজ খরচে একটি পুজা আর্চনার ব্যবস্থা করে। এই পুজা আর্চনার মধ্য দিয়ে স্থানীয় নেতাদেও সাথে সক্ষত্যা গড়ে তোলে ও আধিপত্য বিস্তার শুরু করেন। এই সুবাদে স্থানীয় নেতাদের সহযোগীতায় এলাকার ভোটার না হয়েও হিন্দু -বৌদ্ধ ঔক্য পরিষদের নেতা বনে যান। এই সুবাদে হয়ে ওঠে স্থানীয় যুবলীগ নেতা রিয়াদুল ইসলাম ফরিদের আস্তাভাজন। এই থেকে শুরু হয়ে যায় দাস পাড়ায় শ্রীবাস চন্দ্র দাসের আধিপত্য বিস্তার।

মামলা সুত্রে জানাযায়, মামলার প্রধান আসামী শ্রীবাস চন্দ্র দাস জীবন নারায়গঞ্জ শহরের বিসমিল্লাহ্ মার্কেটে সেলুনের দোকান করে সেলুনের কাজ করে আসছিল। সলঙ্গা থানার মধ্যপাড়া ভরমোহনী দাস পাড়া গ্রামের নিহত পলাশের ছেলে সাগর (১৫)কে শ্রীবাস চন্দ্র দাস সাগকে বছরে ৭০ হাজার টাকা বেতন নির্ধান করে তার দোকানে সেলুনের কাজ করায়। এদিকে সাগরের পিতা পলাশ চন্দ্র দাস গাজীপুরের একটি স্থানে সেলুন মালিকের দোকানে থেকে কাজ করেন। কিন্তু শ্রীবাস চন্দ্র দাস জীবন সাগরের বেতনের ৭০ কোন টাকা বছর পার হয়ে গেলেও দেয় না। গত ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২২ ইং তারিখে সাগরের পিতা পলাশ শ্রীবাসের কাছে টাকা চাইতে গেলে শ্রীবাস চন্দ্র দাস জীবন রাগান্তি হয়ে শ্রীবাস তার দল বল নিয়ে দেশীয় অস্ত্র-লাঠি সোটা দিয়ে পলাশের উপরে হামলা করে। গুরুত্বর আহত অবস্থায় স্থানীয়রা পলাশকে উদ্ধার করে প্রথমে সিরাজগঞ্জ ও পরে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। পরের দিন ১৪ ফেব্রুয়ারী সোমবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় পলাশ মারা যায়। ওই দিন রাতেই নিহত পলাশের বড় ভাই প্রদীব চন্দ্র দাস বাদি হয়ে শ্রীবাস চন্দ্র দাস জীবনকে প্রধান আসামি করে নামীয় ১০ জন ও অজ্ঞাত ৪-৫ জনকে আসামী করে সলঙ্গা থানায় মামলা দায়ের করেন।

নিহত পলাশের বড় ভাই ও মামলার বাদি প্রদীপ চন্দ্র দাস জানান, প্রায় ৪ মাস আগে আমার বাড়িতে ঘর দরজা ঠিক করছিলাম। এসময় মৃত সুবোলের ছেলে শ্রীবাস চন্দ্র দাস জীবন ও তার দলবল নিয়ে আমার কাজে বাধা প্রধান করে এবং আমার উপরে হামলা করে । এসময় আমার স্ত্রী শিল্পী রানী,সনেকা রানী কন্যা প্রতিমা রানী, ছেলে সবুজ, সুমন ও ছোট ভাই পলাশ প্রদীবকে বাচাতে গেলে তাদের উপরেও হামলা করে। এবিষয়ে থানায় মামলা দায়ের করতে গেলে যুবলীগ নেতা রিয়াদুল ইসলাম ফরিদ মামলা করতে না করে এবং বিচারের আশ্বাস দেন। পরে স্থানীয় আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব রায়হান গফুর একটি টিম তৈরী করে থানা আওয়ামী লীগের সবেক সহ-সভাপতি ফনি ভুষণ পোদ্দার, ইউপি সদস্য তারিকুল ইসলাম তারা,নারী সদস্য ফাতেমাসহ গন্যমান্য ব্যাক্তি একটি বৈঠক বসে কিন্তু কোন সে দিন ফরিদ ভাই না থাকায় কোন সুরাহা হয়নি। পরে সলঙ্গা বাজারের গন্যমান্য ব্যাক্তিদের কাছে বিচার প্রার্থনা করে দ্বারে দ্বারে ঘুরেও বিচার পাননি। আমাদের উপরে হামলার বিচার যদি পেতাম তা হলে আজ আমার ভাইকে হারাতে হত না। এখন আমার ভাইকে হারিয়েছি ভাতিজা সাগরকেও খুজে পাচ্ছি না। ৪ জন আসামীকে আটক করলেও অন্য আসামীরা বিভিন্ন ভাবে আমাদের কে মামলা তোলার জন্য হুমকি দিচ্ছে। আজ আমরা নিরাপ্তাহিনতায় ভুগছি। মামলা পরিচালনা করার মত অর্থ না থাকায় আমারা সঠিক বিচার পাবো কিনা আমাদের জানা নেই।

পলাশ হত্যার মামলার প্রধান আসামী শ্রীবাস চন্দ্র দাস জীবনের চাচা মৃত্যঞ্জয় জানান, বাড়িতে ঘর ঠিক করতেছিল প্রদীব চন্দ্র দাস এসময় শ্রীবাস চন্দ্র দাস জীবন এসে বাধা দেয় পরে প্রদীরে পরিবারের উপরে হামলা করে। মামলা করতে গেলে যুবলীগ নেতা রিয়াদুল ইসলাম ফরিদ মামলা না করে বিচারের আশ্বাস দেন। এক প্রশ্নের জবাবে আমার আরেক ভাতিজা পলাশের মৃত্যুর সাথে যারা জরিত তাদের শাস্তি দাবি করেন।

সলঙ্গা থানা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক রিয়াদুল ইসলাম ফরিদ জানান, প্রদীব চন্দ্র দাসের সাথে শ্রীবাসের পূর্বে বিরোধ ছিল সেটা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি রায়হান গফুরসহ অনেকেই অবগত আছে। পরে শুনেছি প্রদীবের ছোট ভাই পলাশের সাথে শ্রীবাসের কথাকাটাকাটি হয় ও মারপিটের ঘটনা ঘটে। পরে পলাশ মারা গেছে। এখন প্রশাসন আছে তারা ব্যবস্থা নিবে বলে মুঠোফোন কেটে দেন।

সলঙ্গা থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি ফণি ভুষন পোদ্দার জানান, থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি রায়হান গফুরের কথায় আমি ও স্থানীয় ইউপি সদস্য তারিকুল ইসলাম তারা, জুয়েল রানা, ফাতেমা ঘটনা স্থলে উপস্থিত হয়ে পূর্বের মারপিটের বর্ণনা শুনি। কিন্তু বাড়ির জায়গা জমি নিয়ে ঝামেলা থাকায় সে দিন মিমাংশা হয়নি। পরে কি কারণে মারপিটের ঘটনা পলাশ মারা যায় আমার জানা নেই।

সলঙ্গা থানার ইন্সúেক্টর তদন্ত ও মামলার তদন্তকারী অফিসার জাকেরিয়া হোসেন জানান, পলাশ হত্যা মামলার প্রধান আসামী শ্রীবাস চন্দ দাস জীবনসহ ৪ জনকে আটক করে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। অন্যদের আটকের চেষ্টা চলছে।


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *