এম এ ছালাম : আধুনিক গণমাধ্যম এর মূলত বৈশিষ্ট্য দুটি। প্রথমত, করপোরাটাইজেশন অব মিডিয়া বা স্বার্থবাদী গোষ্ঠী নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যম। দ্বিতীয়ত, পিপলস জার্নালিজম বা গণ সাংবাদিকতা। স্বার্থবাদী গোষ্ঠী নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যম জনমতকে নিজেদের হীন স্বার্থে পরিচালিত করে। পণ্যের প্রচার কিংবা গোষ্ঠীর স্বার্থে অন্যের চরিত্র হনন করে।
গণ সাংবাদিকতা বলতে ই-মেইলে বা ওয়েবসাইটে নিজেদের মধ্যে মতবিনিময় , সংবাদ আদান-প্রদান এবং মোবাইল ফোনযুক্ত ক্যামেরা ও রেকর্ডিং এর ব্যবহার বোঝায়।
ইউজিন ডেবস বলেছেন, ‘ পারিপার্শ্বিকতা সম্পর্কে কিছু লোকের মনে অসন্তোষের সৃষ্টি না হলে আমাদের এখনো গুহায় বাস করতে হতো। বুদ্ধিমানের অসন্তোষ ই সত্যতার উৎস। একটা স্বাধীন সংবাদমাধ্যম ভালো বা খারাপ হতে পারে, কিন্তু এটা নিশ্চিত যে স্বাধীনতা না থাকলে সংবাদমাধ্যম খারাপ ছাড়া আর কিছুই হতে পারে না।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উৎকর্ষের প্রভাবে বিস্ময়কর অগ্রগতি সাধিত হয়েছে গণমাধ্যমেও। আধুনিক গণমাধ্যম বলতে তাই প্রযুক্তিগত বৈপ্লবিক উৎকর্ষের দিকটি প্রথমেই আমাদের চোখে পড়ে। এটি আধুনিক গণমাধ্যম এর উল্লেখযোগ্য একটি বৈশিষ্ট্য তাতে সন্দেহ নেই। তবে প্রধান বৈশিষ্ট্য নয়। বস্তুত মুক্তবাজার নিয়ন্ত্রিত অর্থনৈতিক নীতির প্রভাবে আধুনিক গণমাধ্যম ও দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। সেটাকে সহজ ভাষায় সাধারণ মানুষের পক্ষে এবং বিপক্ষে এভাবে চিহ্নিত করা যায়। প্রধানত মালিকানার কারণে আধুনিক গনমাধ্যমের একটি বড় অংশের নিয়ন্ত্রণ বহুজাতিক গোষ্ঠী বা বৃহৎ ধনী গোষ্ঠীর হাতে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারা তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বার্থে এসব গণমাধ্যম কে ব্যবহার করে। নিজেদের গোষ্ঠী স্বার্থে তারা সাধারণ মানুষের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিতেও দ্বিধাবোধ করে না।
এর বিপরীতে আরেকটি ধারাও ক্রমেই বেগবান হয়ে উঠেছে। এই ধারাটি কি বলা যায়, সাধারণ মানুষের পক্ষে ধারা। এই ধারা বৃহৎ পুঁজির প্রভাবমুক্ত এবং অনেকটা এন্টি এস্টাবলিশমেন্ট তথা প্রতিষ্ঠান বা প্রাতিষ্ঠানিকতা বিরোধী। তাদের মূল অবলম্বন হলো ইন্টারনেট, ই-মেইল ও ওয়েবসাইট এবং ক্যামেরাযুক্ত মোবাইল ফোন প্রভৃতি। তুলনামূলকভাবে কম ব্যয় বহুল এসব প্রযুক্তির মাধ্যমে তথ্য আদান-প্রদানের এই গণতান্ত্রিক ধারা ক্রমেই ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় ও গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছে।
লেখক ও সাংবাদিক এম এ ছালাম