মুক্ত চেতনা ডেস্ক : পাবনার চাটমোহরে মৎস্যজীবীদের পরিবর্তে মৎস্যচাষীদের নামে সমিতির রেজিস্ট্রেশন দেওয়ায় ”দিকসী বিল জলমহলটির” লিজ থেকে বঞ্চিত হলো প্রকৃত মৎস্যজীবী সমিতি সদস্যরা। অপরদিকে দ্বিতীয় দরদাতা লিজ গ্রহণ করে অন্যর কাছে বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগে উঠেছে।
সুত্রমতে জানা যায়, পবাখালী সরদার পাড়া সিআই জি মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেড রেজিস্ট্রেশনের জন্য চাটমোহর উপজেলা সমাজ সেবা অফিসে আবেদন করেন। আবেদনটি চাটমোহর উপজেলা থেকে পাবনা জেলা সমাজ সেবা কার্যালয়ে পাঠানো হয়। পাবনা জেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা সোলায়মান বেগ আবেদনকারীদের আবেদন অনুযায়ী সমিতির রেজিস্ট্রেশন না দিয়ে রহস্যজনক কারণে মৎস্যজীবীর স্থলে মৎস্যচাষী নামকরণ করে অনুমোদন দেন। সে অনুযায়ী চাটমোহর উপজেলা সমবায় অফিসার সমর কুমার বিশ্বাস “পবাখালী সরদার পাড়া সিআই জি মৎস্যচাষী সমবায় সমিতি লিমিটেড নামে রেজিস্ট্রেশন দেন।
সুত্রে আরও জানা যায়, ২১ খ্র. ১৬ ফেব্রæয়ারি পাবনা জেলা প্রশাসকের রাজস্ব শাখা থেকে “ জলমহাল ইজারা বিজ্ঞপ্তি” প্রকাশ করা হয়। যার স্মারক নং ০৫.৪৩.৭৬০০.০২৮.৪০.০০১.২১.৪৫৭। বিজ্ঞপ্তিতে চাটমোহর উপজেলার ৪২ (পাব) জলা/২১, দিকসী বিল জলমহাল, আয়তন : ২৬.৫৪ একর এর লিজ নেওয়ার জন্য মৎস্যজীবীরা আবেদন করেন। আবেদনের মধ্যে সবোর্চ্চ দর দাখিলকারী সমিতিটি মৎস্যচাষী সমিতি হওয়ায় সরকারি জলমহাল ব্যবস্থাপনা নীতি’২০০৯ অনুযায়ী আবেদনকৃত “পবাখালী সরদার পাড়া সিআই জি মৎস্যচাষী সমবায় সমিতি লিমিটেডকে অযোগ্য ঘষোণা করা হয়। বিলটি ২য় দরদাতা পার্শ্বডাঙ্গা মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লি. এর নামে আগামী ৩ বছরের (১৪২৮ হতে ১৪৩০ সন পর্যন্ত) জন্য ইজারা প্রদান করা হয়। ইজারা প্রাপ্ত পার্শ্বডাঙ্গা মৎস্যজীবী সমিতি লিমিটেড এর সভাপতি সাহিদুর রহমান এর বিরুদ্ধে লিজ পাওয়ার পর নিজেরা মৎস্যচাষ না করে স্থানীয় তরিকুল, ছালাম গং এর নিকট ৩ লক্ষাধিক টাকায় বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া পবাখালী মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি আ. খালেকের বিরুদ্ধেও উল্লেখিত তরিকুল, ছালাম গং এর কাছে তার নেওয়া লিজের জলমহালটি বিক্রি করে দেওয়ার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। এ ব্যাপারে পবাখালী সরদার পাড়া সিআইজি মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লি. এর সভাপতি আ. রাজ্জাক জানান, আমরা চাটমোহর উপজেলায় আমাদের সমিতির রেজিস্ট্রেশন করার জন্য আবেদন করি। আবেদনটি পাবনা জেলা সমাজসেবা অফিসে আসে। পাবনা থেকে কারসাজি হয়ে আমাদের সমিতির নাম মৎস্যজীবীর স্থলে মৎস্যচাষী করা হয়। একদিকে আমাদেরকে হয়রানী করা হয়েছে। অপরদিকে আমারা সবোর্চ্চ দরদাতা হয়েও বঞ্চিত হতে হলো। যার ফলে সরকারও প্রকৃত রজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হলো। এর জন্য জেলা সমবায় কর্মকর্তাকে তিনি দায়ী করেন। তিনি আরও বলেন, প্রকৃত মৎস্যজীবীদের কাছে লিজ না দিয়ে যাদের কাছে লিজ দেওয়া হয়েছে, তারা কেউ মৎস্যজীবী নয়। বাংলাদেশ সরকারের বৈধ কার্ডদারী মৎস্যজীবী আমীর হামজা বলেন, পার্শ্বডাঙ্গা মৎস্যজীবী সমিতি লিমিটেড এর অনেক সদস্য আছেন যারা মৎস্যজীবী নয় বা মৎস্যজীবীর সাথে জড়িতও নয়। তিনি ৭৪ জন বৈধ মৎস্যজীবীর স্বাক্ষরসহ একটি তালিকা দেন। তিনি বলেন ঘটনাস্থলে তদন্ত করা হলে প্রকৃত মৎস্যজীবীদের চিহ্নিত করা সহজ হবে। সেই সাথে বলেন লিজের জলমহাল বেঁচা-কেনা করা যায় না। লিজ গ্রহীতা তাদের লিজকৃত জলমহাল বিক্রি করায় তাদের লিজ বাতিল করার দাবী জানান তিনি।
গত বছরের ২২ মার্চ সমিতির রেজিস্ট্রেশনের দাবীতে অর্ধশত প্রকৃত মৎস্যজীবী সংবাদ সম্মেলন করেন। যা স্থানীয় বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। সংবাদ সম্মেলনের পর জেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা সোলায়মান বেগ আবেদনকারীদের আবেদন অনুযায়ী অনুমোদন না দিয়ে রহস্যজনক কারণে মৎস্যজীবীর স্থলে মৎস্যচাষী নামে রেজিস্ট্রেশন অনুমোদন করেন।
এ ব্যাপারে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা সোলায়মান বেগ এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি মোবাইলে বলেন, আবেদনে মৎস্যচাষী সমবায় সমিতি হিসেবে আবেদন করা হয়েছে। এটা আবেদন কারীদের ভুল। এদিকে আবেদনকারীদের রিসিভ কপিতে “ মৎস্যজীবী হিসেবে আবেদন করা হয়েছে।