পাবনায় হরিপুর মাদ্রাসায় অনিয়ম দুর্নীতি ও বিধিবহির্ভূত ম্যানেজিং কমিটি গঠন

শেয়ার করুন

ডেস্ক রিপোর্ট : পাবনার সাঁথিয়া উপজেলাধীন হরিপুর ইসলামিয়া মাদ্রাসায় দুর্নীতি, অনিয়ম ও সরকারি বিধিমালা বহির্ভুতভাবে ম্যানেজিং কমিটি গঠনের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

অভিযোগে জানা যায় নবগঠিত ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোস্তফা কামালের কোন সন্তান ঐ মাদ্রাসায় লেখাপড়া করে না। জালিয়াতির মাধ্যমে তিনি অভিভাবক সদস্য এবং সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। তার পুত্র মো: সাজেদুর রহমান আতাইকুলা আমেনা কিন্ডার গার্ডেন স্কুলে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করার পর ২০২২ সালের ৭ জানুয়ারি আতাইকুলা উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হয়। এ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণির ‘ক’ শাখায় তার রোল নং- ২৮। বর্তমানে সে পাবনা শহরে থেকে শাহীন শিক্ষা পরিবার নামে একটি ক্যাডেট কোচিং সেন্টারে লেখাপড়া করছে। ২০২২ সালের ৩ জানুয়ারি সাজেদুরকে এই ক্যাডেট কোচিং সেন্টারে ভর্তি করা হয়। এখানে তার রোল নং- ১৯ । এই ছাত্র অতীতেও কোনদিন হরিপুর ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসায় লেখাপড়া করে নাই,বর্তমানেও করে না।

ম্যানেজিং কমিটি গঠন প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পূর্বে তাকে মাদ্রাসার ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি দেখিয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে তার পিতা মোস্তফা কামালকে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। শুধু তাই নয় ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর নানা অনিয়ম ও কারসাজির মাধ্যমে মোস্তফা কামাল ম্যানেজিং কমিটির সদস্য এবং সভাপতি নির্বাচিত হন।

অপরদিকে অত্র মাদ্রাসার তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রী মোছা. তাসনিমা খাতুন একজন নিয়মিত শিক্ষার্থী হওয়া সত্ত্বেও তার পিতার নাম ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয় নাই। তাসনিমার পিতা আবু তালেব সরদার বিগত ম্যানেজিং কমিটির অভিভাবক সদস্য ছিলেন। এবারও অভিভাবক সদস্য হিসেবে প্রতিদ্বন্ধিতা করার ইচ্ছা ছিলো তার। কিন্ত এডহক কমিটির সদস্য ছানাউল্লাহ প্রামাণিকের এফতেদায়ী স্তরে অভিভাবক সদস্য হওয়া নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মাদ্রাসার সুপার মওলানা আব্দুল হান্নান, এডহক কমিটির সভাপতি মোস্তফা কামাল ও সদস্য ছানাউল্লাহ যোগসাজসে চক্রান্ত করে ভোটার তালিকায় আবু তালেবের নাম অন্তর্ভুক্ত করেন নাই। ফলে একজন বৈধ অভিভাবক হওয়া সত্ত্বেও তিনি অভিভাবক সদস্য পদে প্রতিদ্বন্ধিতা করতে পারেন নাই। চক্রান্তের মাধ্যমে তার ভোটাধিকার ও ম্যানেজিং কমিটির অভিভাবক সদস্য পদে প্রতিদ্বন্ধিতা করার অধিকার হরণ করা হয় বলে অভিযোগে প্রকাশ।

এছাড়াও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, কমিটি গঠন করার ক্ষেত্রে সরকারি বিধিমালা লংঘন করে দাখিল স্তরে তিনজন এবং এফতেদায়ী স্তরে একজন সদস্য নির্বাচিত করা হয়েছে। সরকারি বিধি মোতাবেক দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের অভিভাবকের ভোটাধিকার না থাকলেও ভোটার তালিকা তৈরি করে তাদের ভোট গ্রহণ করা হয়েছে।

উল্লেখ্য বে-সরকারি মাদ্রাসার গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটি গঠন প্রবিধানমালা-২০০৯ এর ২০১২ সালের সংশোধিত প্রবিধানমালা ৭(১)(ঘ)তে উল্লেখ আছে “নবম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের অভিভাবকগনের মধ্য হইতে দাখিল স্তরের সকল অভিভাবকগনের ভোটে নির্বাচিত চারজন সাধারণ অভিভাবক সদস্য হইবেন। তবে শর্ত থাকে যে, দাখিল স্তরের কোন বেসরকারি মাদ্রাসায় এফতেদায়ী স্তর সংযুক্ত থাকিলে, দাখিল নবম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের অভিভাবকগনের মধ্য হইতে দাখিল স্তরের সকল অভিভাবকগনের ভোটে দুইজন এবং এফতেদায়ী স্তরের সকল শিক্ষার্থীদের অভিভাবকগনের মধ্য হইতে এফতেদায়ী স্তরের সকল অভিভাবকগনের ভোটে দুইজন অভিভাবক সদস্য নির্বাচিত হইবেন”। হরিপুর ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার নবগঠিত কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে এই নীতিমালা অনুসরণ করা হয় নাই।

এইসব অনিয়মের বিষয়ে নির্বাচনের দায়িত্বে নিয়োজিত প্রিজাইডিং অফিসার ও সাঁথিয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো:আব্দুল কাদের বিশ্বাসকে মৌখিক এবং লিখিতভাবে অবহিত করা হলেও তিনি তা আমলে নেন নাই। সরকারি বিধিমালাকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে তিনি বে-আইনী প্রক্রিয়ায় নির্বাচন সম্পন্ন এবং ফলাফল ঘোষনা করেন।
গত ২৪|৪|২০২২ খ্রি: নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবার পর তড়িঘড়ি করে ২৮|৪|২০২২ খ্রি: তারিখে সভাপতি নির্বাচনের মিটিং ডাকা হয়। এই মিটিংয়ে প্রতিদ্বন্ধী সভাপতি প্রার্থীকে কিছু না জানিয়ে তার অনুপস্থিতিতে একতরফা ভাবে মিটিং করে মোস্তফা কামালকে সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। যার বিরুদ্ধে জালিয়াতির মাধ্যমে ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত এবং অভিভাবক সদস্য হওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

এ ব্যাপারে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, রেজিস্টার, পরিদর্শকসহ সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগে প্রমাণপত্রসহ লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *