চলনবিলে অবাধে শামুক ঝিনুক নিধন; পরিবেশ ও জীব বৈচিত্র হুমকির মুখে

শেয়ার করুন

মুক্ত চেতনা ডেস্ক : চলনবিল অধ্যুষিত পাবনা জেলার চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া ও ফরিদপুর উপজেলায় বর্ষায় পানি বৃদ্ধির পাওয়া কারণে বিলাঞ্চলে অবাধে শামুক ও ঝিনুক নিধন করছে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী। বর্ষা মৌসুমে বিলের পানি কানায় কানায় পূর্ণ হয়। এ সময় আবাদী জমিতে কৃষিকাজ করার সুযোগ থাকে না। অনেক কৃষক কর্মহীন হয়ে পড়ে। যার দরুণ স্থানীয় কৃষক ও মৎস্যজীবীরা প্রতিদিন বিল থেকে অবাধে বিপুল পরিমানে শামুক ঝিনুক সংগ্রহ করে বিক্রি করছে। বিশেষ করে জুলাই থেকে অক্টোবর এই চার মাস চলে শামুক ও ঝিনুক সংগ্রহের কাজ। উন্মুক্ত জলাশয়ের এসব জলজ প্রাণী নিধনের ফলে পরিবেশ ও জীব বৈচিত্র হুমকির মুখে।

চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া ও ফরিদপুর এলাকার বিলাঞ্চল থেকে নদ-নদী, ছোট-বড় বিলসহ ২০-৩০টি স্থানে প্রায় ৪শ নৌকায় স্থানীয় লোকজন প্রতিদিন অবৈধভাবে শামুক ও ঝিনুক সংগ্রহ করছে। একটি অসাধু ব্যবসায়ী চক্র শামুক সংগ্রহের জন্য স্থানীয় দরিদ্র চাষি এবং মৎস্যজীবীদের ছোট ছোট ডিঙ্গি নৌকা দিয়েছে সহযোগিতা করে আসছে। এসব ছোট ছোট ডিঙ্গি নৌকা প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত একজন ব্যক্তি ১ থেকে ২ বস্তা শামুক ঝিনুক সংগ্রহ করে থাকে। প্রতি বস্তা শমুক বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩০০ শত টাকায়। সে অনুযায়ী প্রতিদিন প্রায় ২ থেকে ৩ টন শামুক ও ঝিনুক সংগ্রহ করা হয়। এসব শামুক ঝিনুক স্থানীয় ব্যপারীরা ক্রয় করে খুলনানহ দক্ষিণাঞ্চলের মাছের খামারে খাদ্য হিসাবে বিক্রি করা হয়। চলনবিলে প্রতি বছর প্রায় কোটি টাকার শামুক বিক্রিয় হয় বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

উপজেলার ধানকুনিয়া গ্রামের শামুক সংগ্রহকারী কোরবান আলী, আসাদ ও সুজন জানান, বর্ষা মৌসুমে তাদের কাজ থাকে না, চাষাবাদ বন্ধ থাকে, পেটের দায়ে স্থানীয় শামুক ঝিনুক ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা নিয়ে তারা শামুক সংগ্রহ করেন। শামুক সংগ্রহ করে প্রতিদিন জন প্রতি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা আয় হয়।

চাটমোহর উপজেলার বোথর গ্রামের শামুক ও ঝিনুক ব্যবসায়ী জগদিশ চুর্নকর জানান, আমি প্রায় ২৫ বছর ধরে এ ব্যবসায় সম্পৃক্ত আছি। চাটমোহরের ভাদুদগর, হাদল, ধানুয়াঘাটা, বনগ্রাম সহ বিভিন্ন এলাকায় ছোট বড় সব মিলিয়ে ২৫ থেকে ৩০ জন ব্যবসায়ী আছি। আমরা স্থানীয় সংগ্রকারীদের কাছ থেকে শামুক ঝিনুক কিনে পাইকার ভাবে বিক্রি করি। বর্ষার তিন চার মাস শামুক কেনা বেঁচা হয়।

উপজেলার ধানকুনিয়া গ্রামের ঝিনুক ব্যবসায়ী আলম হোসেন বলেন, দক্ষিন অঞ্চলের খুলনা ও বাগেরহাট অঞ্চলের চিংড়ির খামারের ব্যবসায়ীদের নিকট শামুক বিক্রি করে থাকি। এ এলাকা থেকে তারা পাইকারী ভাবে কিনে ট্রাক যোগে নিয়ে যায়। খোলা জলাশয় থেকে এসব শামুক ঝিনুক সংগ্রহ করা হয়, এ ব্যবসা বৈধ না অবৈধ বিষয়টি আমরা জানি না।

চাটমোহর উপজেলা উপ-সহকারি উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম এ ব্যাপারে বলেন, ২০১২ খ্রি. বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনে শামুককে জলজ প্রাণী হিসাবে গণ্য করা হয়। শামুক সংগ্রহরের অপরাধে জেলসহ অর্থ দন্ডের বিধান থাকলেও এই আইন অমান্য করে অবাধে চলছে শামুক ঝিনুক নিধন।

তিনি আরও বলেন, উন্মুক্ত জলাশয়ের বিশেষ করে খাল, বিল, হাওয়র, বাওয়ের বংশ বিস্তার করে থাকে শামুক ও ঝিনুক। অপরদিকে জলাশয়ের নোংরা পানির পোকামাকড় আহার করে পানি বিশুদ্ধ করণের কাজ করে। উন্মুক্ত জলাশয়ের পানি বিশুদ্ধকরণসহ স্থানীয় মিঠা পানির মাছের খাদ্যের চাহিদা পূরণ করে শামুক। শামুক এবং ঝিনুক কৃষি জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখে, শামুকের খোলশ ক্যালশিয়ামের উৎকৃষ্ট উৎস। অবাধে শামুক ও ঝিনুক সংগ্রহ বন্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণসহ বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে অবৈধ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তিনি।

চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সৈকত ইসলাম জানান, শামুক ঝিনুক ধরা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। বিষয়টি খোঁজ খবর নিয়ে দেখছি। এই ব্যবসার সাথে জরিতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে। প্রয়োজনে শামুক ঝিনুক সংগ্রহকারীদের সচেতনা সৃষ্টির লক্ষে ক্যাম্পেইন করতে হবে।


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *