তুহিন হোসেন (পাবনা) : ভূমি সেবা মানুষের দৌড় গোড়ায় পৌঁছে দিতে সরকার যে ভাবে কাজ করে যাচ্ছে তাতে সাধারণ মানুষের মধ্যে আশার সঞ্চার হলেও সরকারের সেই ভাল উদ্যোগকে নশ্বাৎ করতে নানা ভাবে চক্রান্ত করছেন কতিপয় ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কর্মকর্তারা।
ঈশ্বরদী উপজেলার দাশুড়িয়া ইউনিয়ন ভুমি অফিসের কর্মকর্তা (নায়েব) হারুন অর রশিদ তাদেরই একজন। ঘুষ-দূর্নীতির বিরুদ্ধে ভূমি মন্ত্রীর জিরো টলারেন্সের ঘোষনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে ওপেন সিক্রেট ভাবেই ঘুষ গ্রহণ করছেন দাশুড়িয়া ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ।
সম্প্রতি ভূমি মন্ত্রী বেশ কিছু অনুষ্ঠানে ঢাক ঢোল পিটিয়ে ঘোষণা করেছিলেন ভূমি অফিসে কোন প্রকার হয়রানী, ঘুষ গ্রহণ ও দূর্নীতি বরদাশ্ত করা হবে না।কিন্ত কে শোনে কার কথা! দাশুড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ ভবন থেকে ভূমি অফিসটি একটু দুরে হওয়ায় পোয়া বারো হয়েছে দায়িত্বপ্রাপ্ত ভূমি কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের। অফিসটি ইউপি চেয়ারম্যানসহ বিশিষ্টজনদের চোখের আড়ালে হওয়ায় ইচ্ছেমত অনিয়ম-দূর্নীতির মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন তারা। ইউনিয়নের বিশিষ্ট জনেরা অভিযোগ করেন, তারা কোন কাজ নিয়ে গেলেই ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ তাদের সাফ জানিয়ে দেন ‘টাকা ছাড়া কোন কাজ হবে না’।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ইউপি সদস্য অভিযোগ করেন, তাদের ওয়ার্ডের বিভিন্ন মানুষের জায়গা-জমি খাজনা খারিজের জন্য ভূমি অফিসে গেলে প্রথমেই টাকার কথা বলেন তিনি। তিনি এটাও বলেন, প্রতিটি কাজের জন্য এই টাকার ভাগ উপর মহলে দিতে হয়। তিনি যদি টাকা না নিয়েও কোন কাজ করেন, উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তা বিশ্বাস করেন না। তাই বাধ্য হয়েই তিনি টাকা নেন। দাশুড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের এক প্রভাবশালী নেতা বলেন, টাকা কোন কাজই হয় দাশুড়িয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসে। সামান্য খতিয়ান বই দেখতে গেলেও টাকা দিতে হয়।
সম্প্রতি একটি মেয়ের বিয়ের জন্য তার বাবা জমি বিক্রির জন্য ওই ভূমি অফিসে তার জমি খাজনা-খারিজ করার জন্য গেলে প্রথমে মোটা অংকের টাকা দাবী করে বসেন। পরে সেই টাকা দিয়েই তার দাবী মিটিয়ে খাজনা-খারিজের জন্য কাগজপত্র জমা দেন। এমন অভিযোগ করেন দাশুড়িয়া ইউনিয়নের অসংখ মানুষ। বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে ওই দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য ভূমি অফিসের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন দাশুড়িয়া ইউনিয়নের সর্বস্তরের মানুষ। এদিকে সরকারী নিয়মানুযায়ী অফিস সকাল ৯টা থেকে হলেও তিনি সকাল সাড়ে ১০টার আগে অফিসেই আসেন না। এই বিষয়টিও ইউনিয়নের সাধারণ মানুষকে বেশ ভোগান্তিতে ফেলে বলেও জানান তারা।
এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ভুক্তভোগী জানান, নায়েব হারুন অর রশিদ খারিজ প্রতি ২/৩ হাজার টাকা ঘুষ গ্রহণ করেন। কোন কোন খারিজে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত নেন।
এছাড়াও প্রতি দাখিলাতেও তিনি ইচ্ছেমত টাকা আদায় করেন। এছাড়াও খারিজে হয়রানী আর ভোগান্তি তো নিত্যদিনের ঘটনা। স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, সম্প্রতি বিভিন্ন অভিযোগে দাশুড়িয়া ভূমি অফিসের সহকারী নায়েব (চুনো পুঠি’র) শাস্তিমুলক বদলি হলেও অদৃশ্য কারণে বহাল তবিয়তে রয়েছেন “রাঘব বোয়াল” হারুন অর রশিদ। সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে তার শান্তিসহ বদলির দাবী জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।