মুক্তচেতনা ডেস্ক : পাবনার চাটমোহরে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)’র উদ্যোগে ‘অপরিকল্পিত স্লুইসগেট ও দখল-দূষণের কারণে প্রাণহীন বড়াল নদী রক্ষায় করণীয়’ শীর্ষক এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বৃহস্পতিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) ১১টায় চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সভাকক্ষে প্রবীণ শিক্ষক শাহজাহান আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছা. মমতাজ মহল। তিনি বলেন “বড়ালপাড়ে কাজ করতে এসে আমি খুশি। কিন্তু বড়াল নদীর দখল-দূষণের কথা শুনে আমি ব্যথিত। আইন দিয়ে, প্রকল্প দিয়ে সবকিছু রক্ষা করা সম্ভব নয়। পরিবেশ নিয়ে আমরাও শঙ্কিত। আগামী প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য পরিবেশ তৈরি করে রেখে যাওয়া আমাদের সকলের দায়িত্ব। আমাদের দেশ প্রেমিক হতে হবে। আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রাখতে হবে। সকলের দায়বদ্ধতা ও দায়িত্বশীলতা বৃদ্ধি করতে হবে। বড়াল নদী জাতীয় সম্পদ, এ নদী রক্ষায় আপনাদের সোচ্চার হতে হবে। জাতীয় সম্পদ রক্ষায় সকলকে সচেতন হতে হবে।”
মূখ্য আলোচক হিসাবে বক্তব্য রাখেন ‘বড়াল রক্ষা আন্দোল’ এর সদস্য সচিব এস এম মিজানুর রহমান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চাটমোহর উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান প্রভাষক ফিরোজা পারভীন, উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. মেহেদী জাহান, উপজেলা মৎস্য সম্প্রসারণ কর্মকর্তা প্রসেনজিৎ চন্দ্র রায়।
আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)’র রাজশাহী কার্যালয়ের সমন্বয়কারী তন্ময় কুমার স্যানাল। তিনি বলেন ‘বড়াল পদ্মার প্রধান শাখা নদী। রাজশাহীর চারঘাট থেকে উৎপন্ন হয়ে বড়াল নাটোর, পাবনা ও সিরাজগঞ্জের দশটি উপজেলা এবং চলনবিলের মধ্যে দিয়ে প্রায় ২২০কিলোমিটার প্রবাহিত হয়েছে। দেশের অন্যতম বিল চলনবিলের পানির প্রধান আধার হলো বড়াল নদী। বড়াল নদীর সাথে এর অববাহিকার প্রায় ৫০ লক্ষ মানুষের জীবন-জীবিকা জড়িয়ে আছে। বড়াল চলনবিল এলাকার মানুষের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি নদী। তাই এ নদীর ওপর স্থাপিত অপরিকল্পিত স্লুইসগেট, ছোট ছোট ব্রিজ-কালভার্ট অপসারণ করে এর প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে। একই সাথে দখল ও দূষণকারীদের চিহ্নিত করে তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে।’
মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন চাটমোহর প্রেসক্লাবের আহবায়ক রকিবুর রহমান টুকুন, সহকারি অধ্যাপক আগমনী চক্রবর্তী, দৈনিক আমাদের বড়ালের সম্পাদক হেলালুর রহমান জুয়েল, সাপ্তাহিক চাটমোহর বার্তার সম্পাদক এস এম হাবিবুর রহমান, সাপ্তাহিক সময় অসময় পত্রিকার সম্পাদক কেএম বেলাল হোসেন স্বপন, দৈনিক যুগান্তরের চাটমোহর উপজেলা প্রতিনিধি পবিত্র কুমার তালুকদার, সমাজ সেবক মধুমালা ভট্টাচার্য, ইউপি সদস্য মোছা. শাহানা বেগম ও মোছা. বীথি খাতুন প্রমুখ।
আলোচকরা বলেন, দখল ও দূষণের কারণে বড়াল নদী আজ ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। অথচ বেলা’র দায়ের করা মামলায় বড়াল রক্ষায় উচ্চ আদালতের রায় রয়েছে। উচ্চ আদালতের রায় মোতাবেক সিএস রেকর্ড অনুযায়ী সীমানা চিহ্নিত করে বড়ালকে দখল-দূষণ মুক্ত করতে হবে। বড়াল নদীতে অপরিকল্পিত উন্নয়ন বন্ধ করা প্রয়োজন। এছাড়াও যারা নদী দখল করেছে এবং পোল্ট্রি, ডেইরি খামারের বর্জ্য এবং অন্যান্য শিল্পবর্জ্য ফেলে যারা বড়াল নদীকে দূষিত করছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আলোচকরা প্রশাসনের প্রতি আহবান জানান। বড়াল নদীকে বিআইডাব্লিউটিএ’র তালিকাভূক্ত করার জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
এছাড়াও আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন জনপ্রতিনিধি, উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের সরকারি কর্মকর্তা, কৃষক, মৎস্যজীবী, চাটমোহর যুব সোসাইটি, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, এনজিও প্রতিনিধি এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।