॥ শফিক আল কামাল ॥
নীতি আদর্শবান, ত্যাগী, সৎ এবং একজন বিচক্ষণ রাজনীতিবিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা আ.স.ম. আব্দুর রহিম পাকন। তিনি ১৯৫৩ খ্রি. পাবনা জেলার ভাঙ্গুড়া উপজেলার পারভাঙ্গুড়া ইউনিয়নের পাথরঘাটা গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। পিতার নাম মৃত আব্দুর রহমান এবং মাতা মৃত শেরিনা রহমান। ৭ ভাই এবং ২ বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয় সন্তান। স্বাধীনতা পরবর্তী বাবা মায়ের অভাব অনটনের সংসারের কথা চিন্তা করে তিনি বিদেশে ভিয়েনা অস্ট্রিয়ায় গ্রমন করেন। সেখানে দীর্ঘদিন চাকরির পর ২০১৩ খ্রি. তিনি চাকুরী হতে অবসর নিয়ে মাতৃভূমির টানে বাংলাদেশে ফিরে আসেন এবং পাবনা জেলা আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বিভিন্ন সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। এছাড়াও জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাস, দূর্নীতি ও মাদকের ভয়াল আগ্রাসন নির্মুল করার প্রত্যয়ে দেশ ও জাতীর বৃহত্তর কল্যাণে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণে নিজেকে উৎসর্গ করে নির্লসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। বর্তমানে তিনি পাবনা পৌরসভার দিলালপুর মহল্লায় বসবাস করেন।
১৯৬৭ খ্রি. আ.স.ম. আব্দুর রহিম পাকন অষ্টম শ্রেণীতে অধ্যয়নরত অবস্থায় বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ছাত্রলীগে যোগদান করেন। বঙ্গবন্ধু যতবার পাবনায় সফর করেছিলেন সে সময়ে ৮ বার তাঁর সাথে সাক্ষাত করেছিলেন পাকন। ছাত্রলীগে যোগদানের পরই তিনি ১৯৬৭ খ্রি. পাবনায় ঐতিহাসিক ভুট্টা আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। ১৯৬৮-৬৯ খ্রি. আওয়ামী লীগ প্রণীত ৬ দফা এবং ছাত্রলীগের ১১ দফাসহ বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে আগড়তলা ষড়যন্ত্র মামলার প্রতিবাদে পাবনায় আন্দোলন গড়ে তুলতে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭০ খ্রি. জাতীয় সংসদ ও প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নৌকা প্রতীকের বিজয়ের লক্ষে সর্বাত্বকভাবে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭০ খ্রি. মহান নেতা বঙ্গবন্ধুর আহবানে অসহযোগ আন্দোলনে অংশগ্রহন করেন। ১৯৭০-৭২ খ্রি. পর্যন্ত তিনি পাবনা জেলা ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক, ১৯৭২ খ্রি. কাউন্সিলের মাধ্যমে সাংগঠনিক সম্পাদক, এবং ১৯৭৩ খ্রি. সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে ১৯৭৫ খ্রি. পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। (সভাপতি ছিলেন দুদকের সাবেক কমিশনার ও বর্তমানে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা সাহাবুদ্দিন চুপ্পু)।
১৯৭৫ খ্রি. জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে স্ব-পরিবারে নৃশংসভাবে হত্যার পর বীর মুক্তিযোদ্ধা আ.স.ম. আব্দুর রহিম পাকন ও তাঁদের পরিবারের উপর পৈশাচিক বর্বরতা শুরু হয়। ঐ সময়ে তিনি ভারতে গমন করেন। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে আন্দোলন ও প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য ভারতে অবস্থানরত সাবেক স্বাস্থ্য মন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মৃত নাসিম এবং প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ সেলিমসহ সিনিয়র নেতৃবৃন্দের নির্দেশনায় ভারত থেকে ১৯৭৭ খ্রি. দেশে ফিরে এসে তিনি সামরিক বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন। তাঁকে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট’এর অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে পুরুষাঙ্গের সঙ্গে ইট বেঁধে ঝুলিয়ে পাষবিক নির্যাতন চালায়। এরপর তাঁকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহীদ এ এইচ এম কামরুজ্জামান যে সেলে বন্দী ছিলেন, তিনিও সেই সেলেই বন্দী ছিলেন। সেখানে বিনা বিচারে আড়াই বছর কারাবাসের পর ১৯৭৯ খ্রি. হাইকোর্টে রীটের মাধ্যমে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে প্রথম বর্ষে ভর্তি হন। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর দেশ ত্যাগের কারণে তিনি অনার্স ফাইনাল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেনি। ৭ ভাই ও ২ বোন বড় সংসারে, পিতার আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে তার পক্ষে পড়াশুনা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। সে কারণে তাঁর চাচা সাবেক জার্মানীর রাষ্ট্রদূত মৃত এম. হোসেন আলীর সহযোগীতায় ১৯৮১ খ্রি. ভিয়েনা, অষ্ট্রিয়ায় গমন করেন।
১৯৭১ খ্রি. আ.স.ম. আব্দুর রহিম পাকন বঙ্গবন্ধুর আহবানে সাড়া দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে তাঁর সহোদর দুই ভাই ও মামা মৃত আব্দুস সালাম, সাবেক এমসিএ (বড়াইগ্রাম-গুরুদাশপুর, নাটোর) একসঙ্গে ভারতে যান। ভারতের উত্তর প্রদেশের দেরাদুনে উচ্চতর বি.এল.এফ (মুজিব বাহিনী) প্রশিক্ষণ গ্রহন করে মাতৃভূমিকে হানাদার মুক্ত করার প্রত্যয় নিয়ে পাবনা জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে সম্মূখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তাঁর মুক্তিবার্তা/লাল তালিকা নং ০৩১১০১০০৫৭, গেজেট নং ১২৬। দুই সহোদর ভাই মুক্তিযোদ্ধা বড়ভাই এ কে এম শরীফুল ইসলাম, মুক্তিবার্ত/লাল তালিকা নং ০৩১১০১০২০০, গেজেট নং ৩২ এবং ছোটভাই মুক্তিযোদ্ধা আ ন ম মেছবাহুর রহমান রোজ, মুক্তিবার্তা/ লাল তালিকা নং ০৩১১০১০০৫৮, গেজেট নং ২৬৪।
১৯৮৩ খ্রি. বীর মুক্তিযোদ্ধা আ.স.ম. আব্দুর রহিম পাকন আন্তর্জাতিক আনবিক শক্তি সংস্থা (IAEA) তে চাকরিতে যোগদান করেন। ১৯৯৮ ও ১৯৯৯ খ্রি. চাকুরিতে তাঁর অসাধারণ কর্মদক্ষতার কারণে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (IAEA) কর্তৃক 'Merit Award' পদক দেওয়া হয়। এরপর ২০০৫ খ্রি. একই সংস্থায় শান্তিতে "Nobel Prize"-প্রাপ্তির গৌরব অর্জন করেন। ২০০১ থেকে ২০১২ খ্রি. পর্যন্ত একটানা ১২ বছর কর্মচারী পরিষদের বার্ষিক অনুষ্ঠান (চ্যারিটি ইভেন্ট)’র চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন। ১৯৮৮-২০১৩ খ্রি. (প্রায় ২৫ বছর) (IAEA)-এর কর্মচারী পরিষদের (Staff Council) নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসাবে ইউনিটে প্রতিনিধিত্ব করা এবং ২০১২ খ্রি. ‘চ্যারিটি ইভেন্ট’ সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করায় সংস্থার Director General কর্তৃক স্বীকৃতি স্বরূপ 'Team Award' পদক দেওয়া হয়।
ভিয়েনায় দীর্ঘ দিন চাকুরীর সুবাদে বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী, সচিব ও রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তিদের ভিয়েনা সফরের বিভিন্ন কাজে তিনি আন্তরিকভাবে সহযোগীতা প্রদান করেন। এদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক শিক্ষা মন্ত্রী এ. এস. এইচ. কে. সাদেক, সাবেক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী জনাব নুরুদ্দিন খান, বর্তমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি জনাব ইয়াফেস ওসমান ও এটর্ণী জেনারেল জনাব মাহবুবে আলম প্রমুখ। আন্তর্জাতিক আনবিক শক্তি সংস্থা (IAEA) চাকুরীর সুবাদে জাতির জনকের স্বপ্ন পাবনার রূপপুর পরমাণু শক্তি প্রকল্প বাস্তবায়নে তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।
আ.স.ম. আব্দুর রহিম পাকন পাবনা জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক উপদেষ্টা, সেক্টর কমান্ডারস্ ফোরাম- মুক্তিযুদ্ধ’৭১ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ও পাবনা জেলা শাখা’র সভাপতি, মুক্তিযুদ্ধ ঐক্য পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি, বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতা স্মৃতি পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি এবং বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন পাবনা জেলা শাখা’র সভাপতি, আজীবন সদস্য রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি পাবনা জেলা শাখা, উপদেষ্টা মুক্তদৃষ্টি সাহিত্য ও সংস্কৃতি পরিষদ, সাহিত্য ও বিতর্ক ক্লাব এবং ইছামতি নদী উদ্ধার আন্দোলন, পাবনা সহ বিভিন্ন সেচ্ছাসেবী ও সামাজিক সংগঠনে সম্পৃক্ত হয়ে আন্তরিকতার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন।
দেশ ও জাতির বৃহত্তর কল্যাণে পাবনা জেলার উন্নয়নে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে তিনি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। সেই সাথে বাংলদেশের মহান স্বাধীনতা ও স্বার্বভৌমত্ব রক্ষা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শ বাস্তবায়নের মাধ্যমে অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষে তিনি কাজ করছেন। এছাড়াও বাংলাদেশে আগমনের পর তিনি বিভিন্ন সময়ে জাতীয় নির্বাচন, জেলা পরিষদ নির্বাচন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচন, পৌর নির্বাচন ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তৃণমূল পর্যায়ে স্ব-শরীরে উপস্থিত হয়ে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ের জন্য কাজ করেছেন।
এ সকল গুণাবলীর প্রতি সন্তোষ প্রকাশ করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কন্যা মুক্তিযোদ্ধাদের আস্থাভাজান, মানবতার মা, জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাবনা জেলা পরিষদ নির্বাচন-২০২২ এ বীর মুক্তিযোদ্ধা আ.স.ম আব্দুর রহিম পাকন-কে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হিসেবে দলীয় মনোনয়ন দিয়েছিলেন। এছাড়াও এই নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন পত্র তুলেছিলেন জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক প্রচার সম্পাদক মো. কামিল হোসেন। পরবর্তীতে দলীয় সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মো. কামিল হোসেন প্রার্থিতা প্রত্যাহার করলে বিনা প্রতিদ্ধ›িদ্ধতায় বীর মুক্তিযোদ্ধা আ.স.ম আব্দুর রহিম পাকন-কে নির্বাচনে বে-সরকারিভাবে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে বিজয়ী ঘোষণা করেন পাবনা জেলা রির্টানিং কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন অফিসার। তিনি শতকোটি শুকরিয়া আদায় করেন মহান আল্লাহ পাকের নিকট। শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তাঁর মৃত পিতা মাতার প্রতি। সেই সাথে অসংখ্য ধন্যবাদ এবং আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতি। তিনি তাঁর মেধা মননশীলতা এবং প্রজ্ঞা দিয়ে পাবনার মানুষকে সেবা করার প্রত্যয় ব্যক্ত করনে এবং একটি সুন্দর পাবনা গড়তে তিনি সবার নিকট আন্তরিক সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন।