পিপ : পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্ষেত্রে চলছে হ য ব র ল অবস্থা। শিক্ষক কর্মকর্তাদের একাডেমিক উৎকর্ষতা ও গবেষনায় মন না বসলেও দু‘হাতে টাকা কামাইয়ে ব্যস্ত যে যার মত। যে যেভাবে পারছে অবাধে চলাচ্ছে লুটপাট। চলতি বছরে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার তহবিলের সমুদয় টাকা ভাগ বাটোয়ারা করে নেওয়া হয়েছে। অর্জিত টাকার ৪০ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয় তহবিলে জমা দেওয়ার ইউজিসির নীতিমালা থাকলেও তা মানা হয়নি।
সুত্র জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হাফিজা খাতুন, উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. এ এস এম মোস্তফা কামাল খান, কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর ড. কে এম সালাউদ্দিনসহ কয়েক ডিন মিলে পরস্পর যোগসাজশে বিধিবহির্ভুতভাবে এই গুচ্ছ পরীক্ষার সম্মানী নিয়েছেন প্রায় ৪০ লাখ টাকা! এ ছাড়া ভর্তি পরীক্ষা তহবিলের ইউজিসি নির্দেশিত চল্লিশ শতাংশ টাকা যার পরিমাণ প্রায় ৫০ লাখ টাকা বিশ্ববিদ্যালয় তহবিলে জমা করা হয়নি বলে সূত্র জানিয়েছে।
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ ও হিসাব শাখার একটি সূত্র জানায়, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষের চটঝঞ এঝঞ অফসরংংরড়হ ঋঁহফ তহবিল (হিসাব নং-০১০০২৩৪৩০১৪৯১ থেকে ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুটি চেকের (চেক নং-৭৬১৯৭৮৮; তারিখ : ১০/০৪/২০২৩ ইং এবং চেক নং- ৭৬১৯৭৯১; তারিখ : ১০/০৪/২০২৩ ইং) মাধ্যমে জনতা ব্যাংক, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নিজ নিজ ব্যাংক হিসাব নম্বরে উক্ত টাকা গ্রহণ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। উক্ত টাকা উপাচার্য অধ্যাপক ড. হাফিজা খাতুন কর্তৃক (তাঁর স্বাক্ষরিত) ব্যবস্থাপক জনতা ব্যাংক লিমিটেড, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখায় গত ১০/০৪/২০২৩ তারিখে ছাড় করা হয়। এতে উপাচার্য প্রফেসর ড. হাফিজা খাতুন ৮ লক্ষ ৫২ হাজার ৯৯৩ টাকা; উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. এস এম মোস্তফা কামাল খান ৬ লক্ষ ৮২ হাজার ৩৮২ টাকা; কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর ড. কে এম সালাহ উদ্দিন ৬ লক্ষ ৮২ হাজার ৩৮২ টাকা; বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. খায়রুল আলম ৩ লক্ষ ৬৩ হাজার ৪৯৭ টাকা; মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. হাবিবুল্লাহ্ ৩ লক্ষ ১০ হাজার ৮৮০ টাকা; জীব ও ভূবিজ্ঞান অনুষদের ডিন, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. রাহিদুল ইসলাম ২ লক্ষ ৫৩ হাজার ১৭৭ টাকা; ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিন ও ইলেকট্রনিক এন্ড ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রফেসর ড. দিলীপ কুমার সরকার ২ লক্ষ ২১ হাজার ৯৫ টাকা; বাণিজ্য অনুষদের সাবেক ডিন ও ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. কামরুজ্জামান ২ লক্ষ ৫৩ হাজার ৪৯৫ টাকা; এবং জীব ও ভূবিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডিন, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. নাজমুল ইসলাম গ্রহণ করেছেন ১ লক্ষ ৪৯ হাজার ৪৯১ টাকা। এতে ক্ষমতার অপব্যবহার করে তারা নিজেরা লাভবান হলেও সরকার ও পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া বিধিসম্মতভাবে ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষের প্রথমবর্ষ ভর্তিপরীক্ষার ৪০ শতাংশ প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা বিশ্ববিদ্যালয় তহবিলে জমা না করে ভাগ বাটোয়ারা করে নেওয়া হয়েছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়টি তথা সরকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে আনুমানিক পঞ্চাশ লক্ষ টাকা, যা অনিয়ম/দুর্নীতির পর্যায়ে পড়ে। ভর্তিপরীক্ষার সমন্বয়ক অধ্যাপক খায়রুল আলম এর বাইরেও টিএ/ডিএর নামে কয়েক লক্ষ টাকা গ্রহণ করেছেন বলে জানা গেছে।
সরকার যখন সাশ্রয়ী নীতি অবলম্বন করেছে সেখানে একটি ভর্তিপরীক্ষা থেকে পরস্পর যোগসাজশে এত টাকা সম্মানী গ্রহণের বিষয় জানতে চাইলে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হাফিজা খাতুন বার্তা সংস্থা পিপ‘কে বলেন, ‘আমি ঢাকা যাচ্ছি ফিরে এসে কথা বলবো। তবে তিনি গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার টাকা সবার গ্রহণ করার কথা স্বীকার করলেও কত টাকা ভাগ বাটোয়ারা হয়েছে তা বলতে অস্বীকৃতি জানান। ঢাকা থেকে ফিরে বুধবার সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানান।
ভর্তিপরীক্ষার কমিটির প্রধান সন্বয়ক ও বিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. খায়রুল আলম টাকা গ্রহণের সত্যতা স্বীকার করে বার্তা সংস্থা পিপ‘কে বলেন, ‘এটি কোন অবৈধ টাকা নয়। যারা যারা কাজ করেছে তারা এটা পেয়েছে।
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যাক্ষ প্রফেসর ড. এ কে এম সালাহউদ্দিন সম্মানী গ্রহণের সত্যতা স্বীকার বার্তা সংস্থা পিপ‘কে বলেন, ‘এটা চিরাচরিত নিয়ম। এটা পারিশ্রমিক। এ টাকা গ্রহণ দোষের কিছু না। তবে ভর্তি পরীক্ষার শতকরা চল্লিশ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলে জমা দেওয়া হয়েছে কি না প্রশ্ন করলে ট্রেজারার একেএম সালাহ উদ্দিন বলেন, গুচ্ছ পরীক্ষ পদ্ধতি চালু হওয়ার পর সেটি উঠে গেছে। মোট কত টাকা অর্জিত হয়েছে তা জানাতেও তিনি অস্বীকৃতি জানান।
সুত্র জানায়, অডিট বিভাগ বিভিন্ন প্রকল্প ও একাডেমিক খাতে নানা অনিয়মের কারণে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এক‘শ কোটি টাকার অডিট আপত্তি দিয়েছে। প্রকল্পে নয় ছয় করে এই অনিয়ম ও নয়-ছয় করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া লিফট কেনার জন্য তুরস্ক সফরে যাওয়ার কথা চারিদিকে চাউর হলে মহামান্য রাষ্ট্রপতির নির্দেশে সে যাত্রা বাতিল হয়। এত কিছুও পরেও থেমে নেই নানা অপকর্ম।
পাবনা নাগরিক সমাজের সভাপতি আব্দুল মতীন খান বার্তা সংস্থা পিপ‘কে বলেন, ভর্তি পরীক্ষার জন্য অর্জিত টাকা ভাগ বাটোয়ারা অনৈতিক এবং এর তদন্ত হওয়া উচিৎ।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সমন্বিত পাবনা জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক খায়রুল হক বার্তা সংস্থা পিপ‘কে বলেন, গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার টাকা সকল খরচ ও সম্মানী প্রদান শেষে বিশ্ববিদ্যালয় ফান্ডে জমা হওয়া উচিত। এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে বিষয়টি দুদক খতিয়ে দেখবে। কোন দুর্নীতি পাওয়া গেলে পরবর্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।