মনছুর আলম : ঐতিহ্যবাহী গাজনার বিল পাবনার অন্যতম অর্থনৈতিক জোন এবং মানুষের বিনোদন কেন্দ্র হিসাবে পরিচিত। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে চারদিকে টইটুম্বর পানি, নীল আকাশ, শৈবাল, শাপলা, হিজল, বকের সাড়ি এক অপরূপ সৌন্দর্যে বিলের মানুষের জীবনধারা ও ভ্রমণ পিপসুদের সরগরমে হৈচৈ পরে যায়।
শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর-২৪’ খ্রি.) সকাল ৯টার দিকে পাবনা শহর থেকে পাবনা টেকনিক্যালস্কুল এন্ড কলেজের বাংলা বিভাগের ইন্সট্রাক্টর আলী আকবর মিয়া রাজুর নেতৃত্বে পাবনার সুজানগর উপজেলার গাজনার বিলে নৌকায় আনন্দভ্রমণে যান একদল ভ্রমণপিপাসুরা। শহর থেকে মটরবাইক যোগে তারা রওনা দিয়ে সুজানাগর শহর অতিক্রম করে ১০টার মধ্যে বিলের তীরে গিয়ে পৌঁছেন। আগে থেকে রিজার্ভ রাখা ইঞ্জিন চালিত নৌকাযোগে তারা রওনা হন। শহরের বন্ধুদের মধ্যে অংশগ্রহণ করেন দৈনিক ইংরেজি ‘বিজনেস মিরর’ পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি নদী গবেষক ড. মো. মনছুর আলম, টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের ইলেকট্রিক্যাল বিভাগের ইন্সট্রাক্টর মীর মোহাম্মদ আবু জাফর, সিভিল বিভাগের চিফ ইন্সট্রাক্টর মো. নজরুল ইসলাম, ফার্ম এন্ড মেশিনারি বিভাগের জিয়াউল হক জিয়া, এআর গ্রুপের এইচআর ম্যানেজার মতিউর রহমান, সাংবাদিক ও নদীকর্মী শফিক আল কামাল, পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানী পাবনা ম্যানেজার মো. রুবেল হাসান, চরঘোষপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুর রহমান প্রমুখ। সুজানগর শহর থেকে যুক্ত হন ঢাকা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক শফিকুর রহমান শফিক, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক মো. আবু সাইদ, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আব্দুল হাই, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এনামুল হক, ভাটপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আলতাব হোসেন, হেমরাজপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ইমদাদুল হক, নিশ্চিন্তপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম শিমুল, ব্যবসায়ী বিজন কুমার, ডেলটা লাইফ ইনসুরেন্স কো. লি. এর ম্যানেজার মো. লিটন হোসেন এবং শিশু সামিউল ইসলাম প্রমুখ। উল্লেখ্য, দিনব্যাপি এই নৌবিহারে মধ্যাহ্ন ভোজের আয়োজন করেন মতিউর রহমানের শ^শুর শ্রীপুর গ্রামের আব্দুস সামাদ প্রামানিক। অতঃপর তারা শ্রীপুর থেকে রওনা দিয়ে পথিমধ্যে বিলের পানিতে গোসল সেরে সন্ধ্যা ৬ঃ৩০ টায় ঘাটে এসে পৌঁছেন।
বিল গ-হস্তী বা গাজনার বিল পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার একটি বৃহৎ বিল। গাজনার বিল ১৬টি ছোটো-বড়ো বিলের সম্বন্বয়ে গঠিত। সুজানগর উপজেলার মাঝখানে অবস্থিত হওয়ায় উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের সাথেই সম্পৃক্ত। গাজনার বিলের পানির প্রধান উৎস পদ্মা, যমুনা এবং চলন বিল। দৈর্ঘ্য ৩১ বর্গকিলোমিটার এবং গড় গভীরত ১০-২০ ফিট। গাজনার বিলের ইতিহাস ঐতিহ্য যদি বলি, তাহলে দেখা যায় কোনও বিল সাধারণত তৈরি হয় কয়েকটি নদীর মরা খাত থেকে। গাজনার বিলও এর ব্যতিক্রম নয়। প্রাচীন আত্রাই, পদ্মা, বাদাই, বান্নাই, সেউলী নদীর মরা খাত থেকে এই বিলের উৎপত্তি বলা যেতে পারে। ১৯৭২ সালে তৎকালীন সরকার পাবনা জেলায় ফসল উৎপাদন ও জেলা বন্যামুক্ত করার লক্ষ্যে পদ্মা-যমুনার তীর ঘেঁষে ‘মুজিব বাঁধ’ তৈরি করেন। ফলে জেলা বন্যামুক্ত ও গাজনার বিলে ফসলের প্রাচুর্যতা দেখা দেয়। জেলার প্রায় অর্ধেক পেঁয়াজ এই বিলেই উৎপাদন হয় এবং স্বাদু পানির মাছ যোগানে এই বিলের ভূমিকা অনন্য। ২০১০ সালে এই বিলের সৌন্দর্য বাড়াতে ৪১৩ কোটি টাকা ব্যায়ে বহুমুখী প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এই প্রকল্পের আওতায় সারাবছর বিলে পানি ধরে রাখতে ছোট ছোট সংযোগ খাল তৈরি করা হয় এবং যোগাযোগ সুবিধা ও ফসলাদী ঘরে তোলার জন্য অনেকগুলো সাবমারসিবল রাস্তা তৈরি করা হয়। এছাড়া খয়রান ব্রিজ ও লোহার ব্রিজ তৈরি করা হয়। ফলে গাজনার বিলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে বহু পর্যটনের সমাগম ঘটে। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বিনোদন পিপাসুদের বেশি সমাগম ঘটে। বিকেল হলে খয়রান ব্রিজ এলাকায় উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যায়। এ কারণে এই এলাকায় নৌবহর, স্পীড বোর্ড, সাইন্ড বক্স ভাড়া পাওয়া যায়। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের অস্থায়ী খাবার দোকানের রমরমা ব্যবসাও লক্ষ্য করা গেল।