ইন্টারন্যাশনাল উইমেন অব কারেজ পুরস্কারে ভূষিত সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান

শেয়ার করুন

মুক্ত চেতনা ডেস্ক : দেশে পরিবেশগত ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ও জনমানুষের পরিবেশগত অধিকার নিশ্চিত করতে ব্যতিক্রমী সাহসীকতা ও আইনী লড়াইয়ের সফলতা ও স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)’র প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক নারী সাহসিকা (ইন্টারন্যাশনাল উইমেন অব কারেজ-আইডব্লিউওসি) পুরস্কার অর্জন করেছেন (https://www.state.gov/2022-international-women-of-courage-award-recipients-announced/)।

আন্তর্জাতিক নারী দিবসে (০৮ মার্চ, ২০২২) যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বছর আইডব্লিউওসি পুরস্কারপ্রাপ্তদের নাম ঘোষণা করেছে।নিজ নিজ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মোট ১২ জন নারী এ পুরস্কার পাচ্ছেন। আগামী ১৪ মার্চ, ২০২২ তারিখে এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পুরস্কারপ্রাপ্ত এ নারীদের সম্মাননাজ্ঞাপন করা হবে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক আয়োজিত এ অনুষ্ঠানের উপস্থিত থাকবেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি জে ব্লিঙ্কেন (অহঃড়হু ঔ. ইষরহশবহ) এবং পুরস্কারপ্রাপ্ত নারীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখবেন মার্কিন ফার্স্ট লেডি ড. জীল বাইডেন (উৎ. ঔরষষ ইরফবহ)।

বিগত ২০০৭ সাল হতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শান্তি, ন্যায়বিচার, মানবাধিকার, লৈঙ্গিক সমতা ও সাম্য প্রতিষ্ঠায় বিশ্বের যে নারীগণ ব্যক্তিগতভাবে ঝুঁকি নিয়ে সাহসীকতার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন মূলত তাঁদেরকে দিয়ে আসছেন। ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাপী ৮০টি দেশের ১৭০ জনেরঅধিক নারীকে এ পুরস্কার দেয়া হয়েছে।

এ বছরের আইডব্লিউওসি পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত অন্য নারীরা হলেন ব্রাজিলের সিমোন সিবিলিও দো নাসিমেনতো, মিয়ানমারের এই থিনজার মং, কলম্বিয়ার হোসেফিনা ক্লিনজার জুনিগা, ইরাকের তাইফ সামি মোহাম্মদ, লাইবেরিয়ার ফাসিয়া বোয়েনোহ হারিস, লিবিয়ার নাজলা মানগোউস, মলদোভার ডোইনা ঘেরমান, নেপালের ভূমিকা শ্রেষ্ঠা, রোমানিয়ার কারমেন ঘেওরঘে, দক্ষিণ আফ্রিকার রোয়েগসান্ডা পাসকো এবং ভিয়েতনামের ফম দোয়ান ত্রাং।

ইতোপূর্বে কাজের স্বীকৃতি হিসেবে বেলা ২০০৩ সালে ইউনেপ-এর গ্লোবাল ৫০০ রোল অব অনার পুরস্কার, ২০০৭ সালে সরকার কর্তৃক পরিবেশ পুরস্কার, ২০০৯ সালে এম সলিমুল্লাহ মেমোরিয়াল গোল্ড মেডেল পুরস্কার পেয়েছে। বেলা’র প্রধান নির্বাহী ২০০৯ সালে গোল্ডম্যান ইনভায়রনমেন্ট পুরস্কার, ২০১২ সালে র‌্যামন ম্যাগসাইসাই পুরস্কার (পরিবেশের নোবেল খ্যাত) এবং ২০২০ সালে ট্যাংগ ফাউন্ডেশন পুরস্কার অর্জন করেন। ২০০৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক টাইম ম্যাগাজিন বিশ্বের ৪০ জন পরিবেশ নায়কের একজন হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করেন সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানকে।

উল্লেখ্য, ১৯৯২ সালে ড. মোহিউদ্দিন ফারূক এর উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত তরুণ আইনবিদদের সংগঠন হিসেবে যাত্রা শুরু করা বেলা দেশে পরিবেশগত ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে। বেলা’র কাজের জন্য সংবিধান ও আইনের ইতিবাচক ব্যাখার মাধ্যমে দেশে জনস্বার্থমূলক মামলার স্বীকৃতি আসে। স্বীকৃতি আসে পরিবেশের অধিকারের যা সংবিধানের জীবনের অধিকারের অংশ উল্লেখ করে রায় প্রদান করেন আদালত। সংগঠনটি ঝুঁকিপূর্ণ বর্জ্যরে ব্যবহার ও আমদানি রোধে, বর্জ্যরে ঝুঁকিতে থাকা শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায়, পানি অধিকার নিশ্চিতকরণে, নদী দখল-দূষণ রোধে, জলাধার রক্ষায়, শিল্প দূষণরোধে, যানবাহনের দূষণ নিয়ন্ত্রণে, বায়ু দূষণরোধে, মাটি দূষণ রোধে, অপরিকল্পিত নগরায়ন ও খনিজ আহরণ রোধে, ক্ষতিকর প্লাস্টিক ও কীটনাশক রোধে, পাহাড়-বন-কৃষি জমি রক্ষায় নিরলসভাবে আইনী লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। বেলা’র অব্যাহত এ লড়াই দেশেই কেবল পরিবেশ আইনের প্রয়োগকে গতিশীল করছে তা নয়, বরং আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলেও পরিবেশগত ন্যায়বিচারের দাবিকে জোরালো করতে ভূমিকা রাখছে।
বেলা’র কাজকে মূল্যায়ন করার জন্য এবং অব্যাহতভাবে সমর্থন দেয়ার জন্য সরকার, বিচার বিভাগ, প্রশাসন, নাগরিক সমাজ, গণমাধ্যমসহ সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছে বেলা। সেইসাথে গণমানুষের পরিবেশ অধিকার রক্ষায় আগামীতে আরো জোরালো ভূমিকা রাখতে বেলা সকলের অব্যাহত সহযোগিতা কামনা করছে।


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *