আমির হোসেন, ঝালকাঠি : ঝালকাঠিতে আমরার বাম্পার ফলন হলেও হাসি নেই চাষিদের মুখে। এ জেলার মাটি ও আবহাওয়া আমড়া চাষের জন্য খুবই উপযোগী। লাভজনক এ মৌসুমী ফল আমড়া গাছে রোগ বালাই খুবই কম। ফলে রাজাপুর উপজেলার আংগারিয়া গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. শাহ আলম নান্নুর আমড়া গাছে ঝোপায় ঝোপায় অপরুপ শোভায় ঝুলছে আমড়া। আমড়া গাছ রোপণের দু’বছর পরই তা ফল দেয় এবং কমপক্ষে ১০/১২ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে। ‘বরিশালের আমড়া’র খ্যাতি দেশজুড়ে। দক্ষিণাঞ্চলের মাটি ও পানি আমড়া চাষের জন্য বেশ উপযোগী। বিশেষ করে বরিশালের ঝালকাঠির রাজাপুরে সুস্বাদু আমড়ার ফলন হয় সবচেয়ে বেশি। বলা চলে সারা দেশের আমড়ার চাহিদার ৬০-৭০ ভাগ মেটায় এ অঞ্চলের চাষিরা। গেল কয়েক বছরে বাম্পার ফলনও হয়েছে। সুস্বাদু আর সুখ্যাতির কারণে কৃষকরা দামও পেয়েছেন বেশ। ভাল টাকা আয়ের সুযোগ থাকায় রাজাপুরের আমড়া চাষির সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে। ইতোমধ্যে রাজাপুরের আমড়া একটি অর্থকরী ফল হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে। এটি চাষ করে জেলার বিভিন্ন উপজেলার চাষিরা বেশ ভাল লাভবান হয়েছেন। বর্তমানে স্থানীয়দের চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হচ্ছে। জেলার বিভিন্ন উপজেলার স্থানীয় বাজারে পাইকারদের মাধ্যমে এসব আমড়া বিক্রি করে বাগানের মালিকরা কোটি কোটি টাকা আয় করছেন। তবে মধ্যস্বত্ব ভোগীদের অধিক মুনাফার কারণে আমড়া চাষিরা ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বাগান মালিকদের কাছ থেকে প্রতি বছর পাইকাররা বাগানঠিকা আমড়া ক্রয় করছেন। দেড় শতাধিক আমড়া গাছের বাগানের আমড়া বাগান মালিকরা পাইকারদের কাছে বিক্র করতেন ৫০-৬০ হাজার টাকায়। তাতেই বেশ খুশি হতেন মালিকরা। কিন্তু এ বছর করোনা সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে যোগাযোগে সমস্যা ও বিভিন্ন সময় লকডাউনে বিভিন্ন শহরে লোকজন বাহিরে বেরহতে না পারায় আমড়ার চাহিদা কম।সামনের দিনগুলিতে করোনা পরিস্থিতি আরো খারাপ হওয়ার আশঙ্কায় ওই বাগানে দুই শতাধিক গাছে আমড়ার বাম্পার ফলন হলেও পাইকাররা দাম বলছেন ২৫-৩০ হাজার টাকা। তাতে লোকশানের মুখে পড়ছেন রাজাপুরের আমড়া চাষিরা। এসব এলাকার আমড়া কেনা-বেচার জন্য রয়েছে একদল ব্যাপারী। তারা চৈত্র-বৈশাখ মাসে গৃহস্থদের অগ্রিম টাকা দিয়ে আমড়ার গাছ কিনেন। ওই ক্রেতারা স্থানীয় পাইকারদের কাছে এসব আমড়া বিক্রি করেন। পাইকাররা তা বস্তাবন্দি করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠায়। শ্রাবণ থেকে কার্তিক- চারমাস পর্যন্ত স্থানীয় ব্যাপারীরা আমড়া চাষীদের কাছ থেকে আমড়া কিনেন। আবার কেউ কেউ আমড়া চাষীদের কাছ থেকে কেনা গাছ থেকে এ সময়ে পর্যায়ক্রমে আমড়া সংগ্রহ করেন। তারপর সেগুলো বস্তা হিসেবে ব্যাপারীরা রাজাপুরের পার্শ্ববর্তী জেলার সবচেয়ে বড় আমড়ার মোকাম কাউখালীতে নিয়ে বিক্রি করেন। এরপর সেখান থেকে লঞ্চে করে ঢাকা, চাঁদপুর, মুন্সিগঞ্জ, চট্টগ্রাম, রংপুর, সিলেট, যশোরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়। রাজাপুরের আমড়া চাষি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. শাহ আলম নান্নু বলেন, আমড়া চাষ সহজ ও লাভজনক বলে এর চাষ করছি। গত বছর প্রায় দেড় একর জমিতে লাগানো দেড় শতাধিক আমড়া গাছ থেকে প্রায় ৬০ হাজার টাকা পেয়েছিলাম। কিন্তু ওই জমিতে এ বছর ফলন গাছের সংখ্যা দুই শতাধিক এবং ফলনও আগের তুলনায় বেশী। এবছর করোনায় পরিবহন সমস্যা ও লকডাউনের কারনে বিভিন্ন শহরে লোকজন কম। তাই আমড়ার চাহিদাও কম। একারনে পাইকাররা এবছর দাম বলছেন ২৫ হাজার টাকা। তিনি আরও বলেন, আমড়া গাছের বয়স একটু বেশি হলে তাতে পোকায় ধরলে স্থানীয় উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে প্রতিকার করা সম্ভব। তাছাড়া কিছু কিছু গাছে বৈশাখের শুরুতে নতুন গজানো পাতায় লেদাপোকা আক্রমণ করে। এসময় বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক ছিটালে তা দূর হয়।
উপজেলার আংগারিয়া গ্রামের আমড়া চাষী মোদাচ্ছের হাওলাদার, দেলোয়ার হোসেন ও শাহ আলম হাওলাদার বলেন, এবার আমড়ার বাম্পার ফলন হয়েছে। আর পরিবহন সমস্যার কারনে এবারে আমড়ার দাম তুলনামূলকভাবে অনেক কম। তাছাড়া মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণেও আমড়া বেচাকেনার মুনাফার পুরোটা আসে না চাষিদের পকেটে। সে কারণেই আমড়া চাষিরা বাম্পার ফলনে খুশি হয়েও যেন খুশি নন।
এবিষয়ে উপজেলা কৃষিকর্মকর্তা মো. রিয়াজুল্লাহ বাহাদুর বলেন, এ বছর রাজাপুরে ১শ’ ৮০ হেক্টর জমিতে আমড়া চাষ করা হয়। ফলনও তুলনামূলক ভালো হয়েছে। ফলনের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে ১০ হাজার মেট্রিক টন। এটি একটি অর্থকরী ফসলও বটে। করোনা মহামারিতে পরিবহন সমস্যার কারনে কৃষকরা এবছর আমড়ার ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না। তিনি আরো বলেন, রাজাপুর তথা বরিশালের আমড়া এখন দেশের ঐতিহ্য। দেশের চাহিদা মিটিয়ে এখন ভারত, মালয়েশিয়া, নেপালসহ বিভিন্ন দেশে তা পাঠানো হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যেও নিয়মিত যাচ্ছে ঝালকাঠিতে আমড়া।