বিশেষ প্রতিনিধি : উচ্চতর আধালতের নির্দেশে অনুযায়ী তৃতীয় ধাপে পাবনা শহরের মধ্যে দিয়ে প্রাহিত ঐতিহ্যবাহী ইছামতি নদী দু’পারের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান পুনরায় শুরু হয়। এই অভিযানের নেতৃত্র দিচ্ছেন জেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও পাবনা পৌরসভা।
মঙ্গলবার (২৬ এপ্রিল) সকাল ১১ টা থেকে পৌর এলাকার শালগাড়িয়া মহল্লা ও গাংকুলা এলাকা থেকে নদী পারের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু হয়। ২০২১ সাল থেকে ইছামতি নদী উদ্ধার কার্যক্রমের অংশ হিসাবে নদী পারের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথম দিকে শহরের লাইব্রেরী বাজার বড় ব্রিজ থেকে দক্ষিন মুখে অবৈধ উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু হয়ে নদীর এক কিঃ মিঃ খনন কাজ চলছে। একই সাথে পদ্মা নদী থেকে চলে আসা নদীর উৎস্যমুখে আরো ২কিঃ মিঃ সংযোগ খাল খনন করা হয়। এর পরে দ্বিতীয় ধাপে চলতি বছরের ফেব্রয়ারি মাসে হাইকোর্ট এর নির্দেশে আবারো উত্তর মুখে উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু হয়। এর মধ্যে বৈধ বসতি দাবিকৃতদের করা উচ্চতর আদালতে মামলা নিস্পত্তি না হওয়ায় সেই সকল স্থাপনা বাদ রেখে উচ্ছে কার্যক্রম চালায় প্রশাসন।
অপর দিকে উচ্চতর আদালতের ৪৩টি মামলার নিস্পত্তি শেষে হাইকোর্ট এর নির্দেশে তৃতীয় ধাপে আবারও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু হয়। নিন্ম আদালতে চলমান ৬টি মামলা থাকায় শুধু সেই সকল স্থাপনা রেখে বাকী সকল অবৈধ স্থাপনা আগামী এক মাসের মধ্যে নদীর সীমানা দখল মুক্ত করা হবে বলে জানান উচ্ছেদ সংশ্লিটরা।
পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ি প্রায় সারে ৩ শত তালিকাভূক্ত অবৈধ দখলদার রয়েছে নদীর দুই পারে। সিএস নকসা অনুযায়ি পূর্ব নির্ধাররিত নদীর সীমানা অনুসারে সকল প্রকারের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে। তবে পৌর এলাকার ভেতরে ও বাহিরে সব মিলিয়ে নদী দৈঘ্য প্রায় ৯ কিঃ মিঃ। এর মধ্যে পৌর এলাকার মধ্যে রয়েছে সারে ৪ কিঃ মিঃ নদী। এদিকে নদীর এক পাশে সারে ৩ কিঃ মিঃ এলাকার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে নদী খনন কাজ চলছে।
উচ্ছেদ কার্যক্রম নিয়ে ভুক্তভোগিরা জানান, শত বছরের পৈত্রিক ভাবে ক্রয়কৃত জমি অবৈধ হয়ে গেছে। সরকার কেন আমাদের কাছ থেকে খাজনা খারিজ নিয়েছে। জমি রেজিষ্ট্রি করেছে, পৌর কর নিয়েছে, পৌরসভা অনুমদন দিয়েছেন বাড়ি তৈরি করার। আমরা অবৈধ আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ। সরকার আমাদের কাছে থেকে জমি অধিগ্রহণ করে আমাদের খতিপূরণ দিতে পারতেন।
২০০৯ খ্রি. মহামান্য হাইকোর্টে পাবনা ইছামতি নদী পাড়ের কতিপয় ভূমিদস্যু একটি রিট পিটিশন দায়ের করেন। যার নং ৩৫০৩। এ মামলার দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে ৪ জানুয়ারি ২০২২ শোনানী শেষ হয়। ২৪ এপ্রিল মহামান্য হাইকোর্টর বিজ্ঞ বিচারক মো. মজিবুর রহমান মিঞা এবং মো. কামরুল হাসান মোল্লা যৌথ ব্রেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ে বলা হয়েছে ইছামতি নদী পুনুরুজ্জীবীত করার ক্ষেত্রে আর কোন বাধা নেই। এ রায় অনুযায়ী ২৬ এপ্রিল নিবার্হী ম্যাজিস্ট্রেট রাকিবুল হাসান এর নেতৃত্বে বাপাউবোর নিবার্হী প্রকৌশলী সরোয়ার জাহান সুজন, উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী শাহীন রেজা, সহকারী পরিচালক মোশারফ হোসেন, পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী শাহিনুর রহমান শাহিন, সার্ভেয়ার রাসেল হোসেন সহ উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
মহামান্য হাকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী মনজিল মোরসেদ এ ঐতিহাসিক রায়ের ব্যাপারে বলেন, হাইকোর্টের রায়ের পর নি¤œ আদালতের সকল স্থগিতাদেশ বা নিদের্শনা কার্যকর থাকার কোন সুযোগ নেই। ইছামতি নদীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং নদী পুনুরুজ্জীবীত করার ক্ষেত্রে আর কোন বাধা নেই।