পাবনা’র ভাঙ্গুড়ায় পুত্রবধুকে ধর্ষণের ঘটনা ১ লক্ষ ৭০ হাজার টাকায় দফারফা

শেয়ার করুন

ভাঙ্গুড়া (পাবনা) প্রতিনিধি : পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার মন্ডতোষ গ্রামের আবুল কালাম (৫২) নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে নিজ পুত্রবধুকে(১৯)কে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। গ্রাম্য শালিসে অভিযুক্ত কালামকে ১ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা জরিমনা করে ঘটনার দফারফা করেছেন ১নং ভাঙ্গুড়া ইউপি চেয়ারম্যানসহ গ্রাম প্রধানরা। মন্ডতোষ গ্রামের প্রভাবশালী দলিল লেখক শের মাহমুদ ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি সুমন আহমেদ, সাবেক ইউপি সদস্য সামাদ আলী, ইদ্রিস সহ বেশ কয়েকজনের এই মিমাংসায় তাদের নাম এসেছে ।

ধর্ষণের শিকার গৃহবধু ও তার পরিবারের লোকজন জানান, প্রায় ৮ মাস আগে উপজেলার মন্ডতোষ ইউনিয়নের মন্ডতোষ গ্রামের আবুল কালামের ছেলে ফিরোজ আহমেদের সাথে তাদের পারিবারিকভাবে বিবাহ হয়। বিয়ের পরে ঐ নারী জানতে পারেন তার স্বামী ফিরোজের সাথে আগের স্ত্রীর যোগাযোগ রয়েছে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে বনিবনা হচ্ছিল না এবং বিয়ের পর তার স্বামী ফিরোজ কাজের জন্য ঢাকায় চলে যায়। এরপর থেকেই শ্বশুর তাকে বিভিন্ন ভাবে কু-প্রস্তাব দিয়ে আসছিলো। ঘটনার দিন রাত আনুমানিক ১২টার দিকে তার শ্বশুর তার গৃহবধূকে ডাকাডাকির পর দরজা খুলে দিলে তার শ্বশুর কালাম ঘরে ডুকে ভেতর থেকে দরজা লাগিয়ে দিয়ে তার মুখ চেপে ধরে তাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। ধর্ষণ শেষে কালাম বাইরে আসলে ঐ নারী কান্না করতে থাকে। পরে তার শ্বাশুড়ী ফিরোজা বেগম স্বামীর পক্ষ থেকে তার পায়ে ধরে ক্ষমা চায় ও এই ঘটনা কাউকে জানাতে নিষেধ করে। এ সময় কালাম পুনরায় ঘরে এসে ঘটনা কাউকে জানালে তাকে প্রাণে মেরে ফেলবে বলে হুমকি দেয়।

বেশ কয়েক দিন পর ঐ গৃহ বধূ তার নানার বাড়িতে যায় এবং তাদের কাছে ঘটনাটি ঘুলে বলেন। কৌশলে তার নানার বাড়ির লোকজন গৃহবধূর শ্বশুর কালাম ও তার স্ত্রী ফিরোজাকে ডেকে আনেন। এরপর ঐ নারীর পরিবারের লোকেরা তাদেরকে আটকে রেখে তার ছেলের বউয়ের সাথে ঘটা ঘটনা জানতে চায়। অবস্থা বেগোতিক দেখে ফিরোজা তার ভাই সাবেদুল ইসলামকে মুঠোফোনে জানিয়ে বিষয়টি জানিয়ে তাদের উদ্ধার করতে বলে। সাবেদুল তখন মন্ডতোষ গ্রামের প্রভাবশালী শের-মাহমুদ, বক্কার, সাবেক ইউপি সদস্য সামাদ ও ইদ্রিস সহ বেশ কিছু লোকজন নিয়ে ঐ বাড়িতে উপস্থিত হয়। সেখানে একটি শালিস বৈঠকে কালামকে ২লক্ষ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ধার্য্য করে শের মাহমুদ। বিষয়টি জানতে পরে ভাঙ্গুড়া সদর ইউপি চেয়ারম্যান সেখানে উপস্থিত হয়ে ধর্ষণের শিকার ঐ গৃহবধুর কাছ থেকে ঘটনা শুনে মন্ডতোষ গ্রামের প্রধানদের কালামকে শালিসে হাজির করতে চাপ দিলে অভিযুক্ত কালাম সেখানে উপস্থিত হয়। ঘটনা শুনে শালিসে থাকা গ্রামবাসী উত্তেজিত হয়ে উঠলে সুযোগ বুঝে কালাম সেখান থেকে পালিয়ে যায়। পরে প্রভাবশালী শের মাহমুদ চেয়ারম্যান টুকুনের কাছে জরিমানা টাকা দেয়ার প্রতিশ্রæতি দিয়ে শালিস শেষ করে চলে যায়।

বিষয়ে জানতে চাইলে ভাঙ্গুড়া সদর ইউনিয়নের চেয়রম্যান গোলাম ফারুক টুকুন বলেন, আমি শালিসে উপস্থিত হয়ে ঐ গৃহবধুর পরিবারকে আইনি সহায়তা নেয়ার পরামর্শ দেই। কিন্ত তারা দুই পক্ষই শালিস চাইলে তা শেষ করা হয়। ঐ ঘটনা শেষ করে দেয়া হয়েছে।

অভিযুক্ত কালাম জানায়, প্রথমে শালিসে ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে আমার সামর্থ না থাকায় উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি সুমনের কাছে জানাই সে নেতাদের সাথে কথা বলে জরিমানা কমিয়ে ১ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা করেছে যার মধ্যে ১০ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা সুমনের কাছে দিয়েছি। বাকি ৩০ হাজার টাকা পরে দিবো।

ঘটনার বিষয়ে ভাঙ্গুড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফয়সাল বিন আহসান বলেন, এ বিষয়ে থানা পুলিশের কাছে কোন অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *