সুজানগরে সরকারী গাছ কাটায় থানায় মামলা, শাক দিয়ে মাছ ঢাঁকা অভিমত স্থানীয়দের

শেয়ার করুন

সুজানগর (পাবনা) প্রতিনিধি : পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাঁয়না, সাতবাড়ীয়া, দুলাই ও নাজিরগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের যোগসাজসে কয়েকটি গ্রামের সরকারি ৮ কিলোমিটার সড়কের পাশে লাগানো শত শত বিভিন্ন প্রজাতীর সরকারি অফিস ও এলাকার সাধারণ লোকদের বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সাকো প্রতিবন্ধী সামাজিক বনায়ন প্রকল্পের এক ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে বিগত ৬ মাস ধরে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের মূল্যবান গাছ কর্তন করে নির্বিচারে বিক্রি করে আসছে।

ধারনা করা হচ্ছে গাছগুলোর আনুমানিক মূল্য হবে প্রায় কোটি টাকা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে জলবায়ু সহিষ্ণু বাংলাদেশ গড়ার জন্য সরকার থেকে অপ্রয়োজনে গাছ না কাটা ও পতিত জমিসহ সড়কের ধারে বেশি বেশি করে গাছ লাগানোর কথা বলা হলেও সরকারের এই নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউপি চেয়ারম্যান ও স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ম্যানেজ করে সাকো প্রতিবন্ধী সামাজিক বনায়ন প্রকল্পের নির্বাহী পরিচালক ইমান আলী নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য গাছগুলো নিধন করছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। সাকো প্রতিবন্ধী সামাজিক বনায়ন প্রকল্পের নির্বাহী পরিচালক ইমান আলী দাবি করেন তিনি সমাজ সেবা থেকে রেজিঃ নং-৫১৬ নিবন্ধন করেন। এদিকে উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার নাজমুল হাসান জানান, সাকো প্রতিবন্ধী সামাজিক বনায়ন প্রকল্প নামে কোন সংগঠনের রেজিস্ট্রেশন সমাজ সেবা অফিস থেকে করা হয়নি বলে জানান তিনি।

সূত্রেমতে জানা যায় সুজানগর পৌরসভার ভবানীপুর এলাকার বাসিন্দা ইমান আলী বন বিভাগের বাগান মালী হিসেবে কর্মরত থেকে চাকুরীর মেয়াদ শেষ হওয়ায় সম্প্রতি সিরাজগঞ্জ বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে অবসর গ্রহন করেন। সাকো প্রতিবন্ধী সামাজিক বনায়ন প্রকল্পের পরিচালক ইমান আলী গত ২৭/০৬/২০২১ইং সালে সুজানগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর ৪টি ইউনিয়নের সড়কের ২ পাশে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ কর্তনের লেখিত অনুমোদন চান। এদিকে আবেদনের পরিপেক্ষিতে সুজানগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রওশন আলী, উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীনুজ্জামান শাহীন, নাজিরগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মশিউর রহমান খান, সাতবাড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আবুল হোসেন, ভায়না ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আমিন উদ্দিন, দুলাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম শাহজাহান গাছ কর্তনের জন্য স্বাক্ষর করেন। তারই ধারাবাহিক বিগত কয়েকটি মাস যাবৎ ইউনিয়নের প্রায় আট কিলোমিটার সড়কের বিভিন্ন প্রজাতীর গাছ কর্তন করে আসছিল।
গত ০৪/০৬/২০২২ইং তারিখে ভাঁয়না ইউনিয়নের হেমরাজপুর মুজিব বাধ হতে মটপাড়া বিল পর্যন্ত ১ কিলোমিটার, একই ইউনিয়নের কেস্টপুর হতে দূর্গাপুর হয়ে মতিয়ার বিল পর্যন্ত ২ কিলোমিটার সড়কের গাছগুলি নিধন করে বিক্রি করে আসছে এমন সংবাদের ভিত্তিতে ঘটনা স্থানে উপস্থিত হই এবং হাতে নাতে ঘটনা সত্যতা পাওয়ায় জানতে চাইলে গাছ ব্যাবসায়ী লিয়াকত আলি মুঠো ফনে বলেন ১৮০টি গাছ ১,৮০,০০০/= টাকা দিয়ে উপজেলা থেকে ক্রয় করেছে, বিষয়টি সন্দেহ হলে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আমিন উদ্দিন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রওশন আলী, উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীনুজ্জামান শাহীন, উপজেলা বন বিভাগ কর্মকর্তা নূরুল ইসলাম বিষয়টি ভিন্ন ভিন্ন মত প্রষন করে। বিষয়টি সুজানগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল হান্নান ঘটনা স্থান পরিদর্শন করেন এবং ভায়না ইউপি ভূমি কর্মকর্তাকে সাথে নিয়ে অবৈধভাবে কর্তনকৃত গাছগুলো জব্দ করেন। কথায় বলে চোরের বাড়ি থালত (অর্থাৎ গাছগুলো ভায়না ইউনিয়ন পরিষদে রাখা হয়েছে বলে জানা যায়) এ দিকে ভায়না ইউপি ভূমি কর্মকর্তা শাক দিয়ে মাছ ঢাকার জন্য প্রকৃত আসামিদেরকে বাদ দিয়ে সাকো প্রতিবন্ধী সামাজিক বনায়ন প্রকল্পের পরিচালক ইমান আলীকে ১ মাত্র আসামি করে সুজানগর থানায় গত ০৫/০৪/২২ খ্রি. মামলা করেছেন।

সুজানগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল হান্নান বলেন আমরা তদন্ত করছি অবৈধভাবে এ গাছকাটার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এলাকার সচেতন মহল ও স্থানীয়রা সরকারি সড়কের গাছ ভূয়া কাগজে প্রকাশ্যে কেটে নেওয়ার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে সকল অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নিকট জোর দাবি জানিয়েছেন।


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *